একটি জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সামরিক বাহিনীর কুকুরদের মাথায় ওয়্যারলেস ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা করেছে৷ দৃশ্যত ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার সময় এ ধরনের একটি প্রণালী ব্যবহার করা হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
‘ডি ভেল্ট' পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, আখেনের পিথ্রি কোম্পানি বার্লিন এয়ার শো'তে এই উন্নত ধরনের ক্যামেরা প্রণালীটি প্রদর্শন করেছে৷ আশা করা হচ্ছে, জার্মান সামরিক বাহিনী ‘বুন্ডেসভের'-এর কুকুরগুলির মাথায় ও গলায় এ ধরনের ক্যামেরা বসানো হবে৷
পুরো প্রণালীটির ওজন পাঁচ কিলোগ্রাম; তাতে একটি ক্যামেরা, ব্যাটারি এবং ওয়্যারলেস ভিডিও ট্রান্সমিটার ছাড়া একটি রেডিও প্রণালী বসানো আছে, যার মাধ্যমে কুকুরটিকে নির্দেশ দেওয়া সম্ভব হবে৷ বার্লিন বিমান প্রদর্শনীতে এ ধরনের যে প্রণালীটি দেখানো হয়, তার ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরামিক ক্যামেরা কুকুরটির চারপাশের দৃশ্য তুলতে ও পাঠাতে সক্ষম৷ পিথ্রি কোম্পানির অপরাপর প্রণালীতে থার্মাল ইমেজিং বা ইনফ্রারেড ক্যামেরারও ব্যবস্থা আছে৷ এ সব পণ্য ‘‘রণাঙ্গণে সৈন্যদের সাহায্য করার জন্য,'' পিথ্রি এভিয়েশন কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাই রাহনেনফ্যুরার ‘ডি ভেল্ট' পত্রিকাকে বলেছেন৷
‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস'
কুকুরের গলায় বাঁধা প্রণালীর রেডিও এক কিলোমিটার দূরত্ব অবধি বেতার সংকেত পাঠাতে বা রিসিভ করতে পারে৷ এর ফলে কুকুরটির কন্ট্রোলার দূর থেকে তাঁর চতুষ্পদ সহযোগীকে নির্দেশ দিতে পারেন৷
কুকুর পুষলে আপনি অনেকদিন বাঁচবেন
হ্যাঁ, খোদ গবেষকরা বলছেন এ কথা৷ ৩৪ লাখ মানুষের জীবন-বৃত্তান্ত খুঁটিয়ে দেখে, দীর্ঘদিন গবেষণা করে তাঁরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, কুকুর শুধু বিশ্বস্ত বলেই মানুষের বন্ধু নয়, কুকুর মানুষকে দীর্ঘজীবীও করতে পারে৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
কারা করেছেন গবেষণা
বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টস-এ সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা গবেষণাটি করেছেন সুইডেনের একটি গবেষক দল৷ প্রতিবেদনে তাঁরা বলেছেন, কুকুর পুষলে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা অনেকখানি কমে৷ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দেখতে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Tetra Images
কুকুর পুষলে কীভাবে এবং কেন মৃত্যু ঝুঁকি কমে?
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা খুব সহজ৷ গবেষকরা বলছেন, অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কুকুর পুষলে কুকুরের মালিকের হাঁটাহাঁটি এবং শারীরিক কার্যকলাপ অনেক বেড়ে যায়৷ তাছাড়া কুকুর অনেকক্ষেত্রে বাইরের নানা জিনিসে মুখ দেয়ার কারণে ময়লা বহন করে আনে৷ ঘরে এসে মালিককে যখন চাটে, মানবশরীরের মাইক্রোবায়োমে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে৷ এই প্রভাবের কারণেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে৷
ছবি: imago/imagebroker
সবারই উপকার
সায়েন্টিফিক রিপোর্টসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো পরিবারে যদি একটি কুকুর থাকে, তাহলে সেই বাড়ির যিনি বা যাঁরা কুকুরটিকে বেশি সময় দেন, তাঁর বা তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ১১ ভাগ এবং হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি শতকরা ১৫ ভাগ কমে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Tetra Images
বেশি উপকার যাদের
তবে কুকুর পোষার উপকারটা বেশি হয় নিঃসঙ্গ মানুষদের৷ কারণ একা থাকলে বাধ্য হয়েই কুকুরকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়৷ পরিবারে অন্য কেউ থাকলে সেই সময়টা ভাগ হয়ে যায়৷ দেখা গেছে, কুকুর পোষার কারণে একাকী মানুষের মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ৩৩ ভাগ এবং হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি ৩৬ ভাগ পর্যন্ত কমে৷
ছবি: Fotolia/E. Kharichkinan
কেমন কুকুর বেশি উপকারী?
