কুকুর ও মালিকের আবেগ ক্যামেরাবন্দি করেন বার্লিনের ফটোগ্রাফার
২ জুলাই ২০২১
কিছু মানুষ নানা কারণে কুকুর পছন্দ করেন না৷ পেশার তাগিদে সেই আড়ষ্টতা কাটিয়ে কুকুরের সঙ্গে কাজ করছেন বার্লিনের এক ফটোগ্রাফার৷ মালিক ও কুকুরের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক ধরা পড়ছে তার লেন্সে৷
বিজ্ঞাপন
কুকুর মানুষের সবচেয়ে ভালো ও অনুগত বন্ধু হিসেবে পরিচিত৷ এমন বন্ধু সঙ্গে থাকলে কখনো একঘেয়েমি আসে না৷ খুশি মনে লেজ নাড়িয়ে মানুষের মন ভালো করে দেয়৷
বার্লিনের ফটোগ্রাফার টোমাস কিরোকের নিজস্ব কোনো কুকুর নেই, কোনও দিন ছিল না৷ প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি শুধু মানুষকেই বিষয়বস্তু হিসেবে দেখছেন৷ তবে তার সর্বশেষ ফটো প্রকল্পের জন্য তিনি কুকুরের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন৷ ফলে তাকে কখনো বেশি কখনো কম বেগ পেতে হচ্ছে৷ টোমাস বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি স্বীকার করতেই হবে যে কুকুরের প্রতি আমার কিছুটা শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে৷ কুকুর যত বড় ও জংলি প্রকৃতির হয়, শ্রদ্ধার মাত্রাও তত বেড়ে যায়৷ সব ক্ষেত্রেই সেটা একটা চ্যালেঞ্জ৷ সবকিছু ঠিক থাকলে জীবনে এগিয়ে চলাও ভালো৷’’
বিশেষ করে এই প্রকল্পে সঠিক মুহূর্তে শাটার টেপার দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি৷ কারণ সব কুকুর মোটেই ক্যামেরার সামনে সাবলীল থাকে না৷ ছোট ছোট কৌশলের সাহায্যে আদর্শ ফটো তোলা সম্ভব৷ মানুষের ক্ষেত্রে সেটা অনেক সহজ৷
নতুন প্রকল্প সম্পর্কে ৫৫ বছর বয়সি এই ফটোগ্রাফারের আইডিয়ার অভাব নেই৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইডিয়া কাকতালীয়ভাবে উঠে আসে৷ যেমন করোনা মহামারি তাকে ‘মানুষ ও কুকুর’ প্রকল্পের দিশা দেখিয়েছিল৷ টোমাস কিরোক সেই প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, ‘‘সে সময়ে তেমন অর্ডার আসছিল না৷ অবসর সময়ে হাঁটতে বের হতাম৷ কুকুরের মালিকদের আরও ভালো করে দেখে অনেক সময়ে তাদের মধ্যে বড় পার্থক্য নজরে এলো৷ বিশাল চেহারার ষণ্ডামার্কা মানুষের সঙ্গে ছোট্ট কুকুর দেখে বেশ মজা লেগেছে৷ তখন আরও খোঁজখবর নেবার ইচ্ছা হলো৷’’
ক্যামেরায় কুকুর-মানুষের আবেগের সম্পর্ক
03:43
টোমাস ইতোমধ্যে কুকুরের সঙ্গে ৪০ জন মালিকের ছবি তুলেছেন৷ সেই সব ছবির মাধ্যমে তিনি মালিক ও কুকুরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তুলে ধরতে চান৷ তিনি সব সময়ে কুকুর ও মালিকের আলাদা ছবি তুলে জোড়া লাগান৷ কালো প্রেক্ষাপটের সামনে ক্যামেরার দিকে সোজা তাকালে ছবির ভাষাও সহজ হয়৷
‘হান্ড্রেড’ নামের সবচেয়ে সফল প্রকল্পেও টোমাস সেই নান্দনিক কাঠামো কাজে লাগিয়েছিলেন৷ সেই প্রকল্পে মানুষের জীবনে পরিবর্তনের ধাপগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল৷ ‘ওয়ান' নামের সিরিজে তিনি মাস্ক-পরা মানুষের ছবি তুলেছেন৷ তার সব প্রকল্পের লক্ষ্য একই৷ টোমাস বলেন, ‘‘আমি লক্ষ্য করেছি, যে অন্য কোনো মানুষের চোখে চোখ মেলালে একটা সংযোগ সৃষ্টি হয়, গভীর যোগাযোগ গড়ে ওঠে৷ এ ক্ষেত্রে এক প্রাণীর সঙ্গে একাত্মবোধের সুযোগ হচ্ছে৷ আমার ছবির মাধ্যমে আমি মূলত সেটাই প্রকাশ করতে চাই৷ মানুষে-মানুষে এবং মানুষের সঙ্গে প্রাণীর গভীর সংযোগ তুলে ধরতে চাই৷''
টোমাস কিরোক নিজে কখনো কোনো কুকুরের সঙ্গে গভীর সংযোগ গড়ে তুলতে পারবেন কিনা, তা বলা যাচ্ছে না৷ তবে সেই সম্ভাবনা কম৷ তবে কুকুর-মালিকের ছবিগুলি নিয়ে একটি বই প্রকাশের সম্ভাবনা কিন্তু উজ্জ্বল৷
ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার/এসবি
সংকটের সময় প্রকৃত সঙ্গী কুকুর
কথায় বলে, দুঃসময়ে প্রকৃত বন্ধু কে তা বোঝা যায়৷ কুকুর বারে বারে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়৷ কিন্তু করোনার কারণে গৃহবন্দি মানুষ অতি উৎসাহে যেভাবে কুকুর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, তার ফলে জটিলতা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Wire/P. Freire
