টিভিতে বিয়ার এবং অন্যান্য মদ্যপানের বিজ্ঞাপণ দেখে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে নিয়মিত অ্যালকোহল পানের নেশা বা আগ্রহ বেড়ে গেছে জার্মানিতে৷ তথ্যটি জানা যায় জার্মানির স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানি ডিএকে এবং কিল শহরের থেরাপি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ইন্সটিটিউট-এর করা এক সমীক্ষা থেকে৷

রাত জেগে জেগে ফেসবুক দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে ওরা৷ ফলে দিনেরবেলায় স্কুলে পুরোপুরি মনোযোগ থাকছে না৷ মোট ৯০০ কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশ সমাজ বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণা থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷ জানা গেছে এরা যে শুধু ক্লান্তই ছিল তা নয়, এদের মধ্যে আনন্দও ছিল কম৷

সম্পূর্ণ সুস্থ ২৫ জন কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে দু’দিন ধরে করা হয়েছিল একটি সমীক্ষা৷ এতে অর্ধেক টি-এজরা পান করেছিল এনার্জি ড্রিংক আর বাকিরা নর্মাল সফট ড্রিং৷ দেখা গেল যারা এনার্জি ড্রিংক পান করেছিল, তাদের প্রেশার অন্যদের চেয়ে বেশি ছিল৷ বলা বাহুল্য, উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷

জাপানি খাবার ‘সুশি’ আজকাল বেশ জনপ্রিয় জার্মনিতে, বিশেষ করে তরুণদের কাছে৷ ভাত এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের তৈরি আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু এই খাবার খেলে নাকি কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে এবং আয়ু বাড়ে৷ দীর্ঘদিন ধরে মোট ৮০ হাজার মানুষকে নিয়ে করা একটি জরিপ থেকে এ তথ্য প্রকাশ করেছে একটি ব্রিটিশ জার্নাল৷

ছোটবেলার জীবনযাত্রাই সম্ভবত এর মূল কারণ৷ জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষক দল৷ তাঁরা জানান, যাদের ছোটবেলা কাটে নিয়ম বা রুটিনমাফিক, তারা বড় হলেও তা মনে চলে৷ আর যারা বাড়িতে অনিয়মে বড় হয়, তারা তাদের পরবর্তী জীবনেও নিয়ম মেনে চলতে পারে না৷

কিশোর বয়সে যাদের তেলতেলে ত্বক, তাদেরই সাধারণত বেশি ব্রণ হয়ে থাকে৷ ব্রণ বিরক্তিকর হলেও এর ভালো দিক রয়েছে৷ এ রকম ত্বক যেমন বুড়ো হয় দেরিতে, তেমনি বলিরেখাও দেরিতে পড়ে৷ লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষকদের করা একটি গবেষণা থেকে এই তথ্য প্রকাশ করে জার্নাল অফ ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজি ম্যাগাজিন৷

কথা বলার সময় যাদের কথা মুখে আটকে যায়, যাদের কথা স্পষ্ট নয় বা যারা খানিকটা তোতলায়, সেরকম বাচ্চাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে জার্মানিতে৷ ২০১৬ সালে এমন শিশুর সংখ্যা জার্মানিতে ছিল ৭১৫ হাজার৷ এদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি৷ জানিয়েছে জার্মানির অন্যতম স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানি বার্মার৷

অনেক মা-বাবা প্রায়ই জানেন না যে তাদের আদরের সন্তান কেমন আছে৷ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ দুর্ঘটনা আর দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে আত্মহত্যা৷ জার্মানিতে প্রায় প্রতিদিনই দু’একজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷

লেনার মা সুজানে বলেন, তাঁর মেয়ে ১৬ বছর বয়সে ব্লেড এবং ছুরি দিয়ে কয়েকবারই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো৷ প্রথমদিকে বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষক কেউ সেটা খেয়ালই করেনি৷ চিঠির বাক্সে লেনার লেখা বিদায়ী চিঠি পেয়ে বুঝেছেন, যে তাঁর মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে, জরুরি সাহায্য বা চিকিৎসার প্রয়োজন৷

হাইডেলব্যার্গ ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের প্রফেসার ড. রমুয়াল্ড ব্রুনার বলেন, যদি কেউ নিজের হাত বা পায়ের রগ কেটে ফেলে বা এ ধরনের কিছু একটা করে বসে, তাহলে বুঝতে হবে এটা ওদের রাগ, দুঃখ বা হতাশার প্রকাশ মাত্র৷

১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয় এবং সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হয়৷ সমীক্ষার ফলাফলে ছেলেদের মধ্যে ৮ জন এবং মেয়েদের মধ্যে ১৮ জন স্বীকার করেছে, তাদের এই ছোট্ট জীবনে অন্তত তিনবার হাত পা কেটেছে, নিজেদের কষ্ট দিয়েছে, তাদের জীবনের দুঃখ, কষ্ট বা হতাশা ভুলে যাবার জন্য৷

