জার্মানির স্কুল ও ডে কেয়ার সেন্টারে ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের হিজার পরার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছে টেরস ডে ফেমস নামের একটি নারীবাদী সংগঠন৷
বিজ্ঞাপন
টেরেস ডে ফেমেস নামের সংগঠনটি মনে করে ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের হিজাব পরতে দেয়া নৈতিকতারোধী৷ ১৮ বছরের কম বয়স থেকে হিজাব পরায় অভ্যস্ত হওয়া মেয়েরা পরবর্তী জীবনে এ বিষয়ে কোনো স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলে দাবি এ সংগঠনটির৷
মুসলিম মেয়েদের সাঁতার শেখা সহজ করছে জার্মানি
সাঁতার জানা প্রতিটি মানুষের জন্যই জরুরি৷ তাই ধর্ম বিশ্বাসের কারণে সাঁতার শেখা থেকে মুসলিম মেয়েরা যাতে বিরত না থাকে, সেজন্য জার্মানির একটি স্কুলে তাদের ‘বুর্কিনি’ পরে সাঁতার শেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
কোনো কারণেই শিশুরা যেন পিছিয়ে না পড়ে
কোনো শিশুর মাতৃভূমি অন্য দেশ কিংবা সে ভিন্ন ধর্মের হলেও সে যেন সাঁতার শেখার সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে মুসলিম মেয়েদের শরীর ঢাকা সাঁতারের পোশাক ‘বুর্কিনি’ পরেই সাঁতার শেখার সুযোগ দেয়া হয়েছে জার্মানির একটি স্কুলে৷ জানান জার্মনির পরিবারমন্ত্রী ফ্রান্সিসকা গিফে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিশুর মা-বাবাকেই বুঝতে হবে
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, জার্মানিতে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ শিশুই ঠিকমতো সাঁতার জানে না, যা আসলে বিপজ্জনক৷ মুসলিম মেয়েরা যাতে এ দেশের শিক্ষার নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়, সাঁতারের ক্লাসেও যাতে তারা অংশ নেয়, তা নিশ্চিত করারই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Skolimowska
কিন্তু বাবাদের আপত্তি...
কিন্তু অনেক মুসলিম মেয়ের বাবা কোনোভাবেই মেয়েকে সাঁতার শিখতে দিতে রাজি নন৷ ফলে মুসলিম মেয়েদের সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ শিক্ষকরাই ডয়চে ভেলেকে এ কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/ZB
জার্মান মেয়েদের লাইফস্টাইল তাদের অপছন্দ
জার্মানিতে বসবাসরত মুসলিমদের অনেকের কাছে জার্মান মেয়েদের জীবনযাত্রা বা পোশাক-আশাক এখনো গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি৷ এ কারণেও মুসলিম পরিবারের অভিবাবকরা তাঁদের মেয়েদের ব্যাপারে একটু বেশি রক্ষণশীল থেকে যাচ্ছেন বলে অনেকের ধারণা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
যেখানে অনুমতি মিলেছে
জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের হ্যার্নে শহরের একটি স্কুলে মুসলিম মেয়েরা বুর্কিনি পরে সাঁতার শেখার অনুমতি পেয়েছে৷ ভাড়া দেওয়ার জন্য ২০টি বুর্কিনিও রাখা হয়েছে সেখানে৷
ছবি: DW
আর কোনো বাধা নেই...
