কিম জং উনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোটি ডলার বিনিয়োগ
১৮ জানুয়ারি ২০২৩
রেডিও ও ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম টুলস' ব্যবহার করে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের কাছে কিম জং উনের দমনমূলক শাসন সম্পর্কে সত্য তুলে ধরতে চায় ওয়াশিংটন। তাদেরকে "আরো বেশি প্রশ্ন করতে ‘উৎসাহিতও' করা হবে এর মাধ্যমে।
বিজ্ঞাপন
বহির্বিশ্বের তথ্য উত্তর কোরিয়ায় ছড়িয়ে দিতে এবং উত্তর কোরীয়দের কাছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার ভাবমূর্তি উন্নত করার আশায় যুক্তরাষ্ট্র আগামী পাঁচ বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার (৪৬ মিলিয়ন ইউরো) বিনিয়োগ করবে।
নাশকতার অভিযোগে মার্কিন ছাত্র অটো ওয়ার্মবিয়ারকে ২০১৬ সালে পিয়ংইয়ংয়ে আটক করা হয়। পরবর্তীতে, পোস্টার চুরির অভিযোগে তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০১৭ সালে মুক্তি দেয়া হলেও ২২ বছর বয়সি ওয়ার্মবিয়ার ছয় দিন পর হাসপাতালে মারা যান। তার নামেই এই বিল করা হয়েছে।
এই আইনের অধীনে, বিশ্বজুড়ে তথ্য সম্প্রচার এবং প্রচারের জন্য ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়াতে অর্থ প্রদান করা হবে।
"এমন উদ্যোগ আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এখন যা কাজ করতে বেশি ইচ্ছুক সেগুলো অন্য দেশগুলো কিছুদিন ধরেই করছে,” ডয়চে ভেলেকে এমনটাই জানিয়েছেন ট্রয় ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড্যান পিঙ্কস্টন।
বেশি বেশি প্রশ্ন করতে উৎসাহ
এই উদ্যোগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আশা, উত্তর কোরিয়ার মানুষ সরকারের দুঃশাসন নিয়ে বেশি প্রশ্ন উত্থাপন করতে সক্ষম হবে।
পিঙ্কস্টন বলেন, ওয়াশিংটন রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলছে, যা তার নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যকে এগিয়ে নেয়ার প্রচারণায় বিশেষভাবে কার্যকর।
মার্কিন এই উদ্যোগ উত্তর কোরিয়ায় অতিরিক্ত রেডিও প্রোগ্রামিংয়ের পাশাপাশি "ইন্টারনেট ফ্রিডম টুলস" বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করবে। ফলে, ব্যবহারকারীরা উত্তর কোরিয়ার সরকার কর্তৃক আরোপিত ডিজিটাল প্রতিবন্ধকতা এড়াতে সক্ষম হবে। এই সুবিধা বিনামূল্যে দেয়া হবে।
"রেডিও তুলনামূলকভাবে সহজ হওয়া উচিত তবে, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস চ্যালেঞ্জ হবে," মনে করেন পিঙ্কস্টন।
উত্তর কোরিয়ার নাগরিক ইউজিন কিম খাদ্য সংকটের কারণে উত্তর হামগয়ং প্রদেশ থেকে তার মা এবং বোনের সাথে পালিয়েছিলেন। এই উদ্যোগের ফলে উত্তর কোরিয়ায় আরও তথ্য সহজলভ্য হবে আর শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনা উৎসাহিত করবে, তবে সেটা বিপজ্জনক হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
বিশ্লেষক ও দেশত্যাগীরা সতর্ক করে বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পিয়ংইয়ং বিদেশি রেডিও সম্প্রচার শুনে বা চোরাচালানের মাধ্যমে আনা চলচ্চিত্র বা টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখে এমন কেউ ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০২১ সালের ছবিঘর
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