আজকের আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকেই যোগাযোগের জন্য বেছে নেয় কৃত্রিম মাধ্যম ইন্টারনেট, ফেসবুক৷ তাদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারনেট নেশাগ্রস্ত৷ এদের অনেকের মতে, মোবাইল ছাড়া জীবন চলাই সম্ভব নয়৷

একথা ঠিক, যে আজকের দিনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে এবং ব্যবহারও হচ্ছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব যোগাযোগ আসল বন্ধু পেতে কোনো কাজে আসেনা৷ বরং এসব বিষণ্ণতার দিকেই ঠেলে নিয়ে যায় এবং ভয় ও আত্মহত্যার চিন্তা করতে সহায়তা করে৷

ছেলে মেয়েদের বসঃসন্ধির সময় ওদের আত্মসম্মানবোধ, অকারণেই মন খারাপ হওয়া বা ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে৷ তবে এ সব সমস্যা যদি ঘনঘন দেখা দেয় বা বাড়াবাড়ি হয়, তাহলে সেটা মানসিক অসুস্থতা বলেই ধরতে হবে এবং চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে, বলেন ড.ব্রুনার৷

কিশোর-কিশোরীদের এই ধরনের সমস্যায় স্কুলের শিক্ষকদের আরো বেশি এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷

মানসিক সমস্যায় শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, ছোট-বড় অনেকেই ভোগে এবং আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়৷ এ ধরনের সমস্যাগুলোর শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা৷

রাগ, দুঃখ বা হতাশা থেকে সহজে বের হওয়ার উপায় শারীরিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে ব্যস্ত থাকা৷ কোনো কাজে যুক্ত হওয়া৷ হতে পারে খেলাধুলা বা যে কোনো ধরনের শরীরচর্চা৷ হতে পারে বাগানের কাজে কাউকে সাহায্য করা, যে কাজ সত্যিকার অর্থেই মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে৷

অ্যামেরিকার হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেল্থ বিভাগে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মোট ৯০ হাজার নারীদের নিয়ে করা গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, যাঁরা অল্প বয়সে ফল ও সবজি খাননি তাঁদের তুলনায়, যাঁরা যথেষ্ট আপেল, কলা, আঙুর, কমলার মতো ফল এবং সবুজ সবজি খেয়েছেন তাঁদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কম৷

ফল বা সবজি চটকে ‘ম্যাশ’ করে বক্সে ভরা যে তৈরি খাবার বাজারে পাওয়া যায়, তা শিশুরা খুবই পছন্দ করে৷ কিন্তু জার্মান খাদ্য বিশেষজ্ঞ বারবারা ক্যোট শিশুদের তৈরি খাবার থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন৷ তাঁর কথায়, এতে লুকিয়ে থাকে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর৷ তাই তিনি বাচ্চাদের জন্য বাড়িতে বানানো ম্যাশ করা তাজা খাবার এবং স্কুলের টিফিনে ফলের তৈরি খাবারের বদলে তাজা ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷

জার্মানিতে ১২ বছর বয়সি কিশোরীদের মধ্যে শতকরা ৫০ জনই নিজেদের ফিগার নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট নয়৷ এই তথ্য বেরিয়েছে কিশোর-কিশোরীদের ম্যাগাজিন ‘ব্রাভো’-তে৷ ১৩ বছর বয়স থেকেই নাকি প্রতি তিনজনের একজন জার্মান কিশোরী নিজের ওজন সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে৷ আর ১১ বয়স থেকে শতকরা দশজনই মডেলদের মতো ফিগারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে৷ তাই তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় তাদের ‘ডায়েটিং’৷

গত দশ বছরে প্রাইমারি স্কুলের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে খেলাধুলা না করার প্রবণতা, মনোযোগ ও আচরণগত সমস্যা অনেকটাই বেড়ে গেছে৷ মা-বাবার প্রত্যাশা, কম্পিউটারের যথেচ্চ ব্যবহার এবং শিশুদের মানসিক চাপই নাকি এ সবের মূল কারণ৷ জার্মানির স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানি ডিএকে-র করা এক সমীক্ষা থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য৷ গবেষণাটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে এক প্রশ্নোত্তর বিষয়ক কর্মসূচির মাধ্যমে করা হয়৷

তিন বছর বয়সেই যেসব মেয়েদের ওজন বেড়ে যায়, ওদের বয়ঃসন্ধিকালের সময় কিছুটা এগিয়ে আসে৷ ৩৫০ জন মেয়েকে নিয়ে অ্যামেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণা থেকে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