কিশোরের সঙ্গে ‘সেক্স' করেছিলেন ‘#মি টু' আন্দোলনকারী
২৬ আগস্ট ২০১৮
‘#মি টু' ক্যাম্পেইনের অন্যতম শক্তিশালী কন্ঠস্বর ইটালীয় অভিনেত্রী আসিয়া আর্জেন্তোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি এক কিশোর অভিনেতার সঙ্গে ‘সেক্স' করেছিলেন৷ ফাঁস হওয়া এক মুঠোফোন বার্তায় বিষয়টি নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদনে জানায় যে, তাদের হাতে কিছু নথিপত্র এসেছে যা থেকে জানা গেছে, এই ঘটনা যাতে প্রকাশ না হয় সেজন্য আদালতের বাইরে অর্থের বিনিময়ে মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন আসিয়া আর্জেন্তো৷ যে মাসে আর্জেন্তো ‘#মি টু' আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হলিউডের প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন, ঠিক তার পরের মাসেই জিম বেনেত আদালতের শরণাপন্ন হন আর্জেন্তোর বিরুদ্ধে তাকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ নিয়ে৷ ঐ অভিনেত্রী ও পরিচালকের বিরুদ্ধে যখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন ‘আউট অফ কোর্ট সেটেলমেন্ট'-এর আওতায় বেনেতকে ৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার দিতে রাজি হন আর্জেন্তো৷ প্রথম দফায় এ বছরের এপ্রিলে তাকে ২ লাখ ডলার দিয়েছেন তিনি৷ তবে চুক্তিতে শর্ত ছিল ,এই ঘটনার কথা কোথাও কখনো উল্লেখ করা যাবে না৷
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হোটেলে আর্জেন্তো ও বেনেতের মধ্যে যৌন মিলন হয়, যখন বেনেতের বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর৷ ২০০৪ সাল থেকেই তারা একে অপরের পরিচিত৷ ঐ বছর আর্জেন্তো পরিচালিত একটি চলচ্চিত্রে শিশু অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন বেনেত৷
রবিবার নিউইয়র্ক টাইমসে ঐ প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ মঙ্গলবার সাংবাদিকরা আর্জেন্তোকে এই অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি ব্যাপারটি বেমালুম অস্বীকার করেন৷ বলেন, বেনেতের সাথে তাঁর সম্পর্কটা বন্ধুত্বের, এর বেশি কিছু নয়৷
ট্রাম্পের হাতে ‘যৌন হয়রানির’ শিকার যত নারী
খবরে এখন এক পর্ন তারকা৷ তাঁর সঙ্গে নাকি যৌন সম্পর্ক ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ কেলেঙ্কারি আরো আছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের৷ অনেক নারীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ দেখুন কত নারী আছে সেই তালিকায়...
ছবি: picture-alliance/S. Moskowitz
স্টর্মি ড্যানিয়েলস
পর্ন স্টার স্টর্মির সাথে ট্রাম্পের সেক্স স্ক্যান্ডাল এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত৷ নির্বাচনের বছরে স্টর্মির সাথে যৌনমিলনের ব্যাপারটি গোপন রাখতে ট্রাম্পের কৌঁসুলিরা তাঁকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন৷ স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে যখন তাঁর বয়স ২৬ ছিল, তখন ট্রাম্পের সাথে তাঁর ১০ মাস প্রেম চলেছে এবং এর মধ্যে একবার তাঁদের যৌনমিলনও হয়৷ আর ঘটনাটি চাপা রাখতেই তাঁকে অর্থ দেওয়া হয়৷ ট্রাম্প অবশ্য এটা অস্বীকার করেন৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
জেসিকা লিডস
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি ভিডিও ব্লগে জেসিকা লিডস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন৷ বলেন, ১৯৮০ সালের কোনো একসময় নিউ ইয়র্কগামী একটি ফ্লাইটে ওঠার পর পাশের সিটে বসা ট্রাম্প তাঁর স্তন চেপে ধরেন এবং স্কার্টের ভেতর দিয়ে হাত ঢোকানোর চেষ্টা করেন৷ সেসময় জেসিকার বয়স ছিল ৩৮ বছর৷
ছবি: Getty Images/M. Schipper
র্যাচেল ক্রুকস
রিয়াল স্টেট কোম্পানির ‘রিসিপশনিস্ট’ হিসেবে কাজ করার সময় ট্রাম্প র্যাচেলকে বিনা অনুমতিতে সরাসরি ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন৷ ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে তিনি এই অভিযোগ করে জানান যে, ঘটনাটি ২০০৫ সালের এবং তখন তাঁর বয়স ছিল ২২ বছর৷
ছবি: Getty Images/M. Schipper
সামান্থা হলভে
সামন্থা ২০০৬ সালে মিস ক্যারোলিনা হয়েছিলেন৷ অ্যামেরিকার বিউটি কনটেস্টেও তিনি অংশ নেন৷ এনবিসি টিভির ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৬ সুন্দরী প্রতিযোগিতা চলার সময় ট্রাম্প সরাসরি প্রতিযোগীদের পোশাক বদলের কক্ষে ঢোকেন৷ তখন তাঁদের বেশিরভাগই নগ্ন ছিলেন বা বাথরোব পরেছিলেন৷ সিএনএনকে সামান্থা বলেন, ‘‘ট্রাম্প আমাদের এমনভাবে দেখছিলেন যেন আমরা এক-একটি মাংসপিণ্ড!’’
ছবি: Getty Images/M. Schipper
সামার জারভোস
২০০৬ সালে ট্রাম্পের রিয়েলিটি শো ‘দ্য প্রিন্টিস’-এ কাজ করতেন সামার জারভোস৷ ২০০৭ সালে একটি কাজের ব্যাপারে ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে যাওয়ার পর ট্রাম্প তাঁকে বিছানায় যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন৷ সামারের অভিযোগ, তিনি বিছানায় যাওয়ার ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ‘‘ট্রাম্প আমার কাঁধে জোরে চাপ দিয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকেন৷ শুধু তাই নয়, আমার বুকে হাত দিয়ে পিষতে থাকেন তিনি৷’’
ছবি: Reuters/M. Blake
ক্রিস্টিন অ্যান্ডারসন
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে ক্রিস্টিন বলেন, ১৯৯০ সালে একটি নাইট ক্লাবে ট্রাম্প তাঁর স্কার্টের মধ্যে জোরপূর্বক হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন৷ ‘‘সে সময় তিনি আমার যোনি পর্যন্ত স্পর্শ করেছিলেন,’’ অভিযোগ ক্রিস্টিনের৷
ছবি: picture-alliance/S. Moskowitz
লিসা বয়ানে
ট্রাম্পের দেওয়া এক পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন লিসা, ১৯৯০ সালে৷ সেখানে ট্রাম্পের সামনে একটা টেবিলে তাঁকে নাচতে করতে বাধ্য করা হয়৷ নীচে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প পোশাকে উঁকি দিয়ে ভেতরটা দেখছিলেন আর ঠিক কী দেখতে পারছেন তা অশ্লীলভাবে বলছিলেন৷ ‘সিক্সটিন উইমেন অ্যান্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প’ নামের এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে এ সব কথা জানান লিসা৷
ছবি: picture alliance/dpa/F. May
জেসিকা ড্রেইক
পর্ন তারকা জেসিকা ড্রেইক ২০১৬ সালে লস এঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত এক প্রেস কনফারেন্সে দাবি করেন যে, ১১ বছর আগে ট্রাম্প তাঁকে জোর করে ধর্ষণ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Nelson
জিল হার্থ
এক সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিজনেস পার্টনার’ ছিলেন জিল হার্থ৷ জিলের অভিযোগ, ট্রাম্প তাঁর দাঁতে জোর করে চুমু খেয়েছেন, নিজের ঠোঁট বুকে ঘষেছেন এবং যৌনাঙ্গে হাত দিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images for New York Weddings/L. Busacca
ক্যাথি হেলার
স্বামী, তিন সন্তান এবং শ্বাশুড়ির সামনে ট্রাম্প তাঁকে চুমু খেয়েছিলেন বলে ক্যাথির অভিযোগ৷ ১৯৯৭ সালে ট্রাম্পের রিয়ালিটি শোতে পরিচিত হওয়ার সময় ট্রাম্প নাকি সবার উপস্থিতিতেই ক্যাথির সাথে ঐ কাণ্ড ঘটান৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
নিনি লাকসোনেন
সাবেক মিস ফিনল্যান্ড নিনি লাকসোনেনের অভিযোগ, ডেভিড লেটারম্যানের সাথে ‘দ্য লেট শো’ নামের একটি অনুষ্ঠানের ঠিক আগে ফটোশুটের সময় ট্রাম্প তাঁর নিতম্বে চাপ দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Haavisto
মেলিন্ডা ম্যাকগিলিভ্রি
২০১৬ সালে মেলিন্ডা পাম বিচ পোস্ট পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৩ সালের জানুয়ারির ২৪ তারিখে একটি অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি৷ তখন ট্রাম্প তাঁর নিতম্বে হাত দেয়৷ ঘটনার সময় মেলিন্ডার বয়স ছিল ২৩ বছর৷
ছবি: Imago/Zumapress
নাতাশা স্টোয়নফ
২০০৫ সালে ‘পিপলস’ ম্যাগাজিনের ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে যান স্টোয়নফ ৷ সেসময় ট্রাম্প তাঁকে বিনা অনুমতিতে চুমু খান৷ সাংবাদিক নাতাশার অভিযোগ, ট্রাম্প তাঁকে দেয়ালের সাথে জোর করে চেপে ধরেন এবং জিভটা ঠোঁটের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Imago/Zumapress
টেম্পল ট্যাগার্ট
অ্যামেরিকার উটা রাজ্যের সাবেক ‘মিস উটা’-র অভিযোগ, ট্রাম্প জোর করে তাঁকে দু’বার চুমু খেয়েছেন৷ ১৯৯৭ সালের মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় একবার এবং আরেকবার ট্রাম্প টাওয়ারে ওই কীর্তি করেন তিনি, অভিযোগ ট্যাগার্টের৷ তখন তাঁর বয়স ২১ বছর ছিল৷
ছবি: Getty Images/M. Coppola
কারিনা ভার্জিনিয়া
১৯৯৮ সালে ইউএস ওপেন টেনিস খেলা দেখে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন কারিনা৷ তখন ট্রাম্প নিজের গাড়ি থেকে নেমে কারিনার বাহু ধরেন এবং বুকে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Getty Images/J. Countess
15 ছবি1 | 15
কিন্তু বুধবার মুখ খোলেন জিমি বেনেত৷ ইনস্টাগ্রামে আর্জেন্তোর সাথে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, তখন তাঁর বয়স অল্প ছিল, তাই এই ঘটনা নিয়ে লজ্জায় এবং ভয়ে মুখ খোলেননি৷ এই অভিনেতা এবং মিউজিশিয়ান লেখেন, ‘‘আমি সবার সামনে নিজের কাহিনি তুলে ধরতে চাইনি, কারণ, ভেবেছিলাম, যে আমার সাথে এই আচরণ করেছে লড়াইটা তার সাথেই হওয়া উচিত৷ আমার মনে হয়েছে, ১৭ বছরের একজন কিশোরের দৃষ্টিতে এটাকে তারা অপরাধ বলে মনে না-ও করতে পারে, বা আমাকে দোষ দিতে পারে৷''
বুধবার রাতে জনপ্রিয় সেলিব্রেটি ওয়েবসাইট ‘টিএমজেড' আর্জেন্তো এবং তাঁর এক বন্ধুর মধ্যে মুঠোফোনালাপ প্রকাশ করে৷ সেখানে কিশোর বেনেতের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন ইটালীয় অভিনেত্রী৷ তবে সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, বেনেত তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বেনেতের বয়স যে তখনো ১৮ হয়নি, সেটা তিনি জানতেন না৷ বেনেতের আইনজীবীর কাছ থেকে নোটিশ পাওয়ার পরই তিনি সেটা জানতে পারেন৷ তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘যখন তার সাথে আমার যৌন মিলন হয়, তখন বিষয়টি আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লেগেছিল৷ মানুষ কিছুই জানে না৷ তাঁরা সেটাই বিশ্বাস করছে, যেটা নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়েছে৷ আসলে বেনেতে পাগলের মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল৷ হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, সেটা ধর্ষণ নয়৷ কিন্তু আমি একেবারেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম৷ সে আমাকে বলেছিল, ১২ বছর বয়স থেকে আমাকে নিয়ে সে নানা কল্পনায় বিভোর থাকত৷'' আর্জেন্তোর বন্ধু প্রশ্ন করেছিলেন, তখন কেন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি তিনি৷ এ প্রসঙ্গে আর্জেন্তো বলেছেন, বেনেত তখন অভিনেতা হিসেবে ব্যর্থ ছিল, তাই তাকে আর দুঃখ দিতে চাননি৷
তবে যখন আদালতের নোটিশ পেলেন, তখন জনগণকে সেকথা জানাতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তাঁর প্রেমিক রাজি হননি৷ বরং আদালতের বাইরে ব্যাপারটি মিটিয়ে ফেলার জন্য তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন৷ মুঠোফোন বার্তায় তিনি অভিযোগ করেছেন, বেনেত তখন থেকে আর্জেন্তোর নগ্ন ছবি পাঠিয়ে বিরক্ত করছে৷
আসিয়া আর্জেন্তো হরর চলচ্চিত্র পরিচালক দারিও আর্জেন্তোর মেয়ে৷ ইটালির কট্টর ডানপন্থি নেতা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনির কঠোর সমালোচক তিনি৷