একসময় দেশে সবজির ভেতর পোকা দেখলে মানুষকে বিরক্ত হতে দেখেছি৷ কিন্তু ইউরোপে এসে জানলাম ভিন্ন কথা৷ ফলমূল, সবজিতে একটু-আধটু কীটের উপস্থিতি নাকি মন্দ কিছু নয়৷
বিজ্ঞাপন
সার আর কীটনাশক দেয়া ফলমূল, সবজিতে এখন বাংলাদেশের বাজার সয়লাব৷ সেগুলো দেখতে সুন্দর, সহজে পচে না, আকার, আকৃতি একেবারে ক্রেতার মন মতো হয়৷ ফলে ক্রেতা সেটা কেনেন এবং খুশি মনে খান৷
বছরের প্রায় ছয়মাস চলনবিল পানিতে ডুবে থাকে৷ তবে শীতকালে শুকানোর পর সেই বিলের জমিতে বোরো আবাদ করেন কৃষকরা৷ কদিন আগে ধান ঘরে তুলেছেন তাঁরা৷ চলনবিলে ধান কাটার উৎসব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
ব্যস্ত কৃষক
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিলে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক৷ গ্রামে ধান কাটায় এখনো আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না৷ ছবিটি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিল নাদুয়া থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাঠেই সকালের খাবার
চলনবিলে ফসল কাটার মাঝে সকালের খাবার খাচ্ছেন কৃষকরা৷ সাধারণত সূর্য ওঠার আগে থেকেই এখানে ধান কাটা শুরু হয়৷ তাই কৃষকরা সকাল আর দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে আসেন৷ কাজের ফাঁকে মাঠেই সেরে ফেলেন খাবার পর্ব৷
ছবি: DW/M. Mamun
মহিষের গাড়ির কদর বেশি
চলনবিলের রাস্তাঘাট এখনো খুবই অনুন্নত৷ একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু কাদায় ভরে যায় কাঁচা সড়কগুলো৷ এ অঞ্চলে মাঠ থেকে ধান আনার জন্য তাই মহিষের গাড়ির কদর বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
কাটা ধান নিয়ে বাড়ি ফেরা
চলনবিলের ভেতর থেকে মহিষের গাড়ি বোঝাই কাটা ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন মজুররা৷ ফসল তোলার সময় এসব মজুররা ধান কাটার জন্য আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী অঞ্চল থেকে৷ সঙ্গে নিয়ে আসেন নিজেদের মহিষের গাড়িও৷ সাধারণত এক বিঘা জমির ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিলে এসব মজুররা দেড়মন ধান পেয়ে থাকেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
পরিবেশবান্ধব বাহন
চলনবিলে ধান বহনের জন্য মহিষের গাড়ি ব্যবহারের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো এ বাহনটিতে অনেক বেশি মাল বোঝাই করা যায় এবং এতে কোনো জ্বালানি খরচ নাই৷ মোটের উপর পরিবেশবান্ধব এক বাহন এটি৷ অধিকন্তু কাঠের চাকা হওয়ায় যে-কোনো দুর্গম রাস্তাতেই চলতে সক্ষম এ বাহন৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাথায় নিয়েই ফেরা
ধানের মাঠ থেকে যে কৃষকদের বাড়ি অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বে তাঁরা মাথায় করেই নিয়ে আসেন কাটা ধান৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ির আঙিনায় মাড়াই
চলনবিলে ধান কাটার পর মাড়াই পর্বটা সম্পন্ন হয় বাড়ির আঙিনাতেই৷ এ কাজে বাড়ির পুরুষদের পাশাপাশি নারী সদস্যদের ভূমিকাও থাকে অনেক বেশি৷ আগে এ অঞ্চলে গরু কিংবা হাত দিয়েই মাড়াই করা হতো৷ কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি যন্ত্র দিয়ে ফসল মাড়াই করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারীর ভূমিকা
মাড়াই শেষে ধান থেকে ময়লা সরাচ্ছেন চলনবিলের গৃহিনীরা৷ মাঠ থেকে ধান কেটে আনার পর চাল তৈরি পর্যন্ত সবকটি পর্যায়েই নারী সদস্যদের ভূমিকা থাকে বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ধান সিদ্ধ
ধান মাড়াই শেষে সিদ্ধ করছেন চলনবিলের গৃহিনীরা৷ এ কাজটিও মূলত বর্তায় গৃহিনীদের উপরই৷ ধান সিদ্ধ করার কাজে ব্যবহৃত জ্বালানিও আসে ধান থেকেই৷ এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ধানের খড় কিংবা তুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
অবশেষে চাল
সবশেষে ধান ভাঙানোর কাজ চলছে চলনবিলের একটি বাড়িতে৷ ফসল কাটার মৌসুমে ধান ভাঙানোর ভ্রাম্যমাণ কল নিয়ে বাড়িতেই হাজির হন অনেকে৷ এক মন ধান ভাঙাতে কৃষকদের গুনতে হয় ২০-২৫ টাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে জৈব কৃষি আন্দোলন শুরু হয়েছে৷ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় গত বছরের জুলাইয়ে প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে শোনানো হয়েছে আশার কথা৷ জৈব কৃষি পদ্ধতিতে জমির সার এবং কীটনাশক তৈরি হয় জৈব পন্থায়, অর্থাৎ রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করে৷
অরগ্যানিক বা জৈব উপায়ে উৎপাদিত সবজি ও ফলমূলের গুণও অনেক৷ সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, এর ফলে অনেক বিষাক্ত রাসায়নিক খাওয়া থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব৷ কেননা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত খাবারে যেসব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে বিভিন্ন মাত্রার রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে৷ অধিকাংশক্ষেত্রেই যে মাত্রায় এগুলো ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ মনে রাখতে হবে, কীটনাশকযুক্ত ফল ধুলেই ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য চলে যায় না৷
জৈব উপায়ে উৎপাদিত ফলমূল, সবজিতে নিউট্রেন্ট, মিনারেল, এনজাইম এবং মাইক্রোনিউট্রেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে৷ ফলে পুষ্টির অভাব অনেকটাই মিটতে পারে অর্গানিক খাদ্যে৷ পাশাপাশি এভাবে উৎপাদিত খাবারে স্বাদও ভালো হয়৷
আরো যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, জৈব কৃষি পরিবেশের জন্য উপকারী৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে ক্ষতির শিকার বাংলাদেশের মাটি ও পানি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থেকে রক্ষা করতে চাইলে তাই এই পন্থা উপকারী৷ ফলে নিজের সন্তানদের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের কথা যারা ভাবছেন তারা বেছে নিতে পারেন অরগ্যানিক খাবার৷ আর সেখাবারে একটু-আধটু পোকা যদি থেকেও যায় নিশ্চিন্তে সেটা খেতে পারেন৷ এতে ক্ষতির কিছু নেই৷
আপনি কি আরাফাতুল ইসলামের সঙ্গে একমত? আপনার মতামত জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