এক জার্মান কিশোরীকে হত্যার দায়ে জার্মানিতে এক অভিবাসনপ্রত্যাশীর সাড়ে আট বছরের কারাদণ্ড হয়েছে৷ এই রায়ের ফলে নতুন অভিবাসন নীতি নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির লানডাউ শহরের আদালত আবদুল ডি. নামের এক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে এ দণ্ড দিয়েছে৷ গত বছর কানডেল শহরের এক কিশোরীকে হত্যার দায়ে তাকে এ দণ্ড দেয়া হলো৷ আবদুলের পূর্ণ পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ধারণা করা হয় তিনি আফগানিস্তান থেকে এসেছেন৷
এই মামলা জার্মানিতে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল৷ রায় ঘোষণার সময় মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের অভিবাসন নীতির বিরোধীরা স্বভাবতই এই সুযোগ লুফে নিয়েছে৷
আবদুল ডি'র আইনজীবী মাক্সিমিলিয়ান এনডের সাংবাদিকদের জানান, আদালতের রায় সঠিক হয়েছে, তাঁর মক্কেলও রায় ‘মেনে নিয়েছেন'৷
তবে এই রায়ে খুশি হননি অনেকেই৷ ৫৩ বছর বয়সি মার্টিন ম্যুলার ডয়চে ভেলেকে জানান, রেডিওতে রায়ের খবর শুনে তিনি ‘স্বতস্ফূর্তভাবেই' আদালতের সামনে হাজির হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনি জানেন কোন অপরাধের কী শাস্তি হওয়া উচিত৷ সাড়ে আট বছর যথেষ্ট না৷''
ক্রিস্টোফ হ্যুকস্ট্যাড্ট নামের আরেকজন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি এটা ঠিক মনে করি না৷ তাকে অন্তত ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া উচিত ছিল৷ এটা একটা খুন৷''
ঈর্ষান্বিত হয়ে হত্যা
১৫ বছরের মিয়া ভি-কে এক ড্রাগস্টোরে তাঁর তখনকার বয়ফ্রেন্ড আবদুল ডি কুপিয়ে হত্যা করে৷ ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ধারালো ছুরি দিয়ে মিয়া-কে সাত বার কোপ দেয়া হয়৷
জার্মানির কেমনিৎসে ডানপন্থিদের বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
এক জার্মান-কিউবান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জার্মানির কেমনিৎস শহরে বিদেশিদের উপর হামলা হয়েছে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরসহ অনেক নেতা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/O. Andersen
জার্মান-কিউবানের মৃত্যু
রবিবার ভোরে জার্মানির কেমনিৎস শহরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডানিয়েল এইচ. নামে ৩৫ বছর বয়সি এক জার্মান-কিউবান নাগরিক ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান৷ পুলিশ বলছে, বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ জন মানুষ এই বিবাদে জড়িত ছিলেন৷ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২২ বছর বয়সি এক ইরাকি ও ২৩ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে৷ ‘যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই’ তারা ডানিয়েলকে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW/B. Knight
বিক্ষোভ ও বিদেশিদের উপর হামলা
ডানিয়েল এইচ. স্থানীয় কয়েকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ফলে তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে রবিবার বিকালে প্রায় ৮০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ এদের মধ্যে চরম ডানপন্থিরাও ছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়েন এবং তাঁরা পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেননি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে আনা হয়৷ এই সময় বিক্ষোভকারীরা পথেঘাটে বিদেশিদের উপর নির্বিচারে হামলাও চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
সোমবারও বিক্ষোভ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সোমবারও কেমনিৎস শহর উত্তপ্ত ছিল৷ সন্ধ্যার সময় প্রায় ২,০০০ চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভে নামেন৷ আর তাঁদের বিক্ষোভের প্রতিবাদে মাঠে নামেন প্রায় ১,০০০ মানুষ (ছবিতে তাঁদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে), যাদের মধ্যে বামপন্থিরাও ছিলেন৷ চরম দক্ষিণপন্থি ও বামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন আহত হন৷ দুই পক্ষ একে অপরের উপর আতসবাজিসহ নানা বস্তু নিক্ষেপ করে৷ ৪ জন চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভকারীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
সরকারের প্রতিক্রিয়া
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে রবি ও সোমবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তিতে যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সঙ্গে এমন আচরণ খাপ খায় না৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনার ফায়দা তুলে বিদেশিবিদ্বেষ ও হিংসা ছড়ানো হয়েছে৷ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, জনতা ভিন্ন চেহারার মানুষকে বাছাই করে হামলা চালাবে, এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
তাণ্ডবের পেছনে ‘ভুয়া খবর’
‘ভুয়া খবর ছড়িয়ে কেমনিৎসে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্যাক্সোনি রাজ্য প্রশাসন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শুধু স্থানীয় চরম দক্ষিণপন্থিরা নয়, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেক রাজ্য থেকে সমমনস্ক মানুষকে কেমনিৎসে আকর্ষণ করা হয়েছে৷ নিহত ডানিয়েল এইচ. নাকি এক নারীর সম্মানরক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
5 ছবি1 | 5
কয়েক মাসের সম্পর্কের পর গত বছরের ডিসেম্বরে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়৷ কিন্তু আবদুল এ বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি৷ বিচ্ছেদের পরপরই মিয়া এবং তাঁর বাবা-মা পুলিশকে জানান, আবদুল নানাভাবে তাঁদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে৷ তদন্তকারীদের ধারণা, সম্পর্ক ভেঙে ফেলায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন আবদুল৷
২০১৬ সালের বসন্তে জার্মানিতে প্রবেশ করেন আবদুল এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে নিবন্ধন করান৷ কর্তৃপক্ষের ধারণা, হত্যাকাণ্ডের সময়ও আবদুল অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন৷ জার্মানিতে হত্যার দায়ে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের জেল৷
অবশ্য আবদুলের বয়স আরো বেশি বলে মনে করেন তদন্তকারীরা৷ আবদুল নিজের বয়স ১৫ বছর দাবি করলেও, বিশেষজ্ঞ মেডিকেল রিপোর্ট বলছে, তার বয়স ১৭ থেকে ২০ বছরের মাঝামাঝি৷ তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবেই ধরে নিয়েছে আদালত৷