সারমেয় থাকার ফায়দা
ইটালি ও স্পেনে শাটডাউনের সূচনাপর্ব থেকেই বাসায় কুকুর রাখার প্রবণতা বাড়ছে৷ করোনা সংকটের সময় কুকুর নিয়ে পথে বের হওয়ার দৃশ্য দুর্লভ নয়৷ অনেকে কারফিউ সত্ত্বেও বাইরে যাবার আছিলায় মালিকের কাছে কুকুর ধার চাইছেন৷ এমনকি কেউ কেউ অর্থের বিনিময়ে কুকুর হাঁটাতে নিয়ে যাবার সুযোগ চাইছেন বলেও সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Lingria
সকলে মিলে একা
করোনা সংকটের সময়ে শুধু মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে না, পোষা কুকুরের রুটিনও আগের মতো থাকছে না৷ সারাদিন মালিক ও তাঁর স্ত্রী বাসায়৷ তারা প্রচুর কথা বলছে এবং ঘন ঘন কুকুরের গায়ে হাত বোলাচ্ছে৷ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হাঁটতে বের হবার ঝক্কি তো রয়েছেই৷ এমনকি কুকুরের উপর পরিবারের সদস্যদের মনোমালিন্যের প্রভাবও পড়ছে৷
ছবি: Simone Alliva
ইটালিতে কুকুর নিয়ে মাতামাতি
রোমের এক সম্ভ্রান্ত পাড়ায় এক নারী অস্বাভাবিক রকম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এক কুকুর নিয়ে পথে বেরিয়েছেন৷ ‘ডিয়র’ নামের সেই কুকুরের গায়ে সম্ভবত সুগন্ধিও স্প্রে করা হয়েছে৷ ইটালির সার্দিনিয়া দ্বিপেও করোনা সংকটের সময় বিচিত্র ঘটনা চোখে পড়ছে৷ যেমন মামোইয়াদা শহরের মেয়র মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে কারফিউয়ের সময়ে শুধু আসল কুকুর নিয়ে পথে বের হওয়া চলে, কুকুরের পুতুল নিয়ে নয়৷
ছবি: Reuters/A. Lingria
করোনায় পরোয়া নেই
কুকুরও কি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হতে পারে এবং তারপর মানুষজনের শরীরে সেই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে? ফ্রিডরিশ-ল্যোফলার ইনস্টিটিউটের সূত্র অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত এমন কোনো দৃষ্টান্ত দেখা যায় নি৷ তবে কাগজে কলমে কোনো করোনা রোগী কুকুরের গায়ে হাত বোলালে কুকুরের লোমে ভাইরাস বাসা বাঁধতে পারে বৈকি৷ তবে এমন সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত কম৷
ছবি: Getty Images/H. Adams
ছবির জন্য হাসিমুখ
করোনা সংকটের সময় কুকুর ও মালিকের সম্পর্ক আরও জোরালো হয়ে উঠছে৷ যেমন লেবাননের এক কুকুরের মালিক বৈরুতের সমুদ্রতটের কাছে বিখ্যাত ‘কবুতর টিলা’-র সামনে গর্বভরে ছবি তুলিয়েছেন৷ প্রতি বছর সেখানে লাফ মারার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: Reuters/M. Azakir
ভালবাসার রং হলুদ
মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রথম ঘটনার পরেই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো গোটা দেশকে কোয়ারেন্টাইনের অন্তর্গত করেছেন৷ বর্তমান সংকটের আগেই ভেনেজুয়েলার স্বাস্থ্য পরিষেবা অবকাঠামো প্রায় ভেঙে পড়তে বসেছিল৷ হাসপাতালে সাবান, স্যানিটাইজার ইত্যাদির চরম অভাব দেখা যাচ্ছে৷ রাজধানী কারাকাসে এক ব্যক্তি পোষা কুকুর ও নিজের জন্য মাস্ক তৈরি করেছেন৷
ছবি: AFP/F. Parra
শহরের বাইরে যাবার পালা
প্রায় ভুতুড়ে এক দৃশ্য বটে৷ এক কুকুরের মালিক সিয়াটেল শহরের প্রায় খালি এক ফেরি থেকে নেমে আসছেন৷ করোনা সংকটের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হুহু করে বেড়ে চলেছে৷
ছবি: Reuters/B. Snyder
আমার কুকুর, আমার অন্তরাত্মা
করোনা সংকটের জের ধরে জার্মানিতে সরকারি বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বাসার বাইরে বের হতে হলে সঙ্গে কুকুর রাখার প্রয়োজন নেই৷ মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রকাশ্যে দুইয়ের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ হলেও কারফিউ জারি করা হয় নি৷ একা অথবা আরেক ব্যক্তির সঙ্গে অনায়াসে হাঁটা যায়৷ সঙ্গে পছন্দের পোষা কুকুর থাকলে তো আরও ভালো৷