1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কী আছে মাসুদ রানার ভাগ্যে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ জুন ২০২০

কয়েক দশক ধরে জনপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র অধিকাংশ বইয়ের লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন নয়, শেখ আবদুল হাকিম৷ কপিরাইট অফিসের এই ঘোষণার পর দুই পক্ষই আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ শেষ পর্যন্ত কার হবে মাসুদ রানা?

ছবি: Partho Sanjoy

রবিবার কপিরাইট অফিস এক আদেশে বলেছে, মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমের৷ এতদিন পাঠকরা জানতেন, মাসুদ রানা সিরিজের সব বইয়ের লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন আর তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সেবা প্রকাশনী৷ তাই এই খবরে পাঠকরাও ধাক্কা খেয়েছেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷
কিন্তু কাজী আনোয়ার হোসেন কপিরাইট অফিসের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আদেশের মূল কপি হাতে পেলেই আপিল করবো৷ আমি পক্ষপাতের শিকার৷’’
কিন্তু শেখ আবদুল হাকিম এখন তার ওই সব বইয়ের বিপরীতে পাওনা টাকা চান আর তা যদি না দেয়া হয় তাহলে তিনিও আদালতে যাবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যদি সমঝোতা হয়, তাহলে আর মামলার প্রয়োজন হবে না৷ আমি তো আমার প্রাপ্য টাকার জন্য আইনের আশ্রয় নিতেই পারি৷’’
কপিরাইট অফিসের মূল কথা হলো, লেখকস্বত্ব কখনোই বিক্রয় বা ক্রয়যোগ্য নয়৷ কেউ ব্যবসার স্বত্ব কিনতে পারেন, প্রকাশনাস্বত্ব কিনতে পারেন, কিন্তু লেখকস্বত্ব নয়৷ একজনের লেখা আরেকজনের নামে ছাপা বা প্রকাশ বেআইনি৷ একজনের মেধাস্বত্ব আরেকজনের হতে পারে না৷ ফলে মাসুদ রানা সিরিজ নিয়ে কপিরাইট আইনের ৭১ এবং ৮৯ ধারা লঙ্ঘন হয়েছে৷

আমি পক্ষপাতের শিকার: কাজী আনোয়ার হোসেন

This browser does not support the audio element.

কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেছেন, ‘‘কপিরাইট আইনে এর সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু কপিরাইট অফিসের কারাদণ্ড দেয়ার ক্ষমতা নেই৷ এই শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে প্রচলিত আদালতে যেতে হবে৷ ক্ষতিপূরণের মামলাও হতে পারে৷ আর শেখ আব্দুল হাকিমকে এই রায়ের ভিত্তিতে প্রতিটি বইয়ের আলাদা করে কপিরাইট নিবন্ধন করতে হবে৷’’
এ পর্যন্ত মাসুদ রানা সিরিজের ৪৬৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে৷ কাজী আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ১৯৬৫ সালে প্রথম মাসুদ রানা লেখা শুরু করেন৷ তিনি নিজে সরাসরি ২০টির মতো বই লিখেছেন৷ তবে পরপর নয়, বিভিন্ন সময়ে৷ বাকি বইগুলো লেখক প্যাানেল দিয়ে লিখিয়েছেন৷ তার কথা, ‘‘মাসুদ রানা চরিত্রটি আমার সৃষ্টি৷ বিদেশি বই বাছাই করেছি আমি৷ এরপর লেখকদের আমার গল্পের পরিকল্পনা বুঝিয়ে বলেছি৷ তারা লিখে আনার পর আমার পছন্দ হলে কিনে নিয়েছি৷ টাকা দিয়ে দিয়েছি৷ তারপর সেটা আবার সম্পাদনা করে ছাপার উপযোগী করেছি৷ সিরিজের লেখকও আমি৷ আমার সিরিজে তো অন্য কেউ লেখক হতে পারে না৷’’

কিন্তু একজনের লেখা কি আরেকজনের নামে ছাপা যায়? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মাসুদ রানা তো এডাপটেশন৷ এটার মূল লেখা আমার না, আমাদের লেখক প্যানেলেরও না৷ আরেকজন যদি কপি রাইট পায়, তাহলে আমি বাদ যাবো কেন? যারা আমার আদীষ্ট হয়ে লিখেছেন তারা লেখকস্বত্ব কেন পাবেন?’’
কপিরাইট আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, মাসুদ রানার ১১টি বইয়ের পরের ২৬০টি বইয়ের লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন নয়, শেখ আবদুল হাকিম৷ শেখ আবদুল হাকিম স্বশিক্ষিত৷ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বলে তিনি জানান৷ তিনি ১৯৬৬ সাল থেকে লেখা শুরু করেন৷ তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর৷
তিনি বলেন, ‘‘যখন লেখা শুরু করি, তখন আমি কপিরাইট বিষয়টি বুঝতাম না৷ আইন জানতাম না৷ আর আমার টাকার প্রয়োজন ছিল, তাই টাকা পেয়েছি, লিখেছি৷ তিনি যা বুঝিয়েছেন তাই বুঝেছি৷ পরে তিনি রয়্যালিটিও দিয়েছেন৷ কিন্তু যা প্রাপ্য তা দেননি৷ তাই এখন প্রতিকার চেয়েছি৷’’

যখন লেখা শুরু করি, তখন আমি কপিরাইট বিষয়টি বুঝতাম না: শেখ আবদুল হাকিম

This browser does not support the audio element.

তিনি লেখক না ডিকটেশন নিতেন জানতে চাইলে বলেন, ‘‘আমিই লিখেছি৷ তার পক্ষে মাসে কিভাবে ১৮-১৯ টি বই ডিকটেশন দেয়া সম্ভব?’’
লেখক প্যানেলে আরো কয়েকজন ছিলেন৷ আবদুল হাকিম ২০০০ সালের পর সেবা প্রকাশনী ছেড়ে দেন৷ গত বছরের ২৯ জুলাই তিনি কপিরাইট অফিসে অভিযোগ করেন৷
কপিরাইটঅফিসের আদেশের বিরুদ্ধে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে কপিরাইট বোর্ডে আপিল করা যাবে৷ বোর্ডের আদেশের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে৷ কাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘আমি শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো৷ কপিরাইট অফিস আমার যুক্তি শোনেনি৷ উচ্চ আদালতে আমার যুক্তি তুলে ধরবো৷’’
আর শেখ আবদুল হাকিম বলেন, ‘‘আইনি লড়াই বা সমঝোতা দুইটির জন্যই আমি প্রস্তুত আছি৷’’
কপিরাইট অফিস পরবর্তী আপিল বোর্ড বা কোনো আদালতের আদেশের আগ পর্যন্ত বইগুলো প্রকাশ ও বাণিজ্যিক কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে৷ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ওই বইগুলোর সংস্করণ, বিক্রিত কপির সংখ্যা এবং আর্থিক বিবরণী দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছে কপিরাইট অফিস৷

গতবছরের ৩১ জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