কুকুর পুষলেই উপকার৷ তবে গবেষকরা বলছেন, টেরিয়ার, রিট্রিভার ইত্যাদির মতো শিকারি কুকুর পুষলে মৃত্যু এবং হৃদরোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি কমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Piccoli
কতটা ব্যাপক এবং বিশ্বাসযোগ্য এই গবেষণা?
সুইডেনের জাতীয় ডাটাবেজ থেকে ৩৪ লাখেরও বেশি মানুষের তথ্য নিয়ে গবেষণাটি চালানো হয়৷ তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাইয়ের ব্যাপ্তিটা প্রায় ১২ বছরের৷ ৪০ বছর থেকে ৮০ বছর বয়সি মানুষদের যাবতীয় তথ্যই যাচাই করে দেখেছেন গবেষকরা৷ এমন এক গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসা সিদ্ধান্তের ওপর তো আস্থা রাখাই যায়, তাই না?
ছবি: Imago/Westend61
6 ছবি1 | 6
বুন্ডেসভের ছাড়া পুলিশ বাহিনী ও অপরাপর বেসামরিক গ্রাহকও প্রণালীটি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে পিথ্রি জানিয়েছে৷
২০১১ সালের পর থেকে ক্যানাডার কে-নাইন স্টর্ম ইনকর্পোরেটেড কোম্পানি বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ত্রিশ হাজার ডলার মূল্যের একটি ক্যামেরাযুক্ত, বুলেটপ্রুফ ‘সারমেয় বর্ম' সরবরাহ করে আসছে৷ মার্কিন নেভি সিলদের যে অভিযানে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন, তাতে এই ‘ইন্ট্রুডার' প্রণালী ব্যবহার করা হয়েছিল বলে প্রকাশ৷ বর্মটি নয় মিলিমিটার ও পয়েন্ট ফোর-ফাইভ ম্যাগনাম হ্যান্ডগান থেকে নিক্ষিপ্ত বুলেট আটকাতে সক্ষমবলে দাবি করা হয়েছে৷
২০১৬ সালে হনিওয়েল নামের আন্তর্জাতিক সংস্থাটি অনুরূপ একটি সারমেয় ক্যামেরা প্রণালী বাজারে ছাড়ে, যাতে নাকি নেভিগেশনের জন্য রাডার পর্যন্ত লাগানো ছিল৷ এক্ষেত্রে কুকুরদের নির্দেশ দেওয়ার জন্য একটি ‘বাজার' লাগানো ছিল: প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুররা সেই ‘বাজ' শুনে বুঝত, তাদের কি করণীয়৷
২০১৫ সালে সের্বেরাস নামের একটি মার্কিন সংস্থা কুকুরের গায়ে বাঁধার মতো ক্যামেরা প্রণালী বাজারে আনে, যার ক্যামেরা বেতার সংকেত দিয়ে সচল করা যেতো৷
জার্মান সামরিক বাহিনী নানা কাজে কুকুরদের ব্যবহার করে থাকে: যেমন রণাঙ্গণে সৈন্যদের সাহায্য করার জন্য কুকুরদের হেলিকপ্টার থেকে নামিয়ে দেয়া হয়৷ বিস্ফোরক ও মাদকের অনুসন্ধানে কুকুরদের ব্যবহার করা হয়৷ এছাড়া মাইনবোমার খোঁজ ও সৈন্যদের পিটিএসডি অসুখের চিকিৎসার জন্যও বুন্ডেসভের কুকুরদের নিয়োগ করে থাকে৷
এসি/এসিবি
প্রাণীরা যখন শিক্ষক
প্রাণীরা শুধু মানুষের বিশ্বাসী বন্ধু নয়, প্রাণীদের কাছ থেকে মানুষের অনেককিছুই শেখার আছে৷ আর সেই শিক্ষা গ্রহণ করলে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও সুন্দর হতে পারে৷ প্রাণীদের সেরকমই কিছু আচরণের নমুনা পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Meyers
বেড়াল শান্ত রাখে
‘স্ট্রেস’ বা চাপ? না, এই শব্দ বেড়াল একেবারেই চেনে না৷ আর সেটা ওদের চোখের দিকে সরাসরি তাকালেই বোঝা যায়৷ বেড়ালকে শিকারে নিয়ে যান, মেঝেতে পিঁপড়ে ছড়িয়ে দিন কিংবা শুকনো পাতার ওপর হাঁটুন, কিছুতেই বেড়াল উত্তেজিত হবে না বা ওর গায়ের কোনো পেশী ফুলে উঠবে না৷ তাই বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে আমরা বেড়ালের কাছ থেকে নিজেকে শান্ত রাখার কৌশল শিখতে পারি৷
পানিতে যাদের বসবাস, তাদের মধ্যে ডলফিন খুবই মিশুক৷ পানিতে খেলার সময় বা ট্রেনিং-এর সময় সহজেই তারা একে-অপরের বন্ধু হয়ে যায়৷ মানুষের সঙ্গেও তাদের সহজেই বন্ধুত্ব হয়৷ তার ওপর স্মরণশক্তিও ওদের খুব ভালো৷ ২০ বছর পরও ডলফিন তার বন্ধুকে চিনতে পেরে কাছে টেনে নেয়৷ যা সত্যিই মানুষের হিংসে করার মতো৷ আহা মানুষ যদি এমন হতো!
