গোটা ইউক্রেনে আকাশপথে হামলা সম্পর্কে সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ কিয়েভ এলাকায় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ পোপ ফ্রান্সিস গোপন শান্তি মিশনের উল্লেখ করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার ভোরে রাশিয়া আবার ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়েছে৷ গোটা দেশ জুড়েই আকাশপথে হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ রাজধানী কিয়েভ এলাকায় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ মানুষকে শান্ত অবস্থা নিরাপদ শেল্টারে আশ্রয় নেবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ সেইসঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের ঘটনা দেখলে সে বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখার আবেদন করেছে কর্তৃপক্ষ৷ মোট ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১৫টি ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে বলে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷ সেনাবাহিনীর প্রধান ভালেরিই জালুজনিয়ি টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছেন যে, রাত আড়াইটে নাগাদ রুশ হানাদার বাহিনী হামলা শুরু করেছে৷ তবে এখনো পর্যন্ত হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কোনো খবর পাওয়া যায় নি৷ ইউক্রেনের সংবাদ মাধ্যম দ্নিপ্রোপেট্রভস্ক ও সুনি অঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে, যদিও সেই খবর নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায় নি৷
রাশিয়া-অধিকৃত ক্রাইমিয়া উপদ্বীপে সেভাস্টোপোল শহরে জ্বালানির গুদামে ড্রোন হামলার প্রতিশোধ নিতে রাশিয়া সোমবার হামলা চালাচ্ছে কিনা, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়৷ অধিকৃত এলাকা পুনর্দখল করতে ইউক্রেন বড় সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন ধারণা আরও জোরদার হতে থাকায় রাশিয়া আগেভাগেই ইউক্রেনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে৷ রাশিয়ার ভাগনার ভাড়াটে বাহিনীর প্রধান প্রিগোশিন মে মাসের মাঝামাঝি ইউক্রেনের অভিযানের আশঙ্কা করছেন৷ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁর বাহিনীর জন্য যথেষ্ট গোলাবারুদ না সরবরাহ করলে চরম ‘বিপর্যয়' সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি৷ এমনকি বাখমুত শহরের উপরেও নিয়ন্ত্রণ আলগা হয়ে পড়বে বলে প্রিগোশিন হুমকি দিয়েছেন৷
বহু প্রতিক্ষিত সামরিক অভিযান সম্পর্কে ইউক্রেন নীরবতা বজায় রাখছে৷ তবে এমন পালটা আঘাতের জন্য যথেষ্ট অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে সে দেশ মরিয়া হয়ে উঠেছে৷ অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও ন্যাটো ও পশ্চিমা বিশ্ব এফ-১৬-এর মতো উন্নত যুদ্ধবিমান এখনো সরবরাহ করে নি৷ রোববার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ-র সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন৷ ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর চাহিদা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে৷
এদিকে পোপ ফ্রান্সিস রোববার জানিয়েছেন যে, ভ্যাটিকান সিটি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাত বন্ধ করতে এক মিশন চালাচ্ছে৷ তিন দিনের হাঙ্গেরি সফর শেষে রোমে ফেরার সময়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, যে শান্তি ফেরাতে যা কিছু সম্ভব, তিনি তা করতে প্রস্তুত৷ তবে শান্তি মিশন সম্পর্কে পোপ এখনই এর বেশি কিছু বলতে নারাজ৷ পোপ ফ্রান্সিস কিয়েভ ও মস্কো সফরের আগ্রহও প্রকাশ করেছেন৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
বিধ্বস্ত ইউক্রেনে যেমন কাটছে জীবন
কবে, কিভাবে শেষ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জানা নেই কারো৷ অনেকেই আক্রান্ত এলাকা থেকে সরে গিয়েছেন৷ অনেকে ছেড়েছেন ইউক্রেন৷ কিন্তু অনেকেই বিধ্বস্ত ইউক্রেনেই মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
ধ্বংসপ্রাপ্ত দালান
