কিরগিস্তানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আখরোট বন৷ স্থানীয় বাসিন্দারা আখরোট সংগ্রহ করে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করেন৷ তবে নানা কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় মাঝেমধ্যে বিপদে পড়েন তাঁরা৷ জার্মানির সহায়তায় পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
আখরোট সংগ্রহের সময় বনে অনেক মানুষের আগমন ঘটে৷ যেমন আকবারমেত আকিশোভা এই সময়টায় তাঁবুতে থাকেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা চারজন কাজ করি৷ আমার দুই ছেলে, এক ছেলের বউ আর আমি৷ যে বছর উৎপাদন ভাল হয় সে বছর প্রায় দুই থেকে তিন টন আখরোট পাওয়া যায়৷ কিন্তু এ বছর আমরা মাত্র ৩০০ কেজি আখরোট পেয়েছি৷''
অবশ্য তারপরও জালালাবাদ মার্কেটে অনেক আখরোট পাওয়া যাচ্ছে৷ খোসা সহ এক কেজির দাম দুই ইউরো৷ আর খোসা ছাড়িয়ে বিক্রি করলে কেজিপ্রতি ছয় ইউরো পাওয়া যায়৷
দেশি ফল কেন খাবেন?
বিদেশি পণ্য বা ফল বেশি ভালো – এ রকম একটা ধারণা অনেকেরই৷ আসলে দেশি ফলের যে কত পুষ্টিগুণ রয়েছে, সেটা হয়ত সেভাবে তাদের জানা নেই৷ তাই জেনে নিন কিছু দেশি ফলের পুষ্টিগুণের কথা, যেগুলো জার্মানিতেও আমদানী করা হয়৷
ছবি: Fars
‘আম’ কে না ভালোবাসে?
আম পছন্দ করে না এমন বাঙালি আছে নাকি? আনন্দের কথা যে জার্মানিতেও আজকাল আম পাওয়া যায়৷ আমাদের দেশীয় আম জার্মানিতে আসে আমের ঋতুতে আর সারা বছর পাওয়া যায় অন্যান্য দেশের আম৷ আমে রয়েছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন ‘ই’, ‘এ’, ‘সি’ এবং পেকটিন৷ আম যেমন পেট পরিষ্কার রাখে, তেমনি ত্বক সুন্দর করার মতো আরো নানা উপকারে আসে৷
ছবি: Fotolia/DragonImages
পেয়ারা
খানিকটা অবহেলিত ফল পেয়ারায় রয়েছে আঁশ, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রনসহ নানা কিছু৷ পেয়ারার রস খুবই শক্তিদায়ক এবং এটা হৃদস্পদন ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে৷ পেয়ারার ভিটামিন ‘এ’ যেমন দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, তেমনি এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ‘সি’ মস্তিষ্ককে সচল রাখে৷ শুধু তাই নয়, পেয়ারা বিভিন্ন ধরণের ক্যানসারকে প্রতিরোধ করতেও ভূমিকা রাখে, দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্যকেও৷
ছবি: DW/M. Mamun
লিচু
লিচু শুধু দেখতেই সুন্দর আর লোভনীয় নয়, খেতে ভীষণ মজার এই ফল কিন্তু বেশ কয়েক বছর থেকে জার্মানিতে আমদানী করা হচ্ছে৷ এমনকি ডয়চে ভেলের ক্যান্টিনেও ইদানিং লিচু রাখা হয়৷ লিচুতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, আঁশ এবং প্রচুর ক্যালশিয়াম৷ লিচু হজমে সাহায্য করে থাকে৷ ক্যালশিয়াম থাকায় লিচু নারীদের জন্য বেশ উপকারী৷
ছবি: DW/M. Mamun
কলা
সহজলভ্য ফল কলা সারা বছরই পাওয়া যায়, প্রায় সব দেশেই৷ কলাতে রয়েছে ক্যালশিয়াম, অ্যামিনো অ্যাসিড, আয়রন ও বিভিন্ন ভিটামিন৷ কলা তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি দেয় বলে খেলোয়াড় বা ছাত্রদের কলা খেতে দেখা যায়৷ এছাড়া কলা মানসিক চাপ কমিয়ে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখে৷ কলার পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় নাস্তায় অন্য কিছু না খেয়ে শুধু একটা কলা খেলেই উপকার পাবেন, বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা৷