২০১৩ সালে ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, বুর্কিনি অনুমোদন পেলে সাঁতার শেখার ক্লাসে মুসলিম মেয়েদের অংশ নেয়াও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করবে৷ হ্যার্নে শহরের স্কুলটিতে বুর্কিনি পরে সাঁতার শেখার অনুমতি দিয়ে দেয়ায় এবার হয়ত মুসলিম মেয়েদের সাঁতার শেখার পথে কোনো বাধা থাকবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
6 ছবি1 | 6
হিজাবকে শুধু ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে দেখছেন না এ নারীবাদীরা৷ তাঁরা বলছেন, হিজাব পরানোর মধ্য দিয়ে সমাজে ‘বৈষম্য ও যৌন বিভাজন' তৈরি করা হচ্ছে৷ ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের হিজাব পরানো শিশু অধিকার লংঘনের শামিল বলেও মন্তব্য করেন টেরেস ডে ফেমেসের পরিচালক ক্রিস্টিয়া স্টলে৷
স্বাক্ষর সংগ্রহ
নারীবাদীদের এ ক্যাম্পেইন সমর্থন করে রাজনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মীসহ অনেকেই ইতিমধ্যে স্বাক্ষর করেছেন৷ সাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন মানবাধিকারকর্মী এলিস স্ভারজার, জার্মানির টুরিংগেন শহরের মেয়র বরিস পালমার ও ইসলাম ধর্ম বিশেষজ্ঞ আহমেদ মনসুর৷ সংগঠনটির পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী অক্টোবর মাস নাগাদ এক লক্ষ সমর্থনকারীর সাক্ষর সংগ্রহ শেষে এটি্ জার্মানির আইনমন্ত্রী কাটারিনা বারলে'র কাছে জমা দেয়া হবে৷ এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে বলে জানা গেছে৷
হিজাব, কিপা কি বৈষম্য, না অধিকার?
হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জার্মানিতে দীর্ঘ দিন ধরেই বিতর্ক চলছে৷ আদালতের এক রায়ে সম্প্রতি শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরার বিষয়ে নিষাধাজ্ঞা জারি করা হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় দেশটিতে বসবাসরত মুসলমানদের মধ্যে৷ ইয়াসমিন অকোটানসয় নামে ইসলামিক স্টাডিজের এক শিক্ষিকা ডয়চে ভেলেকে বলেন, হিজাব পরে শ্রেণিকক্ষে আসা ছাত্রীদের সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেড়েছে৷ নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন ‘‘অনেক ছাত্রী আছেন, যাদের মায়েরা হিজাব না পরলেও তাঁরা হিজাব পরছেন৷'' এতে বোঝা যায় ছাত্রীরা নিজেদের ইচ্ছায় হিজাব পরছেন৷'' তিনি আরো বলেন,‘‘কেউ যদি হিজাব পরে ক্লাসে আসে, এতে আমার কোনো অসুবিধা নেই৷ স্বাধীনভাবে ধর্মীয় বিশ্বাস লালন ও চর্চা করার অধিকার সবার আছে৷''
হিজাবী নারীদের মেটাল ব্যান্ড
বিশ্বের কিছু মুসলিম দেশে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক, আবার অনেক দেশে হিজাব নিষিদ্ধ৷ এবার সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার এক মেটাল ব্যান্ড দল৷ তিন নারী সদস্যের এই দলের সবাই হিজাব পরাসহ সব ইসলামি অনুশাসন মেনে চলেন৷
ছবি: Reuters/Str
দলের নাম চিৎকার
ব্যান্ডের নাম ‘ভয়েস অফ বাচেপ্রট’৷ ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভার গারুত শহরে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই ব্যান্ড৷ শহরের আদিবাসীদের ভাষা সানডানিজ৷ এ ভাষায় ভয়েস অফ বাচেপ্রট অর্থ চিৎকার৷ দেশটির ১৫ ভাগ মানুষ কথা বলেন এই ভাষায়৷
ছবি: Reuters/Str
দলের সদস্য কারা?
তিন নারী সদস্যের এই ব্যান্ডের দলনেতা ফির্দা কুর্নিয়া৷ গিটার যেমন ভালো বাজাতে পারেন, গানের গলাও তেমনি অসাধারণ৷ বাকি দুই সদস্য ইউয়িস সিতি আইসাহ এবং ভিডি রহমাওয়াতি৷ আইসাহ বাজান ড্রামস, ভিডি রহমাওয়াতি বেস৷ ছেলেদের কোনো দলের চেয়ে তাঁরা কোনো অংশে কম না৷
ছবি: Reuters/Str
কেন মেটাল ব্যান্ড?
