‘ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, যোগাযোগের কেন্দ্র ও জনসংযোগকারী' – এভাবেই নিজের কাজকে একবাক্যে ব্যাখ্যা করেন জার্মান জাতীয় দলের কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ৷ ইটালি ও ব্রাজিলের পর তাঁর সামনেই এখন পরপর দু'বার বিশ্বজয়ের হাতছানি৷
বিজ্ঞাপন
একে একে বারো বছর কেটে গেছে৷ প্রায় যতটা সময় আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মানির চ্যান্সেলর, ততটা সময়ই তিনি দেশটির জাতীয় দলের কোচ৷ সেই চুক্তি আরো বেড়েছে৷ এই বিশ্বকাপের পরের বিশ্বকাপ অর্থাৎ ২০২২ সাল পর্যন্ত কাগজে কলমে অন্তত তিনি দলের সবচেয়ে গুরুদায়িত্ব পালন করবেন৷
এরই মধ্যে দেশের কাছ থেকে পেয়েছেন ফেডারেল ক্রস অফ মেরিট-এর সম্মান৷ জিতেছেন ফিফার বর্ষসেরা কোচের উপাধি৷ দু'বার জিতেছেন বিশ্বের সেরা জাতীয় কোচের পুরস্কার৷ তাই তাঁকে এবার এগিয়েই যেতে হবে, কারণ নতুন কিছু পাবার জন্য নয়৷ বরং কিছু যেন হারাতে না হয় সেইজন্যে৷
আশায় বুক বেঁধেছেন জার্মানির সেরা গোলরক্ষক
01:06
‘সম্ভাবনাময় দল'
‘‘২০১৪ সালের বিশ্বকাপ একটি অর্জন ছিল, কিন্তু মাইলফলক নয়'', বলেন এই ৫৮ বছর বয়সি৷ কারণ, এই একটি অর্জনই সব নয়৷ তিনি তাই অর্জন করতে চান যা এর আগে কেবল ইটালির কোচ ভিটোরিও পোৎসোই অর্জন করতে পেরেছিলেন৷ তা হলো, কোচ হিসেবে দলকে পরপর দু'বার বিশ্বকাপ জেতানোর গৌরব অর্জন৷
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন সহজ কথা নয়৷ প্রচুর পরিশ্রম দরকার৷''
‘‘আপনি যখন সাফল্য পেতেই থাকেন, তখন আপনি কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন৷ এমনকি সাফল্য পাওয়ার ক্ষুধাও আপনার মধ্যে কমে যেতে পারে৷ পড়তে বেশি সময় লাগে না৷''
ল্যোভ মনে করেন তাঁর দলের এখনো অনেক সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো দলে প্রচুর সম্ভাবনা দেখি৷ এদের সঙ্গে কাজ করতে এবং আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে আমি খুব উদ্দীপ্ত বোধ করি৷''
জাতীয় দলের কোচ হিসেবে তিনি স্বস্তি পান৷ কারণ, ক্লাব ফুটবলের প্রতি সপ্তাহের চাপ তাঁকে নিতে হয় না৷ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ বা বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তেই শুধু চাপ থাকে৷ তার আগে তিনি মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে এগোতে থাকেন৷
‘‘আমরা সবসময়ই উদাহরণ তৈরি করতে চাই৷ তাই আমাদের চোখ ভবিষ্যতের দিকে৷ মাঝে মাঝে এমন সব পরিকল্পনা মাথায় আসে, যা এখন পাগলের প্রলাপ বলে মনে হতে পারে৷ তবে আমরা জানি যে, একদিন সেটিই করব৷''
তাহলে কি রাশিয়া বিশ্বকাপেও তেমন ‘বিশেষ' কোনো কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি? হতেও পারে৷ তবে দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কিন্তু কিছুটা হতাশাব্যঞ্জক৷ বিশ্বকাপের দাবিদার চার দল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন ও ব্রাজিলের বিপক্ষে ভালো করতে পারেনি তারা৷ তিনটি ড্র ও একটি পরাজয়৷ তবে হতাশ হলে চলবে না৷
সবাই জানে যে, জার্মানি হলো টুর্নামেন্টের দল৷ সেখানেই তারা ভালো করে৷
ল্যোভ এই বিশ্বকাপের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে বসেছেন অন্তত দু'বছর আগে৷ ‘‘পরিকল্পনা ছাড়া সাফল্য আসবে না৷ পরিষ্কার ধারণা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে গেলেই কেবল অনেক দূর পৌঁছানো সম্ভব৷'' ল্যোভ বলেন ডিডাব্লিউকে৷
