চীনের প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ায় বিরল সফর শুরু করেছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগে এই সফর কোরীয় উপদ্বীপে শান্তির সম্ভাবনাকে আবার উজ্জ্বল করে তুলছে৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন সাম্প্রতিক কালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যথেষ্ট সমীহ আদায় করতে পেরেছেন৷ বেশ কয়েকবার চীন সফরের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একাধিক সাক্ষাতের ঘটনা কোরীয় উপদ্বীপে শান্তির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ তাছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে দু-দুবার বৈঠক করায় তাঁর গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ও কিম জন উন রাশিয়ায় মিলিত হয়েছেন৷ বিদেশের মাটিতে এই সব কূটনৈতিক সাফল্য সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া এখনো কার্যত একঘরে রয়ে গেছে৷ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ ১৪ বছর পর খোদ পিয়ং ইয়ং শহরে চীনের প্রেসিডেন্টের সফর সে দেশের মানুষকে কিছুটা আশার আলো দেখাতে পারে, এমনটাই চেয়েছিলেন কিম জং উন৷
বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাষ্ট্রীয় সফরে প্রথম বার উত্তর কোরিয়ায় পা রাখলেন৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ এক বড় প্রতিনিধিদলও তাঁর সঙ্গে এসেছে৷ উত্তর কোরিয়ার নেতার আমন্ত্রণে তিনি দুই দিন সে দেশে থাকবেন৷ রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে উত্তর কোরিয়া চীনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল৷ কিন্তু কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির অভাবে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এখনো তুলে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে চীনও সে দেশকে পুরোপুরি সাহায্য করতে পারছে না৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভিয়েতনামে ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় অচলবস্থা কাটছে না৷ এই অবস্থায় শি জিনপিং তাঁর সফরের মাধ্যমে কিছুটা অগ্রগতির চেষ্টা করছেন৷ আগামী ২৮শে জুন জাপানে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ বৈঠকে তিনি ডনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন৷ পর পর কিম ও ট্রাম্প-এর সঙ্গে আলোচনার সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চান তিনি৷
ফেব্রুয়ারি মাসে বৈঠক ব্যর্থ হবার পর ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখান নি৷ তবে কিম জং উন সম্পর্কে তাঁর সম্পর্কের উষ্ণতা অটুট রয়েছে৷ গত সপ্তাহে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতার কাছ থেকে ‘সুন্দর' ও ‘উষ্ণতা ভরা' একটি চিঠি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন৷ ট্রাম্প কিম জং উন-এর সঙ্গে তৃতীয় শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন নি৷ বর্তমান জটিলতা কাটাতে ইতিবাচক কিছু ঘটতে চলেছে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ চীনের প্রেসিডেন্ট সরাসরি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সেই সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন কিনা, সেই বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়৷
চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্য যুদ্ধও এই রসায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷ ট্রাম্প ও শি-র মধ্যে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কও এই সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে নি৷ উত্তর কোরিয়ার উপর নিজস্ব প্রভাবের মাত্রা তুলে ধরে বেইজিং ওয়াশিংটনকে সে দেশের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ সম্পর্কে সতর্ক করে দিতে পারে৷
যেসব দেশের কারণে টিকে আছে উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও এমন কয়েকটি দেশ আছে যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পণ্য বা অস্ত্র আমদানি করে৷ চলুন দেখে নিই কোন দেশগুলো আছে এই তালিকায়৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
অ্যাঙ্গোলা
আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তারক্ষীদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেয় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
চীন
চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ৷ চীনের শিল্পকারখানায় উত্তর কোরিয়ার অনেক নাগরিক কাজ করে৷ চীনে উত্তর কোরিয়ান অনেক রেস্তোরাঁও রয়েছে, যেখান থেকে উত্তর কোরিয়া বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
কঙ্গো
কঙ্গোর সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পিস্তল এবং অন্য ছোট অস্ত্র আমদানি করে, যা মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল দেহরক্ষী এবং পুলিশ ব্যবহার করে৷
ছবি: Reuters/R. Carrubba
মিশর
অভিযোগ রয়েছে, উত্তর কোরিয়া মিশরকে ক্ষেপণাস্ত্রের উপকরণ পাঠিয়েছে৷ এ অভিযোগ সত্য কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Reuters/Amr Abdallah Dalsh
ইরিত্রিয়া
ইরিত্রিয়া আফ্রিকার ছোট একটি দেশ৷ এই দেশটিরও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ জানা গেছে, তারা উত্তর কোরিয়া থেকে সামরিক উপকরণ কিনে থাকে৷
ছবি: DW
কুয়েত
উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কুয়েতে নির্মাণ কাজে যুক্ত আছে৷ কুয়েতে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসও আছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোজাম্বিক
উত্তর কোরিয়া মোজাম্বিককে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করছে৷ এছাড়া ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণেও সহায়তা দিচ্ছে দেশটিকে৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFP/Getty Images
নামিবিয়া
দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে সমরাস্ত্র উপকরণ তৈরি করার একটি কারখানা স্থাপনের জন্য উপকরণ এবং কর্মী পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: DW/B. Osterath
নাইজেরিয়া
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক চিকিৎসক যান৷ ২০১৩ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় উত্তর কোরিয়ার তিন চিকিৎসক নিহত হয়েছিলেন সেখানে৷
ছবি: picture alliance /AP Photo/L. Oyekanmi
ওমান
ওমানে নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে কাজ করার জন্য উত্তর কোরিয়া তাদের শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে৷
ছবি: SR
কাতার
কাতারেও নির্মাণ প্রকল্পে উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কাজ করে৷ ২০২২ সালে দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷ এজন্য সেখানে স্টেডিয়ামসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zumapress
সুদান
উত্তর কোরিয়া সুদানে যেসব সামরিক উপকরণ পাঠায়, তার মধ্যে রকেট কন্ট্রোল সেকশন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shazly
সিরিয়া
দীর্ঘ সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলা দেশটিও উত্তর কোরিয়ার উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম৷ জানা গেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক সমরাস্ত্র এবং উপকরণ কিনে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Service of the President
উগান্ডা
আফ্রিকার দেশ উগান্ডারও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ উত্তর কোরিয়ার সেনারা উগান্ডায় বিমানবাহিনীর পাইলট এবং টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন৷
ছবি: AP
সংযুক্ত আরব আমিরাত
ইউএই-তে উত্তর কোরিয়ার অনেক রেস্তোরাঁ এবং নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে, যেখানে কাজ করার জন্য সবসময়ই উত্তর কোরিয়া থেকে কর্মী পাঠানো হয়৷ এছাড়া উত্তর কোরিয়া থেকে স্কুড মিসাইল কিনে থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