কীটনাশকের বদলে জমিতে হাঁস ব্যবহার করছেন জাপানের কৃষকরা৷ আর এতে দারুণ ফল পাচ্ছেন৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তৈরি করা একটি প্রতিবেদনে তেমনটিই দেখা যাচ্ছে৷ মাত্র একদিন আগে পোস্ট করা ভিডিওটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে৷
বিজ্ঞাপন
কীটনাশকের বদলে জমিতে হাঁস ব্যবহার করছেন জাপানের কৃষকরা৷ আর এতে দারুণ ফল পাচ্ছেন৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তৈরি করা একটি প্রতিবেদনে তেমনটিই দেখা যাচ্ছে৷ মাত্র একদিন আগে পোস্ট করা ভিডিওটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে৷
‘ব্রেড ডাক' নামে পরিচিতি বিশেষ প্রজাতির একটি হাঁস ফসলের জমিতে কীটনাশকের ভূমিকায় ভীষণ কার্যকরী৷ তাদেরকে ধান ক্ষেতে ছেড়ে দেন চাষীরা৷ আর তারা তখন জমির সব পোকামাকড় এবং আগাছা খেয়ে সাফ করে ফেলে৷ কিন্তু ধান গাছগুলোর কোনো ক্ষতি করে না৷
কেবল আগাছা নয়, আগাছার বীজ পর্যন্ত খেয়ে ফেলে এই হাঁসগুলো৷ তাই পরবর্তী মৌসুমে ঐ জমির আগাছা খুব কম হয়৷ এই পদ্ধতিতে বেড়ে ওঠা ফসল ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও টিকে থাকার লড়াইয়ে অন্যদের চেয়ে শক্তিশালী হয়৷
এর ফলে কৃষকরা রাসায়নিক সার ও ব্যবহার করেন না, যা পরিবেশের জন্য খুবই ভালো৷ কেবল একটাই অসুবিধা, যখন হাঁসগুলো খুব মোটা হয়ে যায়, তখন শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পারায় ধান গাছগুলোকে মাড়িয়ে দেয়৷ তাই প্রতি বছর নতুন হাঁসের প্রয়োজন হয়৷ তবে কেবল জাপানেই নয়, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, এমনকি ইরানেও এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়৷
সোমবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফেসবুক পাতায় ভিডিওটি পোস্ট করা হয়৷ প্রতিবেদনের সূত্র হিসেবে ‘বিবিসি'র নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ৯ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে ভিডিওটি৷ শেয়ার হয়েছে ৩০ হাজার বার৷
ফ্রান্সের এক অন্যরকম কৃষকের কথা
ইউরোপের সবচেয়ে বড় কৃষি অর্থনীতির দেশ ফ্রান্স৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই সেখানকার কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করেছেন৷ কিন্তু ব্যতিক্রম এই জ্যঁ-ব্যার্না উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
বলদ দিয়ে হালচাষ
গরু কিংবা ষাঁড় দিয়ে জমি চাষের দৃশ্য গ্রামবাংলায় এখনো দেখা গেলেও ইউরোপের সবচেয়ে বড় কৃষি অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সে সেটি বিরল এক দৃশ্য৷ তাই তো জ্যঁ-ব্যার্না উয়োঁ যখন নিজের বলদ নিয়ে জমিতে নেমে পড়েন, তখন তা একটু অস্বাভাবিকই ঠেকে সেখানে৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
শুরু থেকেই এমন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়৷ কিন্তু বর্তমানে ৭০ বছর বয়সি উয়োঁ শুরু থেকেই এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিরুদ্ধে ছিলেন৷ তাই ষাঁড় দিয়ে জমি চাষের পাশাপাশি আটটি গরুর দুধ দোয়ান হাত দিয়ে, আটাও তৈরি করেন হাতে৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
‘আমি সুখী’
নিজের জীবনযাপন নিয়ে খুশি উয়োঁ৷ তাই তো তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন পুরোপুরি সুখী মানুষ৷ আমি কখনোই ধনী ছিলাম না, কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না৷ আজকালকার কৃষকদের অনেক জমি আর পশু আছে৷ কিন্তু তাই বলে যে তাঁরা সবাই সুখী, তা নয়৷ তাদের অনেক সমস্যা আছে৷’’ উয়োঁর বাড়ির ছবিটি দেখে কেমন সুখী, সুখী লাগছে কি?
ছবি: Reuters/S. Mahe
নিজ বাড়িতে বিক্রি
উয়োঁর সব পণ্য প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত৷ তবে পণ্য বিক্রির জন্য তিনি এগুলোর গায়ে অর্গানিক লেভেল লাগাতে রাজি নন৷ কোনো সুপারমার্কেটেও তিনি তাঁর উৎপাদিত পণ্য দেন না৷ শুধু কেউ যদি তাঁর বাড়িতে যায়, তাহলে তাঁদের কাছে শূকর কিংবা বাছুরের মাংস, মাখন ইত্যাদি বিক্রি করেন উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
উয়োঁর সঙ্গী
ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলের রিয়েক-স্যুর-বেলোঁ এলাকায় উয়োঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে থাকেন লরেন্স৷ দু’জনে মিলেই খামার সামলান৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
বয়সের কারণে
এতদিন যন্ত্রের সহায়তা না নিলেও বয়সের কারণে একসময় শারীরিক অক্ষমতাকে তো মেনে নিতেই হয়৷ উয়োঁর ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে৷ তাই সম্প্রতি দু’টি ট্রাক্টর কিনেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
অন্যের সমালোচনা নয়
যে কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতি আর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করছেন, তাঁদের সমালোচনা করতে রাজি নন উয়োঁ৷ কারণ, প্রয়োজনের তাগিদেই তাঁরা এসব করছেন বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘ভাবতে পারেন, একটু গ্লাইফোসেট দিলেই আপনাকে আর আগাছা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না!,’’ বলেন উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
উত্তরসূরি
উয়োঁ না হয় যন্ত্রপাতি ছাড়াই কৃষিকাজ করে জীবন কাটিয়ে দিলেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর খামার চলবে কীভাবে? তিনি জানালেন, খামারটি বিক্রি না করে কাউকে দান করে দেবেন৷ তবে উত্তরসূরীর পক্ষে তাঁর মতো করে চলা সহজ হবে না বলে মনে করেন উয়োঁ৷