রোববার কিয়েভ-সহ অনেক শহরে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। রাশিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেনও ড্রোন হামলা করেছে।
ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলবা করেছে রাশিয়া। ছবি: Ukrainian Emergency Service/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিসচিকো জানিয়েছেন, ''রাশিয়া মিসাইল হামলা করেছে। এয়ার ডিভেন্স সিস্টেম চালু আছে। সকলে যেন ঘরের ভিতরে থাকেন।''
তিনি জানিয়েছেন, ''কিছু বাড়ি ও গাড়িতে আগুন লেগেছে। তবে সেই বাড়িতে কেউ বসবাস করেন না।''
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে মস্কো ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে। উত্তরে চের্নিহিভ অঞ্চলে তারা হামলা করেছে। দক্ষিণের শহর মাইকোলাইভে রাশিয়া ড্রোন হামলা করে। দুইটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শহর ক্রিভি রিয়া আক্রান্ত হয়। সেখানে ১৮ জন মারা গেছেন।
জেলেনস্কি বলেছেন, এই হামলা নিয়ে মার্কিন মনোভাবে তিনি হতাশ ও অবাক।
এই ড্রোনগুলি কুরস্ক, বেলগোরোদ, রস্তভ অঞ্চলে পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
রাশিয়ার দাবি, ড্রোন আক্রমণে কোনো ক্ষতি হয়নি।
রাশিয়া দাবি করেছে, তারা পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে দুইটি গ্রাম দখল করে নিয়েছে।
জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া সম্পূর্ণ নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়। সেটা নিয়ে অ্যামেরিকার প্রতিক্রিয়ায় তিনি হতাশ।
রাশিয়ার মিসাইলে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের শিশু হাসপাতাল
ইউক্রেনের পাঁচটি শহরে আবার মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷ হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতাল৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানান, হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন ১৪০ জন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
বিধ্বস্ত শিশু হাসপাতাল
রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের অকমাডিট শিশু হাসপাতাল৷ এটিই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল৷ মিসাইলের আঘাতে হাসপাতাল ভবনটির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সেখানে কর্মরত চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
ভীতিকর পরিস্থিতি
ভীতিকর পরিস্থিতি
হামলার সময়কার ভীতিকর অবস্থান বর্ণনা করেছেন চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া৷ তিনি বলেন, যখন মিসাইল এসে হাসপাতালে আঘাত হানে তখন পুরো বিষয়টি ‘সিনেমার দৃশ্যের’ মতো মনে হচ্ছিল৷ তিনি ‘ভয়ঙ্কর তীব্র আলো’ দেখতে পেয়েছিলেন জানিয়ে আরো বলেন, ‘‘এর পরপরই বিকট এবং ভীতিকর শব্দ শুনতে পাই৷’’ হামলায় হাসপাতালের একটি অংশ গুঁড়িয়ে গেছে, অন্য অংশে আগুন ধরে যায় বলেও জানান তিনি৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
মোট নিহত ৩৬, হাসপাতালে ২
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানিয়েছেন, কয়েকটি শহরের এ হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন আরো ১৪০ জন৷ কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো জানিয়েছেন, মিসাইল হামলায় হাসপাতালের এক চিকিৎসকসহ দুই ব্যক্তি মারা গেছেন৷ উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানিয়েছেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কেউ আটকা থাকতে পারেন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
থমকে গেছে চিকিৎসাসেবা
রাশিয়ার হামলায় থমকে গেছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা৷ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের দ্রুত কাছের হাসপাতালগুলোতে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় একটি টিভি চ্যানেলকে জানিয়েছে, যে ওয়ার্ডটিতে মিসাইল আঘাত হেনেছে সেখানে অন্তত ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
দায় অস্বীকার রাশিয়ার
বিবিসি জানিয়েছে, হাসপাতালে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে রাশিয়া৷ উল্টো ইউক্রেনের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে তারা৷ রাশিয়া দাবি করছে, হাসপাতালটি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইলের একটি অংশের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ কিন্তু ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে৷
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
গণহত্যার অভিযোগ
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে গণহত্যার চালানোর অভিযোগ এনেছেন কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে রাশিয়ার মিসাইল ও ড্রোন কিভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ শহরকে তছনছ করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের হত্যা করেছে৷’’ রাশিয়ার হামলায় একটি মাতৃ ও প্রসূতি হাসপাতালও আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, সেখানে অন্তত সাত জন মারা গেছেন৷
ছবি: STATE EMERGENCY SERVICE OF UKRAINE/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি জেলেনস্কির আহ্বান
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লিখেছেন, রাশিয়ার ছোঁড়া বিভিন্ন ধরনের ৪০টিরও বেশি মিসাইল কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভিই রি, স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরে আঘাত করেছে৷ ইউক্রেনের জনগণ, ভূমি ও শিশুদের উপর রাশিয়ার এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: EPA/MICHAEL BUHOLZER
7 ছবি1 | 7
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ''ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবে রাজি। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এখনো রাজি হননি। আমরা এখনো অ্যামেরিকার প্রতিক্রিয়ায় অপেক্ষায় আছি। এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।''
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা ইউরোপের প্রতিক্রিয়ায় অপেক্ষায় আছেন। এছাড়া বিশ্বের যে দেশগুলি শান্তি চায়, তারাও তাদের প্রতিক্রিয়া জানাক বলে তিনি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিার উপর সব ধরনের চাপ দিয়ে যেতে হবে।
রাশিয়া যুদ্ধবিরতি না মানলে কড়া ব্যবস্থা, বললেন মাক্রোঁ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, ''রাশিয়া যদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয় বা কালক্ষেপ করতে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে।''
তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। রাশিয়া সমানে বেসামরিক মানুষ ও শিশুদের উপর হামলা করে যাবে এটা হতে পারে না।
মাক্রোঁ বলেছেন, রাশিয়া আবার তাদের আক্রমণ তীব্র করেছে। বেসামরিক মানুষের প্রতি তাদের কোনো চিন্তা নেই।
ক্রিভি রিয়াতে রাশিয়ার হামলায় নয়জন বাচ্চা মারা যায়। তার মধ্যে তিন বছর বয়সি একটি বাচ্চাও আছে।