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুরের কোনো অভিযোগ নেই!
প্রভুভক্ত কুকুরের একাকী সারাদিন কেমন কেটেছে, তা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই৷ বরং মনিব বাড়িতে এসে একটু আদর করলেই সে মহাখুশি৷ কুকুরের ক্ষেত্রে যেটা লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে, সে বিনা শর্তে ভালোবাসে, খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বাস অর্জন করে এবং সহজে ক্ষমাও করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Hörhager
ঘোড়া ভালো নেতৃত্ব দেয়
ঘোড়া একদিকে যেমন ভদ্র, অন্যদিকে সহসী ও নেতৃত্বে পটু৷ সে সহজেই মনিবের ভাষা বোঝে, যা অন্যদের ‘মোটিভেট’ করতে পারে৷ এই সুন্দর, শান্ত প্রাণী যতক্ষণ না কোনো নির্দেশ পায়, ততক্ষণ চুপচাপ থাকে৷ তবে কিছু বললে সাথে সাথে বুঝে তার প্রতিক্রিয়া জানায়৷ অন্যদিকে কেউ ঘোড়াকে ক্ষেপালে সে মুহূর্তেই প্রতিবাদ করে ওঠে৷ অর্থাৎ ভদ্র, সাহসী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ঘোড়া৷
ছবি: Andreas Sten-Ziemons
একতাই বল, দলই শক্তি
‘একের বোঝা দশের লাঠি’ বা ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ – এ সব প্রবাদবাক্যের প্রমাণ আমাদের দিয়েছে ‘পরিযায়ী পাখি’৷ এরা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে ‘টিম স্পিরিট’ বা ‘দলীয় শক্তি’ কাকে বলে৷ আজকের যুগে একা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়৷ শুধুমাত্র দলের সকলে মিলে কাজ করলেই সাফল্য অর্জন সম্ভব, ঠিক এই পাখিদের মতো৷ তবে দলকে একত্রিত করে সফল হতে প্রয়োজন শক্তিশালী গাইড বা দলনেতা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধৈর্য
প্রাণীরা বর্তমান সময়কেই উপভোগ করে৷ মানুষদের মতো আগামীতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করে না৷ কোনো কিছুতে তাড়াহুড়ো নেই তাদের৷ বেড়ালকে দেখুন, কী সুন্দর নিশ্চন্তে বসে থাকে বা কুকরকে নিয়ে বাইরে বের হলেই লক্ষ্য করবেন যে, তারা শীত, গ্রীষ্ম, বৃষ্টির কথা না ভেবে যতক্ষণ দরকার ততটা সময় ব্যয় করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে৷ আজকের তরুণরা চাইলে প্রাণীদের কাছ থেকে ধৈর্য ধরা শিখতে পারে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/J. Fieber
শোনায় মনোযোগী
প্রাণীরা শোনার ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী, যা ওদের কান খাড়া করে থাকা দেখেই বোঝা যায়৷ ওরা চুপ করে বসে শোনে এবং সেভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়৷ প্রাণীদের কাছে থেকে মানুষরা এই গুণটি গ্রহণ করলে নিঃসন্দেহে তা মানবজাতির অনেক উপকারে আসতে পারে৷ কারণ মানুষের সাধারণত শোনার চেয়ে বলাই পছন্দ৷ ফলে সৃষ্টি হয় ভুল বোঝবুঝি, আবার অনেক সময় কিছু বিষয় স্পষ্ট হয় না৷