ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বর্পূণ শহরে হামলা চালানোর পর ধীরে ধীরে রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রুশ সেনারা।
বিজ্ঞাপন
উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, রাশিয়া কিয়েভের কাছে তাদের সেনাকে নতুন করে সাজিয়েছে। তারা কাছের শহরগুলি ঘিরে ফেলেছে। লুবিয়াঙ্কার কাছে তারা পজিশন নিয়েছে। কাছেই তারা কামান নিয়ে গেছে। কিছু সাঁজোয়া যান অ্যান্টোনভ বিমানবন্দরের উত্তরে গেছে এবং কিছু যান কাছের জঙ্গলে ঢুকেছে।
গত সপ্তাহে রুশ সেনা আর কিয়েভের দিকে এগোয়নি। মনে করা হচ্ছে, তাদের খাবার ও জ্বালানির সংকট ছিল। এখন আবার তারা কিয়েভের কাছাকাছি আসছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেনও কামান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে।
যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে পাড়ি জমানো বিদেশিদের কথা
প্রাণ বাঁচাতে লাখো ইউক্রেনীয় যখন দেশ ছাড়ছেন, তখন অনেক বিদেশি যাচ্ছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে৷ ছবিঘরে জানুন তাদের কথা....
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
জেলেনস্কির আহ্বান
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি বিশ্ববাসীকে বলেন, ‘‘আপনারা ইউক্রেনের পাশে থেকে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করুন৷’ পরে’ জেলেনস্কি দাবি করেন, তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক দেশের মানুষই যুদ্ধে অংশ নিতে ইউক্রেনে আসছেন৷ এ পর্যন্ত ১৬ হাজার বিদেশি যুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ ১৬ হাজারের মধ্যে কতজন ইউক্রেনে পৌঁছেছেন তা তিনি জানাননি৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন মাইকেল ফারকল৷ সম্প্রতি রোমে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার সময় জানতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বিদেশিদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তারপরই ইটালি থেকে ইউক্রেনে চলে এসেছেন ২৯ বছর বয়সি তরুণ৷ মাইকেল জানিয়েছেন, অস্ত্র হাতে নেবেন না, তার লক্ষ্য যুদ্ধেক্ষেত্রে প্যারামেডিক, অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবার করা৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
কারা আসছেন?
বিদেশ থেকে আসা ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার উপযুক্ত যারা এসেছেন, তাদের বড় একটা অংশই ইরাক বা আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নেয়া যোদ্ধা৷ নিজের দেশের সরকার এখন আর তাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করে না বলে মনে হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষতা প্রমাণের বড় একটা সুযোগ৷ সে কারণেই নিজের দেশ থেকে ইউক্রেনে ছুটে এসেছেন৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
আনাড়িদের ভিড়
এক সময় ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানান, জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ইউক্রেনে আসছেন, তাদের অনেকেই যুদ্ধের ময়দানে বিশেষ কোনো কাজে আসবেন না৷ তার মতে, তারা এত অনভিজ্ঞ এবং অদক্ষ যে তাদের শুধু ‘বুলেট কুড়ানোর’ কাজে লাগাতে হবে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
অপ্রস্তুত ইউক্রেন
কয়েকজন বিদেশি যোদ্ধা জানান, যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম এমনকি অত্যাধুনিক অস্ত্র চালাতে পারেন এম লোক খুঁজতে ‘হ্যাভ গান উইল ট্র্যাভেল’ ধরনের নাম দিয়ে ইতিমধ্যে ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলা হয়েছে৷ বডি আর্মার, নাইট-ভিশন গগলসের মতো জিনিসও কারো কাছে থাকলে দিয়ে যেতে বলছে গ্রুপগুলো৷ এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো যেসব অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়েছে, সেগুলো চালানোর প্রশিক্ষকও খোঁজা হচ্ছে গ্রুপগুলোর মাধ্যমে৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
অদক্ষরাও গুরুত্বপূর্ণ
লভিভ শহরে বিদেশ থেকে যুদ্ধে অংশ নিতে আসাদের তালিকা প্রণয়ন করেন রোমান শেপেলাক৷ বিদেশি যোদ্ধাদের গ্রহণ করা, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি করার প্রস্তুতি যে ইউক্রেন এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি রোমান তা স্বীকার করেন৷ তবে তার বিশ্বাস, দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে৷ অদক্ষ বিদেশিরা আসছে বলেও হতাশ নন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যে অন্য দেশের জন্য যুদ্ধ করতে চাইছে- এটাই দারুণ ব্যাপার৷ তারাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
6 ছবি1 | 6
কিয়েভের অবস্থা
কিয়েভের মেয়র জানিয়েছেন, শহরের অর্ধেক মানুষ চলে গেছেন। শহর এখন দুর্গের চেহারা নিয়েছে। শহরের মানুষ প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তারা কিছুতেই রুশ সেনাকে কিয়েভ অধিকার করতে দেবেন না।
সাবেক বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ক্লিচকো বলেছেন, প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি চেকপয়েন্ট দুর্গের চেহারা নিয়েছে। সাধারণ মানুষ ইউনিফর্ম পরে মেশিনগান হাতে নিয়ে তা পাহারা দিচ্ছেন।
চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ
ইউক্রেনের চেরনোবিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হলো। বুধবার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ছবি: ITAR-TASS/imago images
তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে পারে
চেরনোবিল থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে পারে। তাই বন্ধ করে দেয়া হলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। অতীতে এখানে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোয় ভয়ংকর অবস্থা হয়েছিল।
ইউক্রেনের এনার্জি অপারেটর জানিয়েছে, চেরনোবিলকে পাওয়ার গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে তা আবার চালু করার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
জেনারেটর দিয়ে কাজ
চেরনোবিলে এখন জেনারেটর দিয়ে কাজ চালু আছে। মূলত জল এবং চুল্লির তেল ঠান্ডা করার জন্য বিদ্যুৎ দরকার। সেটাই জেনারেটর চালিয়ে পাওয়া যাচ্ছে।
ছবি: ITAR-TASS/imago images
রাশিয়ার সেনার হাতে
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। তারপর তারা চেরনোবিলের দখল নেয়। কিন্তু রাশিয়ার সেনার গোলায় সেখানে আগুন লেগে যায়। আগুন নেভানো গেলেও তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।
ছবি: ITAR-TASS/imago images
নজর রাখছে জার্মানি, ফ্রান্স
জার্মানি ও ফ্রান্স চেরনোবিলের উপর নজর রাখছে। জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, এখনো পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা লিক করার কোনো খবর নেই।
ছবি: Genya Savilov/AFP
5 ছবি1 | 5
ইউক্রেনের দাবি
ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা রাশিয়ার দশটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। সেই সঙ্গে তারা দুইটি বড় কনভয় ধ্বংস করেছে বলেও দাবি করেছে। একটি বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এসইউ ২৫ ও এসইউ ৩৪ জেট ধ্বংস করা হয়েছে। ইউক্রেন অবশ্য জানায়নি, কোথায় তারা এই পাল্টা আঘাত করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ইউক্রেনের এই দাবি এখনো পর্যন্ত যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
জেলেনস্কির অভিযোগ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া মারিউপলে মানব করিডোরের উপর হামলা করেছে। এটা সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, গত দুই দিন যুদ্ধবিরতি থাকার সময় এক লাখ মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিছু শহরে বাসিন্দাদের পক্ষে অন্যত্র যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাদের কাছে জল, খাবার, ওষুধ ভর্তি ট্রাক পাঠানো হয়েছে।