প্রায় তিন সপ্তাহ পর উদ্ধার হয়েছে ইসরায়েলের তিন কিশোরের মৃতদেহ৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কিশোরদের হত্যা করার জন্য হামাসকে চড়া মূল্য দিতে হবে৷ ইতিমধ্যেই অবশ্য হামাস গোষ্ঠীর এক কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গত ১২ই জুন নিখোঁজ হয় ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ নাগরিক তিন কিশোর এভাল ইফরাহ, গিলাদ শার এবং নাফতালি ফ্রাংকায়েল৷ ফিলিস্তিনি জঙ্গি সংগঠন হামাস তাদের অপহরণ করেছে – এই সন্দেহে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করে৷ মূলত ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সি তিন কিশোরকে উদ্ধারের লক্ষ্যে শুরু করা এ অভিযানে এ পর্যন্ত হামাস নিয়ন্ত্রিত বেশ কিছু জায়গায় যুদ্ধ বিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে৷ সোমবার হেব্রনের উত্তরের এক জায়গার পাথের স্তূপের নীচ থেকে অপহৃত তিন কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী৷
আরাফাতের মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক
বিষ প্রয়োগে নয়, স্বাভাবিক কারণেই ফিলিস্তিনের সাবেক নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের তদন্ত সংস্থা৷
ছবি: DW/Y.Teyze
ফরাসি তদন্ত
ফ্রান্সের একটি তদন্ত সংস্থার বরাত দিয়ে দেশটির একটি বেতার জানিয়েছে, ‘বার্ধক্য ও সংক্রমণজনিত’ কারণে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসির আরাফাতের৷
ছবি: AP
সুইস তদন্ত থেকে ভিন্ন
ফরাসি এই প্রতিবেদন সুইস বিশেষজ্ঞদের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে একেবারে ভিন্ন৷ সুই বিশেষজ্ঞরা গত মাসে জানিয়েছিল, আরাফাতের দেহাবশেষ পরীক্ষায় উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম পাওয়া গেছে৷ বিষ প্রয়োগে আরাফাতকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী সুহা আরাফাত আদালতে মামলা করার পর ফ্রান্স ২০১২ সালের আগস্টে তদন্ত শুরু করে৷ সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা আরাফাতের কাপড়ে এই বিষাক্ত পদার্থের খোঁজ পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরাফাতের মৃত্যু
২০০৪ সালের নভেম্বরে ৭৫ বছর বয়সে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফিলিস্তিনের এই কিংবদন্তি নেতা৷ হাসপাতালের মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর৷ কিন্তু কি কারণে দ্রুত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল তার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ এরপর থেকেই তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে নানা জল্পনা কল্পনা চলতে থাকে৷
ছবি: Reuters
পলোনিয়াম নিয়ে আলোচনার শুরু
লন্ডনে এক সাবেক কেজিবি গোয়েন্দাকে হত্যা করতে ব্যবহৃত হওয়ায় ২০০৬ সালে পলোনিয়াম নিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনার ঝড় ওঠে৷ কেজিবি গোয়েন্দা লিটভিনেঙ্কো লন্ডনের একটি বিলাসবহুল হোটেলে বৈঠক করার সময় পলোনিয়াম মেশানো চা পান করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: AP
পলোনিয়াম কী?
‘পলোনিয়াম ২১০’ বিশ্বের বিরলতম পদার্থগুলোর একটি৷ ১৮৯৮ সালে বিজ্ঞানী দম্পতি মেরি ও পিয়েরে কুরি এই পদার্থটি আবিষ্কার করেন৷ এই বিজ্ঞানীদ্বয়ের দেশ পোল্যান্ডের নাম অনুসারে সেই পদার্থের নাম রাখা হয় পলোনিয়াম৷ ভূপৃষ্ঠের শক্ত আবরণে খুব নিম্ন ঘনত্বে প্রাকৃতিকভাবেই এই পদার্থের সৃষ্টি হতে পারে৷ তবে পারমাণবিক চুল্লিতেও কৃত্রিমভাবে এটির উৎপাদন সম্ভব৷
ছবি: dpa
বিপদজনক
পলোনিয়াম অত্যন্ত বিপদজনক৷ খুব সামান্য পরিমাণেও যদি মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও মৃত্যু ডেকে আনতে পারে৷ কারণ এটির আলফা তেজস্ক্রিয় উপাদান যকৃত, বৃক্ক এবং অস্থিমজ্জার উপর বিষক্রিয়া ঘটিয়ে একাধিক অঙ্গ বিকল করে দেয়৷ ২০০৬ সালে পলোনিয়ামের বিষক্রিয়ায় নিহত লিটভিনেঙ্কোর ক্ষেত্রে বমিবমি ভাব, চুল উঠে যাওয়া, গলা ফোলা এবং বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো ধরা পড়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হন্তাদের কাছে লোভনীয়
পলোনিয়াম দিয়ে ভালো অস্ত্র বানানো যায়৷ এর আলফা তেজস্ক্রিয় উপাদান ত্বক ভেদ করে না এবং তেজস্ক্রিয় নির্ণয়কারী যন্ত্রেও ধরা পড়ে না৷ ফলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এটি অন্য দেশে পাচার করা সহজ৷ নিশ্বাসের সাথে অথবা ক্ষতস্থান দিয়ে কারো দেহে পলোনিয়াম ঢুকিয়ে দেওয়া যায়৷ তবে সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো খাবার কিংবা পানির সাথে মিশিয়ে দেওয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুরি দম্পতির মেয়ে’র মৃত্যু
কুরি দম্পতির মেয়ে ইরিন লিউকেমিয়ায় মারা গিয়েছিল বলেই বিশ্ব জানে৷ তবে অনেকে সন্দেহ করেন যে, তাদের পরীক্ষাগার থেকে দুর্ঘটনাবশত কোনোভাবে পলোনিয়াম ইরিনের দেহে প্রবেশ করে থাকতে পারে৷
ছবি: DW/Y.Teyze
8 ছবি1 | 8
ইসরায়েল সেনাবাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান যে, তাঁরা তদন্ত করে জেনেছেন, তিন কিশোরকে হামাসই অপহরণ করেছিল৷ অপহরণের পরই তাদের হত্যা করায় হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ নিখোঁজ কিশোরদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাসকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে৷ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়াআলন হামাসের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘‘আমরা জেনেছি এই অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডের জন্য হামাসই দায়ী৷ ওদের (হামাস) এক হাত দেখে নেয়ার আগ পর্যন্ত আমরা থামবো না৷''
হামাস অবশ্য এই অপহরণকে সমর্থন জানালেও এর দায়িত্ব স্বীকার করেনি৷
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সন্দেহের তালিকায় রয়েছে হামাসের দুই কর্মী মারভান কোয়াসমেহ এবং আমের আবু আইশেহ৷ হেব্রনের এই দুই বাসিন্দা তিন কিশোর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে লাপাত্তা৷ ইসরায়েলের এক সেনা কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার হেব্রনে আবু আইশেহ-এর ঘরের একটি দরজা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তবে ঘরের বাকি অংশের কোনো ক্ষতি করা হয়নি৷