উত্তর কোরিয়া প্রতিশ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্রের সুড়ঙ্গ ধ্বংস শুরু করলেও অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনের জুনের সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকটি বাতিল করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়া তাদের পুঙ্গি-রি পারমাণবিক কেন্দ্রের তিনটি সুড়ঙ্গে বৃহস্পতিবার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে কেন্দ্রটি পরিদর্শনে যাওয়া বিদেশি সাংবাদিকরা জানিয়েছেন৷ তাঁরা জানান, পুঙ্গি-রি পারমাণবিক কেন্দ্রের পাহারাদার, সেনা ও কর্মীদের ব্যারাকের সামনেই সকালে ও বিকালে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী বিস্ফোরণের মাধ্যমে সুড়ঙ্গগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
তবে এর কিছুক্ষণ পরই অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনের সাথে জুনের সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকটি বাতিল করেন এক চিঠির মাধ্যমে৷
প্রসঙ্গত, এ পরীক্ষাকেন্দ্রেই ছয়টি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল উত্তর কোরিয়া৷ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানটাপ পর্বতের নীচে খোঁড়া কয়েকটি সুড়ঙ্গ নিয়েই এ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছিল৷
কয়েকযুগ ধরে চলছে দুই কোরিয়ার বিরোধ৷ ২৭ এপ্রিল সীমান্তে দাঁড়িয়ে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট করমর্দন করলেন৷ তৈরি হলো ইতিহাস৷ এরকম করমদর্দনের বেশকিছু নজির রয়েছে অতীতে৷ দেখে আসা যাক ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তগুলো...
ছবি: Reuters
ফিলিস্তিনের শান্তি
নরওয়ের অসলোতে কয়েকমাস গোপন আলোচনার পর ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গ্যানাইজেশন (পিএলও)-র প্রধান ইয়াসির আরাফাত নিজেদের মধ্যে শান্তি স্থাপনে একমত হন৷ ছবিটি ১৯৯৩ সালে সেপ্টেম্বরের ১৩ দারিখে তোলা৷ হোয়াইট হাউজের দক্ষিণ লনে দুই নেতা দাঁড়িয়ে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media
কিউবা-অ্যামেরিকার করমর্দন
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দেশ কিউবা আর অ্যামেরিকা৷ ২০১৩ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণ অনুষ্ঠানে অ্যামেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো হাত মেলান৷ পরে ২০১৬ সালে ওবামা ৮৮ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিউবা সফর করেন৷
ছবি: Getty Images
আয়ারল্যান্ডে রক্তক্ষয়ের অবসান
ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সাথে আয়ারল্যান্ডের সাবেক সশস্ত্র বিদ্রোহী দল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির প্রধান কমান্ডার ম্যাকগিনিসের করমর্দনও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা৷ ২০১২ সালে রানি যখন উত্তর আয়ারল্যান্ড সফরে যান, তখন ম্যাকগিনিস তাঁর সাথে করমর্দন করেন৷
ছবি: dapd
চীন-তাইওয়ান মিলন!
১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধের পর দীর্ঘদিন চীন ও তাইওয়ানের সম্পর্ক দা-কুমড়া ছিল৷ ২০১৫ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তাইওয়ানের মা ইং জেও সিঙ্গারের এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন৷ সেখানে তাঁরা কয়েক মিনিট ধরে কথা বলেন এবং করমর্দন করেন৷
ছবি: Reuters/E. Su
দুই কোরিয়ার মিলন
দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎ অতি সাধারণ ঘটনা৷ কিন্তু শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন যখন সীমান্তে মিলিত হয়ে সহাস্যে করমর্দন করলেন, তা অবশ্যই এক ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ কারণ, প্রায় ৬৫ বছর আগে কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ শেষ হবার পর থেকে উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতা দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রাখেননি৷
ছবি: Reuters/Korea Summit Press Pool
5 ছবি1 | 5
পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস শুরুর কিছুক্ষণ পরেই অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, দুই দেশের বৈঠক নিয়ে কিম জং-উনের সাম্প্রতিক বিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে তিনি জুনের বৈঠকটি করবেন না৷
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের এক চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, “সেখানে আপনার সঙ্গে মিলিত হতে আমি খুব উদগ্রীব ছিলাম। তবে দুঃখজনক, আপনার সাম্প্রতিক বিবৃতিতে তীব্র ক্ষোভ ও প্রকাশ্য শত্রুতা প্রকাশিত হওয়ায় আমি মনে করছি, এই সময়ে দীর্ঘ পরিকল্পিত এই বৈঠক সঠিক হবে না।”
এদিকে একদল রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, উত্তর কোরিয়ার এ সুড়ঙ্গ ধ্বংসের ব্যাপারটি আসলে একটা কৌশল৷ কেননা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি যথেষ্ট এগিয়েছে এবং এখন আর পরীক্ষার প্রয়োজন নেই৷ কেউ কেউ আবার বলছেন, ২০১৭ সালেই ঐ কেন্দ্রটিতে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার সময় কিছু অংশ ধসে পড়ে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল৷
কেন্দ্রটি ধ্বংস করে ফেলা দেখতে নিরপেক্ষ কোনো অস্ত্র পরিদর্শক নয়, বরং বাছাই করা ২০ জনের মতো বিদেশি সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন৷
অবশ্য ১৯৯৪ সালেও একটি সমঝোতার আলোকে উত্তর কোরিয়া এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছিল৷ পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা সফলভাবে সেখানে পর্যবেক্ষণ কাজও চালায়৷ কিন্তু ২০০২ সালে সেই সমঝোতা ভেস্তে যাওয়ার পর, পিয়ংইয়ং কেন্দ্রটি আবারো চালুর ঘোষণা দেয় এবং ২০০৫ সালে আত্মরক্ষার জন্য পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন শুরু করে৷
এইচআই/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