ফিনল্যান্ডে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কুকুরকে শেখালে তারা গন্ধ শুকে করোনায় কেউ আক্রান্ত হয়েছে কি না তা বলে দিতে পারে। করোনা সংক্রমণের একটা নির্দিষ্ট গন্ধ আছে, যা কুকুর ধরে ফেলতে পারে।
বিজ্ঞাপন
সমীক্ষাটা করেছেন হেলসিংকি বিশ্বিদ্যালয়ের একদল গবেষক। কুকুরকে বিশেষভাবে শেখালে তারা গন্ধ শুঁকে করোনা ধরে ফেলবে। কোভিড ১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে একটি গন্ধ পাওয়া যায়। কুকুরকে শেখালে তারা সেই গন্ধ নিখুঁতভাবে ধরে ফেলতে পারে। কয়েক সপ্তাহ লাগে তাদের গন্ধটা ধরতে। তারপর কোনটা করোনা রোগীর মূত্র, কোনটা নয়, তা সেই প্রশিক্ষিত কুকুর নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারে।
ডগরিস্ক গ্রুপের প্রধান আনা হেলম বিওরিকম্যান বলেছেন, প্রতিটি রোগের একটা গন্ধ থাকে। কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিলে সেই গন্ধ তারা ধরে ফেলে। আমাদের সেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। কুকুর কীভাবে দ্রুত সেই নতুন গন্ধ শুঁকতে পারছে, সেটা দেখাও দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কুকুর করোনার গন্ধ বুঝে নিতে পারে। তারপর করোনা আক্রান্তের মূত্রের গন্ধ শুঁকে সে বলে দেবে যে করোনা হয়েছে। ল্যাবে পরীক্ষা যতটা নির্ভরযোগ্য, কুকুরের করোনা ধরাও ততটাই নির্ভরযোগ্য।
ফিনল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এখন আরও পরীক্ষা করবেন। গবেষণার ভাষায় যার নাম ডবল ব্লাইন্ড স্টাডি। এতে কুকুর অনেক বেশি সংখ্যায় রোগীদের মূত্রের গন্ধ শুঁকবে এবং বলে দেবে কোনটা করোনা রোগীর, কোনটা নয়। সেটা সফল হলে তারপর কুকুরদের করোনা ধরার কাজে ব্যবহার করা হবে।
তবে শুধু ফিনল্যান্ড নয়, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিতেও এ নিয়ে পরীক্ষা হচ্ছে। ফিনল্যান্ডের গবেষক দলের ফলাফল তাঁদেরও সাহায্য করবে। কিন্তু জার্মান অ্যাসিসটেন্স ডগ সেন্টারের লুকা বারেট বলেছেন, ''এখনও একটা কথা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি যে, এই ভাইরাস নিয়ে প্রশিক্ষণ করানোটা কতটা বিপজ্জনক। জার্মান ভাইরাসবিদরা এই ধরনের পরীক্ষার বিরুদ্ধে। কারণ, এই ভাইরাস নিয়ে আমরা বিশেষ কিছু জানি না।''
করোনা রোগীর মূত্রে কী করে এই গন্ধটা আসে, তা এখনও খুব স্পষ্ট নয়। করোনার ভাইরাস ফুসফুসকে আক্রমণ করে, রক্তনালি, কিডনি ও অন্য অঙ্গের ক্ষতি করে। এটাও মনে করা হচ্ছে, রোগীর মূত্রের গন্ধ বদল হয়। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি খুবই শক্তিশালী বলে তারা সেই বদল ধরে নিতে পারে।
সংকটের সময় প্রকৃত সঙ্গী কুকুর
কথায় বলে, দুঃসময়ে প্রকৃত বন্ধু কে তা বোঝা যায়৷ কুকুর বারে বারে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়৷ কিন্তু করোনার কারণে গৃহবন্দি মানুষ অতি উৎসাহে যেভাবে কুকুর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, তার ফলে জটিলতা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Wire/P. Freire
সারমেয় থাকার ফায়দা
ইটালি ও স্পেনে শাটডাউনের সূচনাপর্ব থেকেই বাসায় কুকুর রাখার প্রবণতা বাড়ছে৷ করোনা সংকটের সময় কুকুর নিয়ে পথে বের হওয়ার দৃশ্য দুর্লভ নয়৷ অনেকে কারফিউ সত্ত্বেও বাইরে যাবার আছিলায় মালিকের কাছে কুকুর ধার চাইছেন৷ এমনকি কেউ কেউ অর্থের বিনিময়ে কুকুর হাঁটাতে নিয়ে যাবার সুযোগ চাইছেন বলেও সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Lingria
সকলে মিলে একা
করোনা সংকটের সময়ে শুধু মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে না, পোষা কুকুরের রুটিনও আগের মতো থাকছে না৷ সারাদিন মালিক ও তাঁর স্ত্রী বাসায়৷ তারা প্রচুর কথা বলছে এবং ঘন ঘন কুকুরের গায়ে হাত বোলাচ্ছে৷ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হাঁটতে বের হবার ঝক্কি তো রয়েছেই৷ এমনকি কুকুরের উপর পরিবারের সদস্যদের মনোমালিন্যের প্রভাবও পড়ছে৷
ছবি: Simone Alliva
ইটালিতে কুকুর নিয়ে মাতামাতি
