কম্পিউটার অনেকের কাছেই জটিল বিষয়৷ আর প্রোগ্রামিং তো ভয়ংকর জটিল হতে বাধ্য৷ কিন্তু এবার কিন্ডারগার্টেনের ৫ বছরের শিশুও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করতে পারবে – একটি অ্যাপ তাদের সে কাজে সাহায্য করবে৷
বিজ্ঞাপন
এখনো অক্ষরজ্ঞান হয় নি, অথচ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করছে এক শিশু৷ এমন ঘটনা আর বিস্ময়ের কারণ থাকবে না, যদি ‘স্ক্র্যাচজুনিয়র' নামের একটি অ্যাপ হাতে এসে যায়৷ এই প্রোগ্রামিং অ্যাপ কোনো জটিল কোডিং পদ্ধতি ও অঙ্কের ধার ধারে না – এটি কাজে লাগিয়ে খেলাচ্ছলেই ছবির টুকরো নিয়ে নাড়াচাড়া করে ইন্টারঅ্যাকটিভ গল্প ও গেমস তৈরি করা যায়৷ এই সব মালমশলা দিয়ে শিশুরা গল্পের চরিত্র সৃষ্টি করতে পারবে৷ সেগুলি লাফালাফি করতে পারবে, কথা বলতে পারবে৷ তাদের আকারও বদলানো যাবে৷ গ্রাফিক এলিমেন্ট পছন্দ না হলে ‘পেন্ট এডিটর'-এর সাহায্যে তা বদলানো যাবে৷ ইচ্ছা হলে নিজেদের কণ্ঠ ও শব্দও ঢোকানো যাবে৷ এমনকি নিজেদের ছবিও সেই গল্পে শামিল করা যাবে৷
গেম শুধু খেলবেই না, বানাবেও
বাংলাদেশের অনেক কিশোর-কিশোরী কম্পিউটার গেম খেলতে পছন্দ করে৷ তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গেম ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তুলতে ‘উই মেক গেমস’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু হয়েছে৷
ছবি: MassiveStar Studio
‘উই মেক গেমস’
স্কুলের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার গেম তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার কর্মসূচি ‘উই মেক গেমস’৷ এর আওতায় সারা দেশের ৪০০ স্কুলের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা করছে গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাসিভস্টার স্টুডিও লিমিটেড৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: MassiveStar Studio
সরকার সঙ্গে থাকবে
বিশাল এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয় সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন ম্যাসিভস্টার স্টুডিও-র প্রধান নির্বাহী মাহবুবুল আলম৷
ছবি: MassiveStar Studio
লক্ষ্য বাজার ধরা
মাহবুবুল আলমের মতে, সারা বিশ্বে কম্পিউটার গেমের ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি বাজার আছে৷ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে তৈরি হওয়া গেম ডেভেলপাররা এই বাজারের একটি অংশ বাংলাদেশে নিয়ে আসবে বলে আশা তাঁর৷
ছবি: Getty Images
নভেম্বরে শুরু হয়েছে
‘উই মেক গেমস’ কর্মসূচিটি শুরু হয়েছে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে৷ ইতিমধ্যে ঢাকার ১১টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের গেম তৈরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বা হয়েছে৷
ছবি: MassiveStar Studio
প্রতিভাবান কিশোর-কিশোরী
মাহবুবুল আলম মনে করেন, বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী কম্পিউটারে গেম খেলে তাদের একটা বড় অংশ গেম ডেভেলপ করারও ক্ষমতা রাখে৷ সেসব শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে গেম ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব৷
ছবি: WCG
‘হাতিরঝিল ড্রিম বিগিনস’
উই মেক গেমস কর্মসূচির বাস্তবায়নকারী সংস্থা ম্যাসিভস্টার স্টুডিও লিমিটেড ‘হাতিরঝিল ড্রিম বিগিনস’ নামে একটি কম্পিউটার গেম বাজারে নিয়ে এসেছে৷ এই গেম তৈরির সঙ্গে মাশরুর মাহমুদ নামে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরও রয়েছে৷
ছবি: MassiveStar Studio
পেছনের কারিগর
প্রায় ২১ জন তরুণ ছয় মাস কাজ করে গেমটি ডেভেলপ করে৷ এঁদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট মাশরুর মাহমুদ৷ সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে৷
ছবি: MassiveStar Studio
নির্মাণ কৌশল
থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স, গুগল স্কেচআপ প্রো, ব্লেন্ডার ও মায়া সফটওয়্যার ব্যবহার করে গেমটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ গেমটিতে মোট লেভেল আছে ৩১টি৷ একটি লেভেল শেষ করে পরেরটিতে যেতে হবে৷ প্রতিটি লেভেলের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: MassiveStar Studio
ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ
খেলার পাশাপাশি চাইলে বিআরটিসির বাস বা গাড়িতে করে হাতিরঝিলে ঘুরে বেড়ানো যাবে৷ স্পিডবোট আর বিমান নিয়েও গেম খেলা যাবে৷
ছবি: MassiveStar Studio
স্মার্টফোনেও
কম্পিউটারের পাশাপাশি স্মার্টফোনেও যেন গেমটি খেলা যায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ আগামী ঈদের আগেই অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা যেন গেমটি খেলতে পারেন সে চেষ্টা করা হচ্ছে৷
ছবি: MassiveStar Studio
কোথায় পাবেন?
বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রায় ১৬০টি সিডির দোকানে এই গেমটি পাওয়া যাচ্ছে৷ তবে মাস খানেকের মধ্যেই সেটা সারা দেশে পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে৷
ছবি: MassiveStar Studio
11 ছবি1 | 11
ম্যাসেচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা এমআইটি-র বিজ্ঞানীরা এমন সহজ পথে প্রোগ্রামিং সম্ভব করতে চান৷ তাঁদেরই একজন মিশেল রেসনিক৷ তাঁর মতে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং মানেই জটিল, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই৷ তাঁর সহকর্মী টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিনা উমাশি বলেন, শিশুরা ক্লাস ফোর থেকেই অঙ্ক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান স্থির করে৷ অর্থাৎ তারা এ সব বিষয়ে ভালো না খারাপ, সেই ধারণা বদ্ধমূল হতে শুরু করে৷ ফলে এই পর্যায়ে তাদের কম্পিউটার কোডিং-এর কোনো প্রোগ্রাম দিলে অনেক দেরি হয়ে যায়৷ কাঁচা মনেই দাগ কাটা অনেক জরুরি৷ তবে সব শিশুকেই প্রোগ্রামার হতে হবে না৷ কিন্তু এমন অ্যাপ নিয়ে নাড়াচাড়া করলে তাদের চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়ার মধ্যে যুক্তির ছাপ বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন৷
শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও যুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অ্যামেরিকার জাতীয় বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন এই প্রকল্পে ১৩ লক্ষ ডলার অনুদান দিয়েছে৷ বিনামূল্যের এই অ্যাপ পরীক্ষামূলকভাবে একটি স্কুলে ব্যবহারও করা হচ্ছে৷ গত জুলাই মাসে আইপ্যাড প্ল্যাটফর্মে এটি চালু করা হয়েছে৷ সেখানে ৭ বছরের দুটি শিশু এই অ্যাপ ব্যবহার করে খুব খুশি৷ সংবাদ সংস্থা এপি-কে তারা হাতেনাতে তাদের গল্প তৈরির কায়দা দেখিয়েছে৷