তিনি বোঝেন, ব্যর্থতার জন্য খুব কম সুযোগই ছাড়তে হবে৷ তবে শেষতক ভাগ্যকেও সুপ্রসন্ন হতে হবে৷ তাই ‘ফিঙ্গার ক্রস্ড'৷
সারাহ ভিয়ার্ৎস/জেডএ
উত্তেজনার সেই মুহূর্তগুলো
মনে আছে রবার্তো বাজ্জোর সেই ফ্রি-কিকের কথা? মনে পড়ে, ১৯৯৪ বিশ্বকাপের সেই কালজয়ী ফাইনাল? এমন টানটান উত্তেজনা ইতিহাসে বিরল৷ চলুন ঘুরে আসি ১৯৩০ থেকে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের মাঠ থেকে৷
ছবি: imago sportfotodienst
১৯৩০
প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল৷ উরুগুয়ের মন্টিভিডিওতে স্বাগতিকরা মুখোমুখি আর্জেন্টিনার৷ ছবিটি আর্জেন্টাইনদের জালে উরুগুয়ের প্রথম বল ফেলার মুহূর্তের৷ আর্জেন্টিনাকে সেবার ২-৪ ব্যবধানে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামায় ১৯৪২ ও ১৯৪৬ এর বিশ্বকাপ দু’টি অনুষ্ঠিত হয়নি৷ এই আসর বসেছিল ব্রাজিলে৷ একমাত্র এই বিশ্বকাপেই কোনো ফাইনাল হয়নি৷ ১৩টি দলের অংশগ্রহণ থেকে শেষে শীর্ষস্থান নির্ধারণী ম্যাচে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতে উরুগুয়ে৷
ছবি: picture-alliance/ASSOCIATED PRESS
১৯৫৪
হেলমুট রানের পশ্চিম জার্মানিকে উল্লাসই মানায়৷ জমজমাট এক ফাইনালে ৩-২ গোলে তারা হাঙ্গেরিকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা ঘরে তোলে৷ সুইজারল্যান্ডের বার্নে হয়েছিল এই ফাইনাল ম্যাচটি৷
ছবি: AP
১৯৫৮
এই বিশ্বকাপে সারাবিশ্ব এক সদ্য কৈশোর পেরুনো তরুণকে দেখেছিল৷ নাম তার পেলে৷ ছবিটি স্বাগতিক সুইডেনকে ফাইনালে ৫-২ গোলে হারিয়ে ব্রাজিলের প্রথম শিরোপা জেতার মুহূর্তে তোলা৷ পেলে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে গোলরক্ষক গিলমার দস সান্তোসের কাঁধে মুখ লুকিয়ে কাঁদছিলেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
১৯৬২
পেলে অধ্যায় শুরু হয়েছে আগের বিশ্বকাপের আগেই৷ এ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচেই চেকদের বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েন পেলে৷ কিন্তু গারিঞ্চাসহ দলের অন্য সদস্যরা দলকে টেনে নিয়ে যান ফাইনালে৷ সেখানে চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জেতে তারা৷
ছবি: AP
১৯৬৬
ইংল্যান্ড একবারই বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেয়েছে৷ সেটিও ১৯৬৬ সালে৷ ছবিতে তৎকালীন অধিনায়ক ববি মুরকে জুলে রিমে ট্রফিতে চুমু খেতে দেখা যাচ্ছে৷ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে জার্মানিকে হারায় ইংলিশরা৷
ছবি: Getty Images
১৯৭০
আবারো ব্রাজিল৷ আবারো জুলে রিমে ট্রফি৷ ইটালিকে ফাইনালে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেন পেলে, কার্লোস আলবার্তোরা৷ তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে জুলে রিমে ট্রফিকে চিরদিনের জন্য নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/G. Foggia
১৯৭৪
ফাইনালে হল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় পশ্চিম জার্মানি৷ ছবিতে বেকেনবাওয়ারকে দেখা যাচ্ছে ট্রফি হাতে৷
এই বিশ্বকাপেই তরুণ মারাদোনা পা রাখেন বিশ্বকাপে৷ কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ড পার হতে পারেনি তাঁর দল৷ পশ্চিম জার্মানিকে ফাইনালে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেবার শিরোপা জেতে ইটালিয়ানরা৷
ছবি: dapd
১৯৮৬
