নেদারল্যান্ডস থেকে আসা ডিম পরীক্ষা করে ফিপ্রোনিল নামের এক রাসায়নিকের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ এই বিষাক্ত রাসায়নিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তা কিডনি, লিভার এবং থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে৷

ফিপ্রোনিলের ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে বমিভাব হওয়া, পেটের ব্যাথা, খিঁচুনি৷ তবে চিকিৎসকরা শিশুদের ব্যাপারে বিশেষ সাবধান থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন৷ ফিপ্রোনিলে দূষিত ডিম দিনে দু’টি খেলে শিশুর মৃত্যুঝুঁকিও হতে পারে৷

মুরগির শরীরে উকুন ও এঁটেল পোকার আক্রমণ ঠেকাতে ব্যবহার হয় ফিপ্রোনিল৷ ধারণা করা হচ্ছে কীটনাশকে অতিরিক্ত ফিপ্রোনিল ব্যবহারের কারণে ডিমেও পড়েছে এর প্রভাব৷ তবে তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, খামার পরিষ্কার করতে যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকেও ছড়াতে পারে ফিপ্রোনিল৷

ইউরোপে ডিম এবং ডিমজাত খাদ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ নেদারল্যান্ডস৷ প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটির মতো ডিম উৎপাদন করে দেশটি৷ এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই রপ্তানি হয় ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে৷

বিষাক্ত হতে পারে, এমন আশংকা থেকে শুধু নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্য থেকেই ৯ লাখ ডিম প্রত্যাহার করেছে জার্মান কর্তৃপক্ষ৷ কর্তৃপক্ষের আশংকা বিষাক্ত প্রায় ৩০ লাখ ডিম ঢুকে পড়েছে জার্মানির বাজারে৷ ডিমের জার্মান সুপারমার্কেট চেইন আলডি দেশের সব শোরুমে ডিম বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করেছে৷ জার্মানিতে আলডির প্রায় ৪০০০ শোরুম রয়েছে৷

জার্মানির এমন পদক্ষেপকে অবশ্য ‘বাড়াবাড়ি’ বলছেন নেদারল্যান্ডসের খামারিরা৷ তাদের দাবি, এরই মধ্যে সব বিষাক্ত ডিম ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে৷ এখন বাজারে যে ডিম যাচ্ছে, তার সবই পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে৷ ফলে এখন ডিম খেতে আর কোনো ভয় নেই বলে দাবি করছেন তারা৷

একটি ডিমের কুসুমে গড়ে ২৫০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা কিনা ধমনীর রক্ত জমাট হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হয়৷ আর এ কথা ভেবে অনেকেই খাবারের তালিকা থেকে ডিম পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেন৷ জার্মানির ডায়েবেটিস ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. মাটিয়াস রিডল জানান, ডিম খেলে প্রতিটি মানুষেরই যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাবে তা ভাবা মোটেই ঠিক নয়৷

গত কয়েক বছরের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল নিজে থেকে স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ দিনে একটি ডিম খেলে শরীরের ক্ষতি তো হয়ই না, বরং ডিম শরীরকে ফিট রাখে৷ জানান ড. রিডল৷

প্রতিদিন একটি করে ডিম খেয়েছেন এ রকম এক হাজার পুরুষকে নিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ইউনিভারসিটি অফ ইস্টার্ন ফিনল্যান্ডের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাদের কারোই হার্ট অ্যাটাক বা স্টোকের ঝুঁকি বাড়েনি৷

প্রায় একই রকম তথ্য জানা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা এপিডস্টারের কাছ থেকে৷ ১৯৮২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৫০,০০০ মানুষকে নিয়ে করা হয়েছিল গবেষণা এবং সে গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, হৃদপিণ্ডে ডিম খাওয়ার নেতিবাচক কোনো প্রভাব তো পড়েইনি বরং তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে শতকরা ১২ ভাগ৷

ডিমে রয়েছে উঁচু মানের প্রোটিন, যা শক্তির জোগান দেয় এবং স্লিম রাখে৷ ডিম যেমন শরীরের পেশিকে শক্ত করে, তেমনি কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে৷

