সময় মতো ব্যবস্থা নিলে ২০১২ সালে হয়ত ১৩ লাখ তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যেত না৷ তাদের অনেককেই কুড়ে কুড়ে খেয়েছে বিষণ্ণতা৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, বয়ঃসন্ধিকালে পা রাখা অনেকেরই মৃত্যু ডেকে আনছে বিষণ্ণতা৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও-র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সিদের বড় একটা অংশের অসুস্থতার অন্যতম কারণ বিষণ্ণতা৷ অনেক কিশোর-কিশোরীই বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হওয়া মানসিক অসুস্থতা বয়ে বেড়ায় জীবনভর৷ সারা বিশ্বের মানসিকভাবে অসুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত অর্ধেকের মাঝে এই রোগের লক্ষণ দেখা গিয়েছিল বয়স ১৪ পূর্ণ হওয়ার আগে৷ ডাব্লিউএইচও-র পরিবার, নারী এবং শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ফ্লাভিয়া বুস্ত্রেও বলেন, ‘‘কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থের প্রতি বিশ্ব যথেষ্ট মনযোগ দেয়নি৷ মানসিক সমস্যাগ্রস্থ এই কিশোর-কিশোরীদের ঠিকভাবে যত্ন নিলে অনেকের মৃত্যু এবং জীবনভর ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব৷''
স্ট্রেসে আক্রান্ত? তাহলে প্রয়োজন ওয়েলনেস বা রিল্যাক্সেশন
‘ওয়েলনেস’ বলতে সাধারণত বোঝায় রিল্যাক্স করাকে৷ যেমন স্টিমবাথ, মাসাজ, মাস্ক ইত্যাদি৷ আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে যার প্রয়োজন দিনদিন বেড়েই চলেছে৷ আর সে কারণেই ওয়েলনেস শব্দটিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফিটনেস এবং হ্যাপিনেস – অর্থাৎ ওয়েলনেস
বর্তমান যুগে চাকরিতে নানা সমস্যা, সংসার, সন্তান, পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে জীবনটা যেন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে৷ যার ফলে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের শেষ নেই৷ তাই শরীর এবং মন একসাথে সুস্থ রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এই চাপের কারণে মানুষের ভেতর বাড়ছে অস্থিরতা৷ আর এই অস্থিরতাকে যেন কিছুটা কমানো যায় এবং পুরোপুরি ভালো বোধ করা যায়, তার জন্য প্রয়োজন ওয়েলনেস৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
ওয়েলনেস সেন্টার
গত কয়েক বছরে মানুষের জীবনে স্ট্রেসের মাত্রা যেমন বেড়ে গেছে, ঠিক সেভাবেই জার্মানিতে ওয়েলনেস সেন্টারের সংখ্যাও বেড়ে গেছে৷ যেখানে মাসাজ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়৷ মানুষ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো বোধ করতে চায় এবং কী ভাবে তা সম্ভব, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করাই ওয়েলনেস সেন্টারগুলোর কাজ৷
ভালো বোধ করা
‘মানুষ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো বোধ করতে চায় এবং কী ভাবে তা সম্ভব, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা এবং সঠিক পথ দেখানোই ওয়েলনেস সেন্টারগুলোর কাজ’ – বলেন বলেন জার্মানির অল্ডেনবুর্গ শহরের ওয়েলনেস অ্যাকাডেমির মার্গিট কেনেমুন্ড৷
ছবি: Madlens Fotozauber/Margit Kennemund
নানা ব্যবস্থা
ওয়েলনেসের জন্য রয়েছে নানা রকম আলো, তেল, রং, সুগন্ধী, মোম, চা, পানীয়-কত কি! আর সংগীত তো রয়েছেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
চাপ মুক্ত
‘‘ওয়েলনেস হচ্ছে স্ট্রেস বা চাপ মুক্ত করার এক পদ্ধতি৷ কী ভাবে সুস্থ ও সুখী থাকা যায়, কী ভাবে মানুষ ভালো বোধ করে তা শেখায়৷
ছবি: shoot4u/Fotolia
জলকেলি
ওয়েলনেসের ক্ষেত্রে পানির ব্যবহার খুবই উপযোগী৷ ছবি দেখেই বোঝা যায় যে এই পরিবেশ কার না ভালো লাগে!
ছবি: Ahr-Resort/Bad Neuenahr-Ahrweiler
জল আর জল
আহ কি আরাম! এভাবে জলের সাথে খেলা শুধু আনন্দই নয় ভীষণ আরাম৷ সপ্তাহান্তে যে কোনো বয়সিদের জন্যই আনন্দদায়ক ৷
ছবি: ISNA
মাসাজ
সারাদিনের কাজের পর এরকম একটি মাসাজ হলে মন্দ হয়না, তাইনা? চকলেট, নানা ধরনের তেল ফুল, ক্রিম – কত রকম মাসাজ৷
ছবি: Fotolia/putilov_denis
ভালো লাগা
ওয়েলনেস অর্থাৎ সবদিক দিয়ে যেন ভালো ফিল করাকেই বোঝায়৷ পায়ের লোম ভালোভাবে পরিষ্কার করলে যে কোনো হালকা পোশাকেই মেয়েদের দেখতে ভালো লাগে৷ কাজেই এখানে ভালো লাগা বা বোধ করাটাই বড় কথা৷
ছবি: picture-alliance/ZB
মাস্ক
ভালো বোধ করা মানে দেখতে ভালো লাগা অবশ্যই৷ তাই সৌন্দর্যচর্চায় মাস্ককে বাদ দেয়া যায়না৷ যার ত্বকে যেরকম মাস্ক স্যুট করে, বা কার কতটা স্ট্রেস সে রকম একটি মাস্ক ব্যবহারের পরে যে কেউ ভালো বোধ করবে৷ অর্থাৎ আয়নায় নিজের চেহারা দেখে ভালো লাগলেই ভালো বোধ হয়৷
ছবি: Fotolia/Valua Vitaly
হালকা খাবার
শরীর এবং মন ভালো রাখার জন্য যত কিছুই করা হোক না কেন, খাবার যদি স্বাস্থ্যকর না হয়, তাহলে বাকি নিয়মকানুনের আর তেমন কোনো মূল্য নেই৷ ফিটনেস এবং হ্যাপিনেসের জন্য চাই অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
জাতিসংঘের একটি সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে৷ কৈশোর এবং যৌবনের মধ্যবর্তী বয়সিদের ধূমপান, মদ্যপান, মাদক সেবন, এইচআইভি সংক্রমণ, পুষ্টিহীনতা, যৌনতা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সহিংসতাসহ বেশ কিছু বিষয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে৷ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের উচ্চ আয় সম্পন্ন দেশগুলোতেই কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যাজনিত রোগ এবং মৃত্যুর হার বেশি৷
মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন অনুযায়ী না বাড়লেও অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীদের প্রতি মনযোগ বেড়েছে৷ অন্তঃসত্ত্বা হবার পর এবং সন্তান জন্ম দেয়ার সময় মৃত্যুর হার গত চার বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ এ উন্নতি অবশ্য সন্তোষজনক নয়৷ সারা বিশ্বে এখনো সন্তান জন্ম দেয়ার সময়ই সব চেয়ে বেশি কিশোরী মারা যায়৷ নানা কারণে আত্মহননের পথও বেছে নেয় কিশোর-কিশোরীরা৷ ডাব্লিউএইচও-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বয়ঃসন্ধিকালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ প্রসবকালীন জটিলতা, আর তারপরই রয়েছে আত্মহত্যা৷