ঢাকায় এক পুলিশ কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রী হত্যার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে৷ এই ঘটনায় গ্রেপ্তার নিহতদের নিজ সন্তানকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ৷ প্রশ্ন উঠেছে, কিশোরীকে রিমান্ডে নিয়ে কি শিশু অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে না?
বিজ্ঞাপন
বাংলা ইন্টারনেট কমিউনিটিতে এখন সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছে এক কিশোরী৷ জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাকে৷ বাংলা ব্লগ এবং ফেসবুকে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন অসংখ্য মানুষ৷ সামহোয়্যার ইন ব্লগে এম এ হাসান মাহমুদ লিখেছেন, ‘‘আমরা বাঙালিরা বড় বেশি আবেগি, সেটা আরেকবার প্রমাণ হলো৷ শিশু অধিকার সনদে আছে – ১৮ বছরের নীচে বয়সের কারো, বিকৃত এবং আইনের চোখে আসামী হিসেবে ছবি ছাপানো নিষেধ৷ কিন্তু *** মেয়েটির বেলায় আমরা সকল গণমাধ্যম তা বেমালুম ভুলে গেছি৷''
কেন খুন হয়েছেন সাগর, রুনি?
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে৷ কিন্তু আজও নিহতের পরিবার, শুভানুধ্যায়ী আর সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারলো না, কেন এই হত্যাকাণ্ড? এই বিষয়ে ছবিঘর দেখুন এখানে:
ছবি: DW
সেই কালোরাত
২০১২ সালের এগারোই ফেব্রুয়ারি৷ সেদিন খুব ভোরবেলা জানা গিয়েছিল, ঢাকায় নিজের ভাড়া বাসায় খুন হয়েছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি৷ একই ফ্ল্যাটে থাকলেও প্রাণে বেঁচে যান তাদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘ৷
ছবি: dapd
সাগর সরওয়ার
দেশি-বিদেশি একাধিক গণমাধ্যমে কাজ করার পর ২০১১ সালে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন সাগর সরওয়ার (ডানে)৷ সর্বশেষ সেই টেলিভিশন চ্যানেলেই কাজ করেছেন তিনি৷ ২০১২ সালের দশই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কাজ থেকে বাসায় ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুন হন সাগর৷
ছবি: DW
মেহেরুন রুনি
একাধিক দৈনিকে কাজ করার পর কয়েক বছর আগে টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় কাজ শুরু করেন মেহেরুন রুনি (বামে)৷ মাঝে স্বামীর সঙ্গে বছর দেড়েক জার্মানিতে কাটিয়েছেন তিনি৷ এরপর ২০১১ সালে আবারো ফিরে যান নিজের কর্মস্থলে৷
ছবি: DW
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার!
১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন৷ বলাবাহুল্য, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি৷
ছবি: DW
সাংবাদিকদের আন্দোলন
বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে মতের অমিল থাকলেও সাগর-রুনি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের ঘোষণা প্রদান করে সব সংগঠন৷ খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ
সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গর্জে ওঠে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালিরা৷ জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW
ব্লগারদের প্রতিরোধ
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনের পাশাপাশি ব্লগাররা এই দম্পতি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজপথে নামে৷ গত বছর এই ইস্যুতে ব্লগ ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগ৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে এখনো রয়েছে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্যানার৷
ছবি: DW
রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে রাজপথে ব্লগারদের সক্রিয় আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকাসহ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ইত্যাদি ইস্যুতে ব্লগ লিখে ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স অ্যাওয়ার্ড জয় করে আবু সুফিয়ানের বাংলা ব্লগ৷ ছবিতে আন্দোলনরত আবু সুফিয়ান৷
ছবি: DW
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাটকীয় ঘোষণা
গত অক্টোবর মাসে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ আটজনকে চিহ্নিত করে সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান৷ বাকি একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় গত সপ্তাহে৷ ব়্যাব গ্রেপ্তারকৃতদের বলছে ‘সন্দেহভাজন’৷ আর পরিবার মনে করছে, এদেরকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কার্যত ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানো হচ্ছে৷
আন্তর্জাতিক তদন্ত চান পরিবার
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের এক বছর হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷ ধরা পড়েনি মূল অপরাধীরা৷ তাই তাদের পরিবার এখন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করেছেন৷ রুনির ভাই নওশের রোমান জানিয়েছেন, তারা (ব়্যাব) তদন্তের চেয়ে হয়রানি করতে বেশি উৎসাহী৷ সাগর রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করা হয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
জজ মিয়া নাটক চান না সাগরের মা
সাগরের মা সালেহা মনির এখনও কাঁদেন৷ তাঁর দাবি হচ্ছে, প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে হবে৷ এক বছর পর দারোয়ান এনামুলকে গ্রেফতার তাঁর কাছে জজ মিয়া নাটক ছাড়া কিছুই নয়৷ তাঁর মতে, এক বছরে নানা টালবাহানা করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
11 ছবি1 | 11
বাংলাদেশের অনেক পত্রিকায় আলোচিত কিশোরীর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে৷ এই বিষয়ে সাংবাদিক সুপ্রীতি ধর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘...সাংবাদিক বন্ধুদের বলছি, ***-র ঘটনাটাকে স্রেফ ‘অপরাধ' হিসেবে দেখবেন না৷ ওকে অভিযুক্ত করার আগেই মেরে ফেলবেন না৷ ওর ছবি ছেপে দিয়েন না আর৷''
বাবু আহমেদ নামক আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘...আইন আরও বলে, এ আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলায় জড়িত বা সাক্ষ্য প্রদানকারী কোনো শিশুকে সংবাদমাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে না৷ কখনো করতে চাইলে, বিচারকের অনুমতি নিতে হবে৷ বিচারক বুঝে দেখবেন, শনাক্তকরণ শিশুটির জন্য ক্ষতিকর হবে কি না৷ নতুন শিশু আইন ২০১৩ তে এটি ২৮ নম্বর ধারা৷ সুস্পষ্ট ভাবেই মেইন্সট্রিম মিডিয়াগুলো এই আইন লঙ্ঘন করেছে৷''
এদিকে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সোমবার জানিয়েছেন, ‘‘জেলা প্রবেশনার কর্মকর্তাকে না জানিয়ে, বয়স যাচাই না করে অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো শিশু অধিকার আইনের লঙ্ঘন৷'' বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ঢাকার চামেলীবাগের একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ দুই সন্তান এবং এক গৃহকর্মীকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন তাঁরা৷
*** জার্মানির গণমাধ্যম নীতিমালা অনুসরণ করে আলোচিত কিশোরীর নাম, ছবি প্রকাশ করা হয়নি৷