চীন সফরে এসে উত্তর কোরিয়া সংকটের সমাধানসূত্রের আশা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ চীন অবশ্য সরাসরি সংলাপের প্রস্তাব দিচ্ছে৷ সপ্তাহান্তে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায়ও বিষয়টি প্রাধান্য পাবে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে ‘কিছু একটা হতে চলেছে'৷ সে দেশের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচিতে রাশ টানতে তিনি চীনের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে আসছেন৷ তাঁর মতে, চীন ‘দ্রুত ও সহজে' এই সমস্যার সমাধান করতে পারে৷ তাঁর মতে, হাতে সময় বড় কম৷ তিনি বেইজিং-এর উদ্দেশ্যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন৷
চীন অবশ্য এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার অঙ্গীকার করে এসেছে৷ তার বাইরে কোনো একক উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না৷ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বর্তমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে একাধিকবার অ্যামেরিকা ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সরাসরি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন৷ উত্তর কোরিয়ার প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রাখতে চান তিনি৷
চীনের নেতৃত্ব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি অভূতপূর্ব উষ্ণতা দেখাচ্ছে৷ গ্রেট হল অফ দ্য পিপল-এ তাঁর জন্য এক স্বাগতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সেটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যেমনটা এর আগে কোনো বিদেশি অতিথির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি৷ ট্রাম্প-ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-কে ‘ভেরি স্পেশাল ম্যান' হিসেবে প্রশংসা করেছেন৷ এমনকি চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির জন্য তিনি নিজের পূর্বসূরিদের দায়ী করেছেন৷ প্রেসিডেন্ট শি-র সঙ্গে তিনি এই ঘাটতি কাটিয়ে ন্যায্য ভারসাম্য আনার অঙ্গীকার করেছেন৷ তাঁর মতে, এর ফলে দু'পক্ষেরই উপকার হবে৷
ব্যক্তিগত উষ্ণতা সত্ত্বেও দুই নেতার বর্তমান অবস্থান একেবারে ভিন্ন৷ চীনের প্রেসিডেন্ট সদ্য সমাপ্ত কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসে নিজের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করেছেন৷ অন্যদিকে নির্বাচনের এক বছর পর ট্রাম্প রাশিয়া কেলেঙ্কারিসহ একাধিক কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন৷ তাঁর প্রতি জনসমর্থনও তলানিতে ঠেকেছে৷
উত্তর কোরিয়াকে একঘরে করতে রাশিয়ারও সহযোগিতা চাইছেন ট্রাম্প৷ সপ্তাহান্তে ভিয়েতনামে অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ রাশিয়া তার প্রভাব খাটিয়ে উত্তর কোরিয়াকে বশে আনতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করেন ট্রাম্প৷
যেসব দেশের কারণে টিকে আছে উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও এমন কয়েকটি দেশ আছে যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পণ্য বা অস্ত্র আমদানি করে৷ চলুন দেখে নিই কোন দেশগুলো আছে এই তালিকায়৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
অ্যাঙ্গোলা
আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তারক্ষীদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেয় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
চীন
চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ৷ চীনের শিল্পকারখানায় উত্তর কোরিয়ার অনেক নাগরিক কাজ করে৷ চীনে উত্তর কোরিয়ান অনেক রেস্তোরাঁও রয়েছে, যেখান থেকে উত্তর কোরিয়া বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
কঙ্গো
কঙ্গোর সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পিস্তল এবং অন্য ছোট অস্ত্র আমদানি করে, যা মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল দেহরক্ষী এবং পুলিশ ব্যবহার করে৷
ছবি: Reuters/R. Carrubba
মিশর
অভিযোগ রয়েছে, উত্তর কোরিয়া মিশরকে ক্ষেপণাস্ত্রের উপকরণ পাঠিয়েছে৷ এ অভিযোগ সত্য কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Reuters/Amr Abdallah Dalsh
ইরিত্রিয়া
ইরিত্রিয়া আফ্রিকার ছোট একটি দেশ৷ এই দেশটিরও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ জানা গেছে, তারা উত্তর কোরিয়া থেকে সামরিক উপকরণ কিনে থাকে৷
ছবি: DW
কুয়েত
উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কুয়েতে নির্মাণ কাজে যুক্ত আছে৷ কুয়েতে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসও আছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোজাম্বিক
উত্তর কোরিয়া মোজাম্বিককে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করছে৷ এছাড়া ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণেও সহায়তা দিচ্ছে দেশটিকে৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFP/Getty Images
নামিবিয়া
দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে সমরাস্ত্র উপকরণ তৈরি করার একটি কারখানা স্থাপনের জন্য উপকরণ এবং কর্মী পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: DW/B. Osterath
নাইজেরিয়া
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক চিকিৎসক যান৷ ২০১৩ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় উত্তর কোরিয়ার তিন চিকিৎসক নিহত হয়েছিলেন সেখানে৷
ছবি: picture alliance /AP Photo/L. Oyekanmi
ওমান
ওমানে নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে কাজ করার জন্য উত্তর কোরিয়া তাদের শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে৷
ছবি: SR
কাতার
কাতারেও নির্মাণ প্রকল্পে উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কাজ করে৷ ২০২২ সালে দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷ এজন্য সেখানে স্টেডিয়ামসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zumapress
সুদান
উত্তর কোরিয়া সুদানে যেসব সামরিক উপকরণ পাঠায়, তার মধ্যে রকেট কন্ট্রোল সেকশন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shazly
সিরিয়া
দীর্ঘ সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলা দেশটিও উত্তর কোরিয়ার উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম৷ জানা গেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক সমরাস্ত্র এবং উপকরণ কিনে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Service of the President
উগান্ডা
আফ্রিকার দেশ উগান্ডারও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ উত্তর কোরিয়ার সেনারা উগান্ডায় বিমানবাহিনীর পাইলট এবং টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন৷
ছবি: AP
সংযুক্ত আরব আমিরাত
ইউএই-তে উত্তর কোরিয়ার অনেক রেস্তোরাঁ এবং নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে, যেখানে কাজ করার জন্য সবসময়ই উত্তর কোরিয়া থেকে কর্মী পাঠানো হয়৷ এছাড়া উত্তর কোরিয়া থেকে স্কুড মিসাইল কিনে থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