1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কী শর্তে আইএমএফ-এর কাছ থেকে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ অক্টোবর ২০২৩

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের (রিভিউ কমিশন)৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন৷

Washington IWF Logo Symbolbild
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan

 এখন আইএমএফের  বোর্ড অনুমোদন করলে ডিসেম্বর নাগাদ দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ৷

৪ অক্টোবরে আসা আইএমএফ রিভিউ মিশনের কাজ বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে৷ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সমাপনী সভা করে৷ এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা কথা জানিয়ে  বলেন, "আমাদের প্রস্তাবে তারা রাজি হয়েছেন৷ দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আগামী ডিসেম্বরে পেতে আমরা আশাবাদী৷"

আইএমএফ এর বিবৃতিতে বলা হয়ছে, "প্রথম কিস্তির রিভিউ সম্পন্ন করার জন্য যেসব নীতি গ্রহণ প্রয়োজন, সেসব বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইএমএফ কর্মকর্তাদের বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে৷” আইএমএফর মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ বলেন, "কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত এখন আইএমএফ বোর্ডে তোলা হবে অনুমোদনের জন্য৷”

তবে কেউ স্পষ্ট করেননি যে কোন বিষয় নিয়ে সমঝোতা বা ঐক্যমত্য হয়েছে৷ শর্তপূরণের ব্যাপরে কী হয়েছে৷ আইএমএফের শর্তপূরণে বাংলাদেশ কীভাবে কাজ করবে৷

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সম্ভবত আইএমএফ রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশকে কিছুটা ছাড় দিয়েছে৷ তবে আরো যে ঋণ বাকি আছে তা পেতে বাংলাদেশকে পর্যায়ক্রমে শর্ত পূরণ করতে হবে৷ আর এখানো আইএমএফের বোর্ডের ওপর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া নির্ভর করছে৷ তবে রিভিউ মিশন অনুমোদন করলে বোর্ড সেটাই অনুমোদন করে৷ এটাই প্রচলিত নিয়ম৷ কমিটির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট যখন প্রকাশ হবে তখন কোন কোন বিষয়ে, কী শর্তে সমঝোতা হয়েছে তা জানা যাবে বলে জানান তারা৷

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার  ঋণ অনুমোদন করে৷ ২.২ শতাংশ সুদে  মোট সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এই ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়৷ গত ফেব্রুয়ারিতে  ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ৷ আগামী নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৪ কোটি ১০ লাখ ডলার পাওয়ার কথা ছিলো৷ এখন ডিসেম্বরে সেটা পাওয়া যেতে পারে৷

আইএমএফ এই  ঋণ দেয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত বেধে দেয়৷ এর মধ্যে অন্যতম হলো রিজার্ভ থাকতে হবে ২৬ বিলিন ডলার এবং কর-জিডিপির অনুপাত ০.৫ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে৷ আরো যেসব শর্ত তা  হলো, রিজার্ভের হিসেব করতে হবে আইএমএফের অনুসৃত পদ্ধতিতে, বৈদেশিক মুদ্রার দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া, খেলাপি ঋণের পরিমান কমিয়ে আনা৷ বাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কার৷ রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা এবং আয় বাড়ানো৷ জ্বালানি পণ্যের দাম সমন্বয়৷ এসবের জন্য সময়ও বেধে দেয়া হয়৷

‘রিজার্ভের যা অবস্থা তাতে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়াটা সুখবর’

This browser does not support the audio element.

