1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুয়ানতানামোর সাতকাহন

৮ জুন ২০১৪

আফগানিস্থান থেকে অপহৃত এক মার্কিন সৈনিকের বিনিময়ে তালেবান জঙ্গি গোষ্ঠীর পাঁচজন জঙ্গির মুক্তির পর, চলতি সপ্তাহে আবারো নতুন করে আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে বন্দি শিবির৷

ছবি: dapd

সার্জেন্ট বো বার্গডাল-এর বিনিময়ে যে পাঁচজন শীর্ষ তালেবান নেতাকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ মুক্তি দিয়েছে, তাঁদের কারো সহসা মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল না