নেশা নানারকমের হতে পারে৷ সারা দুনিয়ার কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের পক্ষে আজ সবচেয়ে বড় ‘অ্যাডিকশন' হলো সম্ভবত কম্পিউটার-স্মার্টফোন-অনলাইন-ইন্টারনেটের নেশা৷ কিন্তু তা থেকে বাঁচারও উপায় আছে৷
বিজ্ঞাপন
সবচেয়ে বড় ‘অ্যাডিকশন’ কী?
03:18
এরিকের নেশা ছিল জার্মানে যাকে বলে ‘সকেন' – মানে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত যা-কিছু: ভিডিও গেম, চ্যাটিং, সারাক্ষণ অনলাইন থাকা৷ এক কথায়, বার্লিনের ২০ বছরের এই তরুণটি ছিল ইন্টারনেট আসক্ত; তার সারা জীবনটা জুড়ে ছিল কম্পিউটার আর স্মার্টফোন৷
এরিক শোনাল, ‘‘আমার রেকর্ড হলো একবারও না থেমে বিশ ঘণ্টা৷ বাথরুমে যাওয়ার জন্য যেটুকু সময় – তবে খাওয়াদাওয়া সব কম্পিউটারের সামনে৷ সকালে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত – আসলে প্রায় পরদিন সকাল অবধি৷''
স্কুল, বন্ধুবান্ধব, সামরিক সেবার পরিবর্তে এক বছর পরিবেশ সেবা, সব কিছু ছেড়ে দেয় এরিক – কেননা তার আর ওসবের জন্য সময় ছিল না৷ তার দিন কাটত সাইবার জগতে৷
‘‘তখন আমি খেয়াল করলাম যে, আমার সাহায্য দরকার, নিজেকে বদলানো দরকার; নয়তো আমি গোল্লায় যাব৷''
প্রথমে এরিক নিজেই চেষ্টা করেছে: কম্পিউটার বাক্সবন্দি করে ভাঁড়ারে রেখে দিয়েছে৷ শিগগিরই এরিক খেয়াল করে যে, শুধু এ সব করে হবে না৷ তখন সে একটা কাউন্সেলিং সেন্টারে যায়৷
প্রযুক্তি ব্যবহারের মন্দ দিক
ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, আইফোন ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কত সুবিধাই না আমরা আজকাল ভোগ করছি৷ তবে অন্য সব কিছুর মতো এ সবেরও মন্দ দিক আছে বৈকি! গবেষকদের জানানো সেরকমই কিছু তথ্য পাবেন ছবিঘরে৷
ছবি: Cover/Getty Images
ইয়ারফোনে গান শোনা দুর্ঘটনার কারণ
প্রায়ই দেখা যায় আজকালকার তরুণরা কানে ইয়ারফোন লাগিয়েগান শুনতে শুনতে রাস্তায় চলাফেরা করছে৷ কানে ইয়ারফোন থাকায় অনেক সময় রাস্তার সতর্ক সংকেত বা গাড়ি, সাইকেলের শব্দ শুনতে পায় না তারা৷ ফলে ঘটে অ্যাক্সিডেন্ট৷ এ কথা জানান জার্মান হাসপাতালগুলোর জরুরি বা ‘এমারজেন্সি’ বিভাগের ‘ট্রমা সার্জারি’-র প্রফেসার রাইনহার্ড হফমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Ossinger
ছবি তোলাতেই যেন বেশি আনন্দ!
যে কোনো ধরনের স্মৃতিকেই মানুষ ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে চায়৷ বিশেষ করে, দেশ-বিদেশে ঘুরতে বা বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই! কিন্তু ছবির প্রতি সমস্ত মনোযোগ দিতে গিয়ে পর্যটকরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর ছবি তোলার জায়গাগুলোর কথা আর সেভাবে মনে করতে পারেন না৷ সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স ম্যাগাজিন থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডিসপ্লে থেকে জীবাণু যায় শরীরে
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা আইফোন ছাড়া যেন আজকাল কারুর চলেই না৷ যদিও এ সবে অসংখ্য জীবাণু, ছত্রাক আর ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে৷ এই জীবাণু থেকেো কিন্তু আপনি অসুস্থ হতে পারেন৷ বিশেষ করে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি৷ তাই এগুলো নিয়মিত পরিস্কার রাখা জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
ইন্টারেনেটে বই পড়া
বই হাতে নিয়ে পড়াটা যেন আজকাল উঠেই যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে৷ আসলে আজকাল যে ইন্টারনেটে মুহূর্তের মধ্যেই সব রকম তথ্য পাওয়া যায়৷ অবশ্য আরাম করে বই হাতে নিয়ে পড়ার থেকে ইন্টারনেটে পড়লে যে বেশি ক্লান্ত বোধ হয়, তা অনেকেই হয়ত স্বীকার করবেন৷ আর এ কথাটিই প্রমাণ করেছেন জার্মানির ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷
ছবি: AndreyPS - Fotolia.com
কফি মেশিনে জীবাণু!
আজকাল নানা ধরনের কফি মেশিন পাওয়া যায় আর খুব সহজেই নানা স্বাদের কফি তৈরি করা যায়৷ একেক মেশিনের একেকটি বোতামে টিপ দিলে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কফি বেরিয়ে আসে৷ দেখলেই অবাক লাগে, তাই না? কিন্তু সেই মেশিনই নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে রয়েছে জীবাণুর ভয়৷ তাই সাবধান!
ছবি: Cover/Getty Images
5 ছবি1 | 5
মুক্তির পথ
‘‘বাড়িতে মায়ের সঙ্গে খালি চেঁচামেচি – আমি খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ছেড়ে গেছি, ১৫ বছর বয়স থেকে একা ঘর নিয়ে থেকেছি৷ স্কুলেও আগে সবাই আমাকে ঠাট্টা করত, জ্বালাত – আমার পক্ষে যা প্রায় অসহ্য ছিল৷ তারপর যখন বাড়িতে আসতাম, তখন কম্পিউটারটা যেন আমার জন্য অপেক্ষা করত: গেমস খেলতে শুরু করলেই সমস্ত খারাপ চিন্তা, ভালো লাগা না-লাগা, সব যেন ঢাকা পড়ে যেত৷ সেটাই তখন অভ্যেস হয়ে দাঁড়ায়৷''
এরিক ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্ত হতে চায়, তাই সে একটি ক্লিনিকে দু'মাস ধরে থেকে থেরাপি করছে, অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে তো বটেই, আবার একক থেরাপিও চলে৷ এখন সে অনেক ভালো বোধ করছে৷ ‘‘এখনও বেশ অদ্ভুত লাগে৷ আগের তুলনায় মনে হয় যেন আমার কিছু একটা নেই৷ তবে ভেতরের ঐ তাড়নাটা আর অত নেই, বলে আমার ধারণা – মন ভালো করার জন্য কম্পিউটার, স্মার্টফোন, অনলাইন আর অত জরুরি নয়৷''
ইতিমধ্যে এরিক অন্যভাবে সময় কাটাতে শিখেছে – অ্যানালগ ও রিয়্যাল টাইমে৷ এখন সে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার চেয়ে খেলাধুলা করে৷ তার একটা নতুন হবি জুটেছে: এরিক এখন নিজেই কমিক আঁকে; এই পন্থায় তার চাপা পড়া আবেগ-অনুভূতিগুলো একটা নতুন অভিব্যক্তি পায়৷
কম্পিউটার, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন ছাড়া বেঁচে থাকা সহজ নয়, বিশেষ করে যখন সে প্রলোভন সর্বত্র৷ সেই হিসেবে এরিককে এখনও ‘ক্লিন' বলা চলে না!
রোভোল্ট/ভিটেক/এসি
মোবাইল ফোনে আসক্ত? বুঝবেন যেভাবে...
স্মার্টফোনে অতি আসক্তি এক ধরণের রোগ৷ যাঁরা মোবাইল হাতে না থাকলে অস্থির হয়ে যান, বিজ্ঞানীরা বলছেন তাঁরা ‘নোমোফোবিয়া’-য় আক্রান্ত৷ চিনে নিন এ রোগের কিছু লক্ষণ৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
ব্যাটারির চার্জ ফুরালেই আতঙ্ক
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কিছু মানুষের মধ্যে স্মার্টফোনের আসক্তির এমন তীব্রতা লক্ষ্য করেছেন যা রীতিমতো বিস্ময়কর৷ তাঁরা দেখেছেন, কিছু লোক মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, যেন মোবাইল বন্ধ হয়ে গেলে জীবনই অচল৷ এমন হলে বুঝতে হবে আপনিও নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বা অচিরেই হবেন৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
ইন্টারনেট-নির্ভরতা
কিছু লোক ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে নারাজ৷ স্মার্টফোনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জানলেই ওয়াই-ফাই জোন-এ যাওয়ার জন্য তাঁরা হা-হুতাশ শুরু করেন৷ এমন সবারও মোবাইল আসক্তি বাড়তে বাড়তে ‘নোমোফোবিয়া’-র সীমা ছুঁয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schutt
ইন্টারনেট থাকতেই হবে?
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে সবার আগে কী কী জানতে চান? ‘‘ওখানে ইন্টারনেট আছে?-’’এই প্রশ্ন করেন? যদি মনে হয়, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই সেখানে বেড়াতে যাওয়া একদম উচিত নয়, তাহলে ‘নোমোফোবিয়া’ আপনাকেও গ্রাস করছে৷
ছবি: Colourbox
‘স্ট্যাটাস’ না দিতে পারলে হতাশ
ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে প্রতিদিন ‘স্ট্যাটাস’ না লিখলেও অনেকের একদমই চলে না৷ মনে হয়, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করা হয়নি৷ এমন হওয়াটাও খারাপ কথা, তখন বুঝতে হবে ‘নোমোফোবিয়া’ আপনাকেও পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei
আরেক ‘সর্বনাশ’
ধরুন, ফোন করতে পারছেন না, এসএমএস-ও না, ফোন বা এসএমএস আসছেনওনা আপনার কাছে৷ কী হয় তখন? স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও খুব অসহায় লাগে? তাহলে আপনাকে নিয়েও চিন্তা আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রিচার্জ করাতে পারেননি....
প্রি-পেইড সিম ব্যবহার করেন এমন অনেকে ফোনের ‘ক্রেডিট’ শেষ হলে, অর্থাৎ ফোন বা এসএমএস করার উপায় না থাকলেই মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে যান৷ তখন মনে রাখতে হবে, মোবাইল ফোন ছাড়া এক সময় পৃথিবীর সবারই জীবন চলতো, এ যুগেও কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকটা দিন নিশ্চয়ই চলবে৷
ছবি: PeJo/Fotolia
ঘুমের সময় অন্তত অন্য কিছু ভাবুন.....
স্মার্টফোনে মানুষ এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে যে কারো কারো রাতে মোবাইল ফোনে একটা হাত না রাখলে ঠিকমতো ঘুমই হয় না৷ নোমোফোবিয়া-র চূড়ান্ত লক্ষণ এটা৷ সুতরাং এই অভ্যাস ছাড়ুন৷