তাই প্রথম কিস্তির ঋণ দেয়ার পর দ্বিতীয় কিস্তি দেয়ার আগে গত ৪ অক্টোবর আইএমফের রিভিউ মিশন বাংলাদেশে আসে৷ বৃহস্পতিবার তারা এই মিশনের কাজ শেষ করেছে৷ তারা এই সময়ে ঋণের শর্তগুলোর  বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি  নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেছেন৷

এই মিশনে সবচেয়ে যে দুইটি বিষয় আলোচিত হয়েছে তা হলো রিজার্ভের শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ৷ আর আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আহরণ করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর)৷ আরো অনেক শর্ত পূরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়, বিশেষ করে ঋণ খেলাপির পরিমাণ কমানো৷ খেলাপি ঋণের পরিমাণ উল্টো বেড়েছে৷

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে শর্ত পুরণ করতে না পারার বিষয়টি বিবেচনার জন্য আইএমএফকে অনুরোধ জানানো হয়৷ জানাগেছে শর্তসাপেক্ষে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে অনুরোধ জানানো হয়েছে তা বিবেবচনায় সম্মত হয়েছেন আইএমএফের কর্মকর্তারা৷ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও পুনর্র্নিধারণ করা হচ্ছে৷ তাছাড়া সুদহার ও মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার বিষয়ে জোর দিয়েছে আইএমএফ৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে আইএমএফের৷ তারা এটি কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে৷ এসব বিষয়ে বাংলাদেশ শর্ত পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷

সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘দেশে রিজার্ভের যা অবস্থা তাতে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া গেলে তা একটি সুখবর৷ আমাদের জরুরি আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য এটা বেশ কাজে দেবে৷ তবে এটা সহজভাবে শর্ত পূরণের মাধ্যমে পাওয়া যায়নি৷”

তিনি মনে করেন," আমার মনে হয় ব্যাংকিং সেক্টর, ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ- এই জায়গাগুলোতে বাংলাদেশকে হয়তো এখনই কাজ শুরু করতে হবে৷ সরকার এই কাজগুলো করতে হয়তো বা অঙ্গীকার করেছে এবং নির্বাচনের পর যে সরকারই আসুক তাদের এই কাজগুলো করতে হবে৷”

‘আমার মনে হয় আইএমএফ শর্তের ব্যাপারে আপাতত কিছু ছাড় দিয়েছে’

This browser does not support the audio element.

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই ঋণের একটি অংশ জরুরি আমদানি ব্যয় মেটাতে কাজে লাগবে৷ রিজার্ভ কিছুটা চাপমুক্ত হবে৷ কিন্তু একইসাথে আমরা যেভাবে বিলাস পণ্য আমদানির কথা শুনছি তাতে উদ্বেগের কারণ আছে৷ বিলাস পণ্য আমদানি পরিহার করতে হবে৷”

আর বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘আমার মনে হয় বাস্তবতার নিরিখে আইএমএফ প্রতিনিধি দল শর্তের ব্যাপারে আপাতত কিছু ছাড় দিয়েছে৷ লক্ষ্য কিছু কমাবে৷ যেমন রিজার্ভ আমার ধারণা ২০ বিলিয়ন ডলার করবে, যেটা ২৬ বিলিয়ন ডলার ছিল৷ রাজস্বের ব্যাপারে কিছু কাজ হয়েছে, আরো করতে হবে৷ লক্ষ্য কিছু কমাবে৷ ডলারে  বাজার ভিত্তিক দর,  জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় এই বিষয়গুলো আছে৷ ডলার নিয়ে কিছু কাজ হয়েছে৷ জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় হয়তো নির্বাচনের পর সরকার করবে, তখন দাম বাড়বে৷ তবে সমাঝোতার ক্ষেত্রগুলো জানতে হলে তাদের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যেটা ওরা বোর্ডের কাছে জমা দেবে৷”

তার কথা, ‘‘এখন আইএফমএফের বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের ব্যাপারে৷ তবে সাধারণত রিভিউ মিশন তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সুপারিশ করে৷ ফলে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ বাংলাদেশ পাচ্ছে৷”

"কিন্তু এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে দ্বিতীয় কিস্তির পেলেইে পরের কিস্তিগুলোও পাবে৷ এখন তারা শর্তে কিছু ছাড় দিয়েছে৷ কিন্তু আইএমএফ তার শর্ত পূরণের অবস্থা দেখে পরের কিস্তিগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