রোমের এক সম্ভ্রান্ত পাড়ায় এক নারী অস্বাভাবিক রকম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এক কুকুর নিয়ে পথে বেরিয়েছেন৷ ‘ডিয়র’ নামের সেই কুকুরের গায়ে সম্ভবত সুগন্ধিও স্প্রে করা হয়েছে৷ ইটালির সার্দিনিয়া দ্বিপেও করোনা সংকটের সময় বিচিত্র ঘটনা চোখে পড়ছে৷ যেমন মামোইয়াদা শহরের মেয়র মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে কারফিউয়ের সময়ে শুধু আসল কুকুর নিয়ে পথে বের হওয়া চলে, কুকুরের পুতুল নিয়ে নয়৷
ছবি: Reuters/A. Lingria
করোনায় পরোয়া নেই
কুকুরও কি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হতে পারে এবং তারপর মানুষজনের শরীরে সেই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে? ফ্রিডরিশ-ল্যোফলার ইনস্টিটিউটের সূত্র অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত এমন কোনো দৃষ্টান্ত দেখা যায় নি৷ তবে কাগজে কলমে কোনো করোনা রোগী কুকুরের গায়ে হাত বোলালে কুকুরের লোমে ভাইরাস বাসা বাঁধতে পারে বৈকি৷ তবে এমন সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত কম৷
ছবি: Getty Images/H. Adams
ছবির জন্য হাসিমুখ
করোনা সংকটের সময় কুকুর ও মালিকের সম্পর্ক আরও জোরালো হয়ে উঠছে৷ যেমন লেবাননের এক কুকুরের মালিক বৈরুতের সমুদ্রতটের কাছে বিখ্যাত ‘কবুতর টিলা’-র সামনে গর্বভরে ছবি তুলিয়েছেন৷ প্রতি বছর সেখানে লাফ মারার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: Reuters/M. Azakir
ভালবাসার রং হলুদ
মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রথম ঘটনার পরেই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো গোটা দেশকে কোয়ারেন্টাইনের অন্তর্গত করেছেন৷ বর্তমান সংকটের আগেই ভেনেজুয়েলার স্বাস্থ্য পরিষেবা অবকাঠামো প্রায় ভেঙে পড়তে বসেছিল৷ হাসপাতালে সাবান, স্যানিটাইজার ইত্যাদির চরম অভাব দেখা যাচ্ছে৷ রাজধানী কারাকাসে এক ব্যক্তি পোষা কুকুর ও নিজের জন্য মাস্ক তৈরি করেছেন৷
ছবি: AFP/F. Parra
শহরের বাইরে যাবার পালা
প্রায় ভুতুড়ে এক দৃশ্য বটে৷ এক কুকুরের মালিক সিয়াটেল শহরের প্রায় খালি এক ফেরি থেকে নেমে আসছেন৷ করোনা সংকটের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হুহু করে বেড়ে চলেছে৷
ছবি: Reuters/B. Snyder
আমার কুকুর, আমার অন্তরাত্মা
করোনা সংকটের জের ধরে জার্মানিতে সরকারি বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বাসার বাইরে বের হতে হলে সঙ্গে কুকুর রাখার প্রয়োজন নেই৷ মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রকাশ্যে দুইয়ের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ হলেও কারফিউ জারি করা হয় নি৷ একা অথবা আরেক ব্যক্তির সঙ্গে অনায়াসে হাঁটা যায়৷ সঙ্গে পছন্দের পোষা কুকুর থাকলে তো আরও ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
8 ছবি1 | 8
বারেট জানিয়েছেন, ''কিছু রোগের নির্দিষ্ট গন্ধ থাকে। কুকুর সেটা শুঁকে নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারে। একটা সমীক্ষা অনুযায়ী কুকুরগন্ধ শুঁকে স্তনে ক্যান্সার হয়েছে কি না বলে দিতে পারে। ৯৩ শতাংশ ক্ষেত্রে তারা ঠিকভাবে বলে দেয়। ত্বকের, ডিম্বাশয়ের, মূত্রথলির ক্যান্সারও কুকুর গন্ধ শুঁকে বলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এমনকী তারা পার্কিনসন আক্রান্ত রোগীদেরও গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারে। এই রোগে কেউ আক্রান্ত হওয়ার কয়েক বছর আগেও কুকুর তা বলে দিতে পারে।'' বারেট জানিয়েছেন, ''এখান থেকেই পার্কিনসনের আগাম ওয়ার্নিং দেওয়ার জন্য কুকুরদের প্রশিক্ষিত করি। এমনকী প্রশিক্ষণ দিলে কুকুররা ম্যালেরিয়া হয়েছে কি না তা বলে দিতে পারে। তবে ১০ জনের মধ্যে সাতজনের ক্ষেত্রে তারা সঠিকভাবে বলতে পারছে। এটা যথেষ্ট নয়।''
কুকুরেরশুঁকে দেখার ক্ষমতা মানুষের থেকে দশ লাখ গুণ বেশি। মানুষের ৫০ লাখ ঘ্রাণকোষ আছে। কুকুরের আছে ২২ কোটি। কুকুর প্রতি মিনিটে ৩০০ বার নিঃশ্বাস নিতে পারে। তার মানে তাদের ঘ্রাণকোষ সমানে তাদের নতুন গন্ধ সরবরাহ করে যাচ্ছে। সাধারণত ল্যাব্রাডর রিট্রিভারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে স্প্যানিয়েল ও শিকারি কুকুরদেরও এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রত্যেককে একটা গন্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেটা মাদক হতে পারে বা বিস্ফোরক। অথবা কোনও অসুখের গন্ধ। একটা কুকুর একাধিক অসুখের গন্ধ টের পাবে না।