গালিনা স্লেপকোর বয়স ৬৪ বছর৷ এই বয়সে ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করাটাও তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷ রাশিয়ার দখল করে নেয়া দনেৎস্ক অঞ্চলে তার এই বাড়িটির এক পাশের দেয়াল রাশিয়ার মর্টার শেলের আঘাতে ধসে গেছে৷ এই অবস্থাতেই তাকে কাটাতে হয়েছে শীতকাল৷
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
পুরো ইউক্রেন যুদ্ধটাই যেন থেমে আছে বাখমুতে৷ কৌশলগতভাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মর্যাদার লড়াইয়ের কারণে এই এলাকা দখলে নিতে চায় দুই পক্ষই৷ বাখমুতের চাসিভ ইয়ার গ্রামে এখনও হাতেগোণা কয়েকজন বাসিন্দা রয়ে গেছেন জীবনের ঝুঁকির তোয়াক্কা না করেই৷ তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ
যেকোনো সময় পালটে যেতে পারে পরিস্থিতি৷ দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুতে এখন চলছে চূড়ান্ত লড়াই৷ দুই পক্ষের সেনারাই দখল-পুনর্দখলের চেষ্টায় রত৷ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের সুপারমার্কেটে এসে পড়েছে একটি মর্টার শেল৷ আগে এক হামলায় আহত এক নারীকে দেখা যাচ্ছে কান্না করতে৷ বাখমুতে এখন প্রতিটি মুহূর্তই জীবন-মরণের লড়াই৷
ছবি: ALEXANDER ERMOCHENKO/REUTERS
সরবরাহ সংকট
যুদ্ধের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট দেখা দিয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ ও জলের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সেবাও এখন বিলাসিতা৷ হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই প্রয়োজন মিটিয়ে কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই করছেন বাসিন্দারা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বিধ্বস্ত সামরিক বিমান থেকে ধাতব দ্রব্য নিয়ে যাচ্ছেন দুজন৷ সেটিকেই কোনো কাজে লাগানোর চিন্তা রয়েছে তাদের৷
ছবি: OLEKSANDR KLYMENKO/REUTERS
একটি রক্তাক্ত চশমা
এই ছবিটিই অনেক কথা বলে দেয়৷ কস্তিয়ানতিনিভকা নামের একটি আবাসিক এলাকায় ভয়াবহ বোমা হামলায় মারা যান অনেকেই৷ কেউ ছিলেন বাসায়, কেউ বাজারে, কেউ রাস্তায়৷ হয়তো একজন বাসিন্দার রক্তমাখা চশমা এখনও পড়ে রয়েছে মাঠের পাশে৷ পৃথিবীকে আর দেখা হবে না তার৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
জ্বালানি সংকট
ঠিক পেছনেই একটি গাড়ি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে৷ এখন বাখমুতের রাস্তায় গাড়ি চালানো অনেক কারণেই আঁতকে ওঠার কারণ৷ একে তো জ্বালানি জোগাড় করাই কষ্ট ও ব্যয়সাধ্য৷ অন্যদিকে, যেকোনো সময় হতে পারে মর্টার বা বিমান হামলা৷ ফলে রাস্তায় বের হয়ে কেউই নিশ্চিত টার্গেটে পরিণত হতে চান না৷ ফলে দোকানে যেতেও বেশিরভাগের ভরসাই নিজের পা, বড়জোর বাইসাইকেল৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
ত্রাণ সহায়তা
প্রায় পুরো অঞ্চলই ধ্বংসপ্রায়৷ ফলে বাখমুতের সকল অফিস-আদালত, দোকানপাট প্রায় বন্ধ৷ যেসব গুটিকয়েক দোকান খোলা রয়েছে, অনেকেই সেখান থেকে জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই৷ ফলে যেসব বাসিন্দা এখনও বাখমুতে রয়ে গেছেন তাদের অনেকের নির্ভর করতে হচ্ছে ত্রাণের ওপর৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ঝুঁকি নিয়েই যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
জীবন-মৃত্যুর দোলাচল
এই ছবিটি খারকিভের৷ রাশিয়া দখলে নেয়ার পর ইউক্রেনের সেনারা আবার এই এলাকা পুনর্দখলে নিয়েছে৷ কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি দখলে মরিয়া রুশবাহিনী৷ ফলে এখনও প্রায়ই বোমাবর্ষণ চলছে এখানে৷ রুশ মিসাইলে ধ্বংস হওয়া একটি বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী৷ মনে ভয়, যেকোনো মুহূর্তে আবারও হতে পারে নির্বিচার হামলা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
প্রিয়জন হারানোর বেদনা
একসঙ্গেই থাকা, একসঙ্গেই কাজ৷ কদিন আগেও বন্ধুর চেয়েও বেশি ছিলেন ইভান সোরোকিনের সহকর্মী৷ কর্মরত অবস্থাতেই বিমান হামলায় মারা যান এই গাড়ি মেরামতকর্মী৷ বন্ধুকে শেষ বিদায় জানানোর আগে তার মরদেহ আনা হয়েছে তার কাজের জায়গাতেই৷