সকালে দুটো ডিম খেলে তা প্রায় পাঁচ ঘন্টা পেট ভরা রাখে৷ শুধু তা-ই নয়, ডিম মিষ্টি জাতীয় কোনো কিছু খাওয়ার আগ্রহকে দমন করে৷ তাই ডা. রিড বললেন, ওজন কমাতে আগ্রহীদের জন্য ডিম খুব উপকারী৷

ডিমে রয়েছে জিঙ্ক, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো জরুরি মিনারেল, যা প্রতিটি শরীরের জন্য প্রয়োজন৷ এই মিনারেলের একটি কম হলেই শরীর ক্লান্ত লাগে এবং মানুষ সহজে অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ তাছাড়া এসবের অভাবে শরীরে নানা ইনফেকশন, চুল পড়া বা থাইরয়েডের মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়৷

ডিমে একমাত্র ভিটামিন ‘সি’ ছাড়া সব ভিটামিনই রয়েছে৷ ডিমে থাকা ভিটামিন এ, ডি এবং ই শরীরের ইমিউন সিস্টেম ঠিক রাখার জন্য খুবই জরুরি৷ তবে যারা ডিমের পুরো ভিটামিন পেতে চান, তাদের জন্য খাঁচায় পোষা মুরগির চেয়ে খোলা ক্ষেতে ঘুরে বেড়ানো মুরগির ডিমই বেছে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞের৷

সম্প্রতি জার্মানির ভল্ফেনব্যুটেল শহরের একটি মুরগি সবচেয়ে বড় ডিম পেড়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে৷ ডিমটির ওজন ছিল ২০৯ গ্রাম! পৃথিবীতে আর কোথাও মুরগি এত বড় ডিম পাড়েনি৷

হ্যাঁ, কারো কারো কাছে ডিম খুব ভীতিকর বস্তু৷ ডিম ভয় পান এমন ব্যক্তিদের মধ্য বিশ্বখ্যাত তারকাও আছেন৷ হলিউডের কিংবদন্তিতুল্য পরিচালক আলফ্রেড হিচককও ডিম ভয় পেতেন৷ ডিমের মতো ‘নিরীহ’ বস্তু ভয় পাওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে একবার তিনি বলেছিলেন, ‘‘সাদা ওই বস্তু যাতে কোনো ছিদ্র নেই... ডিমের কুসুমের চেয়ে বিরক্তিকর কোনো জিনিস কোনোদিন দেখেছেন?’’ ৮১ বছরের জীবনে একটাও ডিম খাননি আলফ্রেড হিচকক৷

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিম ‘ফাব্যার্জ এগ’৷ এটি অবশ্য মানুষের তৈরি নকল ডিম৷ রাশিয়ার প্রখ্যাত জুয়েলার পেটার কার্ল ফাব্যার্জ-এর ডিজাইনে তৈরি বলে এর নাম ‘ফাব্যার্জ এগ’৷ মণিমাণিক্য খচিত এ ধরণের কৃত্রিম ডিমের দাম নিলামে কয়েক মিলিন ডলারও ওঠে৷

প্রাচীনকালে রোমের মানুষ ভাগ্য জানতে ডিমের শরণাপন্ন হতেন৷ এ যুগেও যে অদৃষ্টবাদী সব মানুষ ডিমের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তা কিন্তু নয়৷ এখনো কোনো কোনো দেশে পানিতে ডিম ছেড়ে ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা করে মানুষ৷ অনেকে আবার ডিমের খোসা বা কুসুম দিয়েও নিজের জীবন থেকে আপদ-বালাই দূরে রাখার চেষ্টা করেন৷

ইউটিউবে ডিম কিভাবে ভাঙতে হয়, কিভাবে ডিমের কুসুম ফেটতে হয়- এসব দেখিয়েও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অনেকে৷ ডিম জনপ্রিয়, তাই ডিম বিষয়ক ভিডিওগুলোও খুব জনপ্রিয়৷