মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি ‘সম্মানিত’ বোধ করবেন৷ এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দুই নেতার মধ্যে আলোচনার দরজা খুলে দিলেন৷
বিজ্ঞাপন
ব্লুমবার্গ নিউজ এজেন্সিকে সোমবার দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘‘তাঁর (উন) সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হওয়া যদি আমার জন্য সঠিক বলে মনে হয়, তাহলে আমি তাই করব, এবং এটা করার মাধ্যমে আমি সম্মানিত হব৷’’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘যদি সঠিক পরিস্থিতি তৈরি হয়, আবার বলছি সঠিক পরিস্থিতি, তাহলে আমি সেটা (উনের সঙ্গে বৈঠক) করব৷
‘‘বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ কখনোই এই কথাটি বলবেন না৷ তবে আমি আপনাকে বলছি, সঠিক পরিস্থিতি তৈরি হলে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলব৷ এটা একটা ব্রেকিং নিউজ,’’ উন প্রসঙ্গে ব্লুমবার্গের সাংবাদিককে বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
দুই নেতার মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠক প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বৈঠক হওয়া সম্ভব নয়৷
দক্ষিণ কোরিয়ার কুকমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ আন্দ্রেই ল্যানকভ ব্লুমবার্গকে বলেন, নিকট ভবিষ্যতে দুই নেতার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না৷
উল্লেখ্য, কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া একে অপরকে হুমকি দিয়ে আসছে৷ সোমবারও উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া কোনো পদক্ষেপের পাল্টা জবাব দিতে তার সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত৷’’
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘থাড’ মোতায়েনের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে চীন৷ গত সপ্তাহে দেশটি বলেছে, এভাবে চলতে থাকলে কোরীয় উপত্যকায় উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
উত্তর কোরিয়ার মতলব কী?
বিশেষজ্ঞদের অনেক পূর্বাভাষ ভুল প্রমাণ করে এখনো টিকে আছে কিম জং উন-এর স্বৈরাচারী শাসনযন্ত্র৷ শুধু তাই নয়, একের পর এক সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলকে প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া৷ এই সাফল্যের রহস্য কী?
ছবি: Reuters/KCNA
পথের কাঁটা দূর করা
কোনো ব্যক্তিকে সামান্যতম হুমকি মনে করলেই পথের কাঁটা হিসেবে তাকে নিশ্চিহ্ন করতে পিছপা হন না কিম জং উন৷ সম্প্রতি তাঁর সৎ-ভাইকে যেভাবে মালয়েশিয়ায় খুন করা হয়েছে, তার পেছনে এই মনোভাব কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এর আগেও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণের দৃষ্টান্ত রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Kambayashi
ঘরে-বাইরে শত্রু
নিজের পারিবারিক শাসনতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখতে ঘরে-বাইরে আস্ফালন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর কিম জং উন৷ ঘরের শত্রুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, বাইরের জগতকে ক্ষেপণাস্ত্র ও আণবিক অস্ত্র দেখিয়ে ঠেকিয়ে রাখার নীতি অনুসরণ করে চলেছেন ‘মহান নেতা’৷ সেই কৌশল কাজ করছে বলেও অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: Reuters/KCNA
বিফল হলেই বা কী!
উত্তর কোরিয়ার অনেক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বিফল হয়েছে৷ কিন্তু একের পর এক প্রচেষ্টা জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার উপর সামরিক হামলার কথাও এতকাল ভাবতে পারেনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Yeon-Je
পুরানো প্রযুক্তির সুবিধা
প্রশ্ন ওঠে, কার্যত একঘরে হয়ে থাকা একটি দেশ কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আয়ত্ত করছে? সেই ১৯৫০-এর দশকের মার্কিন, রুশ বা চিনা প্রযুক্তির ভিত্তিতেই উত্তর কোরিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে আসছে৷ তাই সেই প্রচেষ্টা বানচাল করতে সাইবার হামলা চালানোরও কোনো উপায় নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kcna
চিনের সঙ্গে দূরত্ব
আন্তর্জাতিক স্তরে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশ উত্তর কোরিয়া সাধারণ সীমান্তসহ একাধিক কারণে চীনের উপর নির্ভরশীল৷ তবে পিয়ংইয়ং ও বেইজিং-এর মধ্যে খোলাখুলি মতবিরোধ এখন আর বিরল ঘটনা নয়৷ এমন অবস্থা সত্ত্বেও স্থিতিশীলতার স্বার্থে চীন সে দেশের প্রতি সংযম দেখিয়ে চলেছে এবং অন্যান্য দেশকেও সেই পরামর্শ দিচ্ছে৷
ছবি: MARK RALSTON/AFP/Getty Images
চিনের উভয়-সংকট
উত্তর কোরিয়ার উপর প্রভাব কমে যাওয়ায় অন্যান্য দেশগুলিও আর চিনের আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছে না৷ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাই চীনের দোরগড়ায় অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েনের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ফলে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে চিনের নিজস্ব স্বার্থের ক্ষতি হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/U.S. Department of Defense/Missile Defense Agency