ছবি: Colourbox
পেঁপে
কমলা রঙের পাঁকা পেপে মুখে রুচি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে৷ আমদানী করা দেশি ফল পেঁপে আজকাল প্রায় সারা বছরই জার্মানিতে পাওয়া যায়৷ পেঁপের পুষ্টিগুণের কারণে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে৷ একটা ভালো পেঁপের দাম জার্মনিতে ৬-৭ ইউরো, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ছয় থেকে সাতশ’ টাকার মতো৷
ছবি: Colourbox/Christian Fischer
খেজুর
খেজুর কিন্তু শুধু রোজার মাসে খাওয়ার জন্য নয়, এর পুষ্টিগুণের কারণে সারা বছরই খাওয়া উচিত খেজুর৷ খেজুর শরীরে ঝটপট শক্তি এনে দেয় এবং এ ফল হৃদপিণ্ডের জন্য খুবই উপকারী৷ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও পটাশিয়াম৷ নিয়মিত খেজুর খেলে নাকি উচ্চ রক্তচাপও কমে যায়৷
ছবি: Colourbox
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল
জার্মানিতে দেশের নানারকম ফল পাওয়া গেলেও কাঁঠাল দেখা যায় না৷ একমাত্র ব্যাতিক্রম বাংলাদেশি বা ভারতীয় দোকান৷ সেখানে হঠাৎ করেই চোখে পড়ে এটি৷ ছোট্ট এক টুকরো কাঁঠালের দাম এখানে অন্তত ১০ ইউরো৷ এতে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘কে’, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেশিয়ম সহ বহুকিছু৷ কাঁঠাল চোখের জন্য তো ভালোই, এমনকি উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায় কাঁঠাল৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
গ্রীষ্মের ফল তরমুজ
তরমুজে রয়েছে প্রয়োজনীয় নানা ভিটামিন, পটাশিয়াম ও মিনারেল৷ তরমুজের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও লাইকোপেন নামের উপাদান প্রস্টেট ক্যানসার, অন্ত্রের ক্যানসারসহ অন্যান্য নানা ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়৷ এছাড়া যৌন ক্ষমতাও বাড়ায় তরমুজ৷ জার্মানিতে গরমকালে প্রচুর তরমুজ পাওয়া যায়, তবে তার বেশিরভাগই আসে তুরস্ক থেকে৷
ছবি: Prakash Singh/AFP/Getty Images
হৃদরোগকে দূরে রাখে বেদানা
বেদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট৷ তাই প্রতিদিন ছোট এক গ্লাস বেদানার রস পান করলে হৃদরোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব৷ জার্মানিতে কিছু দিন আগে পর্যন্তও বেদানা দেখা যেত না৷ তবে আজকাল প্রায় প্রতিটি ফলের দোকানেই আমদানী করা বেদানা পাওয়া যায়, যদিও সেগুলোর বেশ ভালোই দাম৷
ছবি: Fars
9 ছবি1 | 9
সোভিয়েত আমলে সংগ্রহ করা সব আখরোট সরকারকে দিয়ে দিতে হত৷ সেই অবস্থায় আর কখনই ফিরে যেতে চান না স্থানীয় কৃষকরা৷
নানা কারণে আখরোটের উৎপাদন কম হওয়ায় মাঝেমধ্যে বিপদে পড়েন কিরগিজরা৷ কিরগিস্তানের পরিবেশবিদরা জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড এর সঙ্গে মিলে পরিস্থিতির উন্নয়নের চেষ্টা করছেন৷ বেড়া দেয়ার মাধ্যমে গবাদি পশুর হাত থেকে ছোট গাছ রক্ষা করা হচ্ছে৷ প্রকল্পের অর্থে এগুলো কিনে দেয়া হয়েছে৷ কারণ স্থানীয়দের বেড়া কেনার সামর্থ্য ছিল না৷ এছাড়া যাযাবর হওয়ার কারণে বেড়া বিষয়টির সঙ্গে তারা পরিচিতও ছিল না৷
এছাড়া গ্রামবাসীদের আয়ের অন্যান্য উৎস সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হচ্ছে৷ যেমন শুকনো আপেল কিংবা ঔষধি গাছ চাষ করা৷