ইউক্রেনের সেনা সতর্কবার্তায় বলেছে, কিয়েভ দখলের অন্তিম লড়াই শুরু করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার গোলায় আরো সাধারণ মানুষের মৃত্যু।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের সেনা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, কিয়েভের কাছে ইরপিন শহরে ক্রমাগত গোলাবর্ষণ করছে রাশিয়া। শুধু সেনা ছাউনি নয়, সাধারণ মানুষের বাড়িতেও বোমা মারা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। গোলার আঘাতে একই পরিবারের মা এবং দুই ছেলের মৃত্যুর কথা সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। বেসরকারি সূত্রের দাবি গোলার আঘাতে নিহতের সংখ্যা অনেক গুণ বেশি।
এদিকে ইউক্রেনের সামরিক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, কিয়েভের আশপাশের সমস্ত শহর ঘিরে ধরে রাশিয়া রাজধানীর উপর চাপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। কিয়েভ আক্রমণের অন্তিম লড়াইয়ে নেমেছে রাশিয়ার সেনা। কিন্তু ইউক্রেনও পাল্টা জবাব দিচ্ছে। রাশিয়া যত সহজে কিয়েভ দখল করবে ভেবেছিল, বাস্তবে তা সম্ভব হচ্ছে না।
রাশিয়া কি ভ্যাকিউম বোমা ব্যবহার করছে?
অ্যামেরিকায় ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত অভিযোগ করেছিলেন, রাশিয়া ভ্যাকিউম বোমের মতো মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে।
ছবি: Anton Vergun/TASS/dpa/picture alliance
ভ্যাকিউম বোমা কী
নিউক্লিয়ার বোমা নয়। কিন্তু প্রায় তার কাছাকাছি ক্ষতি করতে পারে ভ্যাকিউম বোমা। একটি গোটা অঞ্চলকে মুহূর্তে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে এই বোমায়।
ছবি: Leonid Faerberg/ZUMAPRESS/picture alliance
কীভাবে তৈরি হয়
এই বোমায় ১০০ শতাংশ তেল বা ফুয়েল ব্যবহার করা হয়। সাধারণ বোমায় তেলের সঙ্গে অক্সিডেন্ট পার্টিকেল ব্যবহার করা হয়। ভ্যাকিউম বোমায় তা হয় না। বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নেয় এই বোমা।
ছবি: Konstantin Mihalchevskiy/SNA/imago images
বোমার মারণ ক্ষমতা
এই বোমা ছুঁড়লে প্রথমে তা বিরাট মাপের বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর বাতাসে তেলের একটি চাদর তৈরি হয়। সেই চাদর বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নিয়ে ফের বিস্ফোরণ ঘটায়। চারদিক কার্যত জ্বলে যায়।
যে এলাকায় এই বোমা ফাটানো হয়, সেখানে কারও পক্ষে বাঁচা সম্বব নয়। আশপাশের অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
ছবি: Irina Rybakova/REUTERS
রাশিয়া কি এই বোমা ব্যবহার করছে
সিএনএন প্রথম একটি রিপোর্টে জানায়, রাশিয়া এই বোমা ব্যবহার করছে। রাশিয়ার টিওএস-১ ট্যাঙ্ক দেখা গেছে। যে ট্যাঙ্ক এই বোমা ছুঁড়তে পারে।
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
কোথায় হয়েছে বিস্ফোরণ
ইউক্রেনের ওখতিরকা শহরে রাশিয়া এই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা ফুটেজ দেখেছে। কিন্তু এখনো ওই বোমাই ফাটানো হয়েছিল কি না, তা প্রমাণ হয়নি। তবে এই বোমা ফাটানো যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে বলে তারা জানিয়েছে।
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিস্ফোরণের ইমপ্যাক্ট দেখে মনে হচ্ছে, রাশিয়া ভ্যাকিউম বোমাই ব্যবহার করেছে।
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
ইউক্রেন পরিস্থিতি
ইউক্রেন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। কিয়েভ, খারকিভ-সহ একাধিক শহরে ব্যাপক লড়াই চলছে। আরো ভয়াবহতার হুমকি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। কিয়েভের মেট্রো স্টেশনেও রাশিয়ার সেনা ঢুকে পড়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি।
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
8 ছবি1 | 8
বস্তুত, যুক্তরাজ্যের সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, রাশিয়া পরিকল্পনামতো এগোতে পারেনি। তারা ভেবেছিল, অনেক আগেই কিয়েভ দখল করে ফেলবে। কিন্তু তাদের যথেষ্ট প্রতিরোধের সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, রাশিয়া সিরিয়ার যোদ্ধাদের এই লড়াই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। সিরিয়ান স্ট্রিট ফাইটাররা ইউক্রেনে ঢুকে পড়েছে বলে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। যদিও রাশিয়া বা ইউক্রেন কোনো পক্ষই এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
গ্লোবাল নিউক্লিয়ার ওয়াচ একটি বিষয় নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। তাদের বক্তব্য, ইউক্রেনের দুইটি প্রধান পরমাণু চুল্লি এখন রাশিয়ার দখলে। এর মধ্যে চেরনোবিলের খুব কাছ দিয়ে রাশিয়া তেল সরবরাহ করছে। বেলারুশ থেকে সেই তেল নিয়ে আসা হচ্ছে। যে কোনো সময় পরমাণু চুল্লিতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে লড়াই যে আরো দীর্ঘ হবে, তা মোটামুটি স্পষ্ট। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত হামলা থামবে না। আর রাশিয়ার দাবি কোনোভাবেই মানবে না ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।