এই বিশ্বকাপেই জাদু দেখিয়েছেন ফুটবলের জাদুকর মারাদোনা৷ নিজে গোল করেছেন৷ গোল করিয়েছেনও৷ ইতিহাসের সেরা দু’টি গোল, একটি ‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে গোল ও আরেকটি মাঝমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের বেশ ক’জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে, করেছেন এই বিশ্বকাপে৷ ফাইনালে আর্জেন্টিনা পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয়৷
ছবি: imago sportfotodienst
১৯৯০
এই বিশ্বকাপের ফাইনালেও আর্জেন্টিনা মুখোমুখি পশ্চিম জার্মানির৷ মারাদোনার দল ১-০ গোলে হেরে যায় লোথার ম্যাথিউস-ক্লিন্সমানদের জার্মানির কাছে৷ তবে রেফারিং, ফাউল ও খেলোয়াড়দের অসহিষ্ণুতার কারণে এটি সবচেয়ে কুৎসিত বিশ্বকাপ ফাইনালের তকমা পেয়েছে৷
ছবি: STAFF/AFP/Getty Images
১৯৯৪
এই বিশ্বকাপের ফাইনালটিই বোধ হয় এ যাবৎ সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল৷ নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য থাকার পর ব্রাজিল ও ইটালির ম্যাচটি গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে৷ সেখানে প্রথম চারটির তিনটিই প্রতিপক্ষের জালে ফেলে ব্রাজিল৷ আর ইটালি দু’টি৷ পঞ্চম কিকটি ছিল ইটালিয়ান তারকা বাজ্জোর৷ কিন্তু তিনি উত্তেজনাতেই কি না গোলবারের ওপর দিয়ে বল মারেন৷ ফলে চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলে ব্রাজিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৯৯৮
স্বাগতিক ফ্রান্স ও জিনেদিন জিদানের বিশ্বকাপ এটি৷ জিদানের জাদুতে বিশ্বকাপ জেতে ফ্রেঞ্চরা৷ ফাইনালে রোনাল্ডো, রিভাল্ডো, কার্লোস, ডুঙ্গাদের মতো তারকা খেলোয়াড় নিয়ে গড়া ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারায় জিদানের ফ্রান্স৷ জিদান নিজেই করেন দুই গোল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Euler
২০০২
কোরিয়া ও জাপানে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপের ফাইনালে রোনাল্ডোর জোড়া গোলে পঞ্চম শিরোপা জিতে ব্রাজিল৷ ফাইনালের প্রতিপক্ষ ছিল জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/ASA
২০০৬
এই বিশ্বকাপেও জিদানের ফ্রান্স ফাইনাল খেলে৷ কিন্তু এই ফাইনালটিও কুৎসিত হয় জিদানেরই কারণে৷ প্রতিপক্ষ ইটালির ডিফেন্ডার মাতেরাৎসিকে মাথা দিয়ে গুঁতো মেরে লালকার্ড দেখেন তিনি৷ তার আগেই এই দু’জনই নিজ নিজ দলের পক্ষে একটি করে গোল করেন৷ পরে খেলা অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায়৷ সেখানে ৫-৩ গোলে হারে ফ্রান্স৷
ছবি: John MacDougall/AFP/Getty Images
২০১০
দক্ষিণ আফ্রিকায় শাকিরার তুমুল জনপ্রিয় ‘ওয়াকা ওয়াকা’ থিম সংয়ের এই বিশ্বকাপে টিকি টাকা ফুটবল খেলে পুরো আসর মাতিয়েছে স্পেন৷ জোহানেসবার্গের ফাইনালে ডাচদের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময় শেষের চার মিনিট আগে গোল করে স্পেনের শিরোপা নিশ্চিত করেন তারকা মিডফিল্ডার ইনিয়েস্তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৪
গত বিশ্বকাপে মেসির দিকেই চোখ ছিল সবার৷ কিন্তু মেসি আর্জেন্টিনাকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি৷ সেই দুঃখে তো দেশের পক্ষে খেলাই ছেড়ে দেবার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি৷ সে যাই হোক, পরে ফিরে এসেছেন৷ জার্মানি তাদের চতুর্থ শিরোপাটি ঘরে তোলে এ বছর৷ ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গ্যোৎসের করা গোলে জয় নিশ্চিত করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
20 ছবি1 | 20
আপনার প্রিয় দল কোনটি? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