এখন ব্যান্ডের ম্যানেজার, একসময় স্কুলের মিউজিক শিক্ষক এরজা সাতিয়া৷ তার মিউজিক কালেকশন দেখেই অনুপ্রাণিত হন কুর্নিয়ারা৷ প্রথমবার মেটাল গান শুনেই এর প্রেমে পড়েন কুর্নিয়া৷ তাদের মনে মধ্যে জেগে ওঠে বিদ্রোহের মনোভাব৷
ছবি: Reuters/Str
উঠতি বয়সিদের রোল মডেল
স্কুলে পড়ার সময়ই তিন সদস্য মিলে গড়ে তুলেন এই ব্যান্ড৷ ফলে টিনএজারদের মধ্যে এরই মধ্যে ব্যান্ডটি কুড়িয়েছে ব্যাপক প্রশংসা৷ জাভা তো বটেই, রাজধানী জাকার্তাতেও ছড়িয়ে পড়েছে ভয়েস অফ বাচেপ্রটের সুনাম৷ দেশটির জাতীয় টেলিভিশনেও পারফর্ম করেছে এই মেটাল ব্যান্ড৷
ছবি: Reuters/Str
বিতর্ক, হুমকি
মুসলিমপ্রধান দেশের অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল পশ্চিম জাভায় লড়াইটাও কম করতে হচ্ছে না ভয়েস অফ বাচেপ্রটকে৷ ব্যান্ডের ম্যানেজার এরজা সাতিয়া ফোন কলে বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকিও পেয়েছেন৷ ধর্মীয় নেতারা বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে ব্যান্ডের কনসার্ট বন্ধের চেষ্টা চালিয়েছেন৷ একবার এক কনসার্টে শব্দ বন্ধ করে বিদ্যুতের তার কেটে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Reuters/Str
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভয়েস অফ বাচেপ্রটের ভক্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে অনেক আগেই৷ বিখ্যাত সব মেটাল ব্যান্ডের গান ছাড়াও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয় নিয়ে নিজেদের লেখা গানও আছে ব্যান্ডের৷ তাঁদের স্বপ্ন, স্কুল ছাড়ার আগেই নিজেদের গান নিয়ে একটি অ্যালবাম বের করা৷ দেশের বাইরে, যুক্তরাজ্য অথবা যুক্তরাষ্ট্রে পারফর্ম করা৷ অথবা, হয়ত কোনো এক আরব দেশে?
ছবি: Reuters/Str
6 ছবি1 | 6
একই মত ব্যাক্ত করেছেন জার্মানির বৈষম্যবিরোধী দপ্তরের পরিচালক বের্নহার্ড ফ্রাংকে৷ তিনি মনে করেন, হিজাব নিষিদ্ধ করা হলে এ বিষয়ক সমস্যাটি কমবে না, বরং বাড়বে৷ ফ্রাংকে বলেন, হিজাব নিষিদ্ধ করার কথা যাঁরা বলছেন, তাঁরা স্কুলছাত্রীদের ধর্মীয় অনুভূতিকে বিবেচনায় নিচ্ছেন না৷এর মধ্য দিয়ে বৈষম্য আরো বাড়বে৷
এদিকে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনে হিজাব নিষিদ্ধের বিষয়টি জার্মান সংবিধানে দেয়া ‘সকলের সমান অধিকারের' ধারার সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনে হিজাব নিষিদ্ধের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল, কেননা এটি স্কুলে মুসলিম ছাত্র-ছত্রীদের সমান অধিকার ভোগ করার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে৷
আবার স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করার বিষয়ে জার্মান সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের সাথেও সাংঘর্ষিক হবে বলে মনে করেন তিনি৷
তবে হিজাব নিষিদ্ধের দাবি আদায়ের বিষয়টি এতটা সহজ হবে না বলে মনে করে টেরেস ডে ফেমেস৷ সংগঠনটির পরিচালক ক্রিস্টিয়া স্টলে বলেন, হিজাব নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়টিতে অনেকেই নিজেদেরকে জড়াতে চান না৷ কেননা, এতে করে তাঁদের গায়ে বর্ণবাদী তকমা লাগার আশঙ্কা রয়েছে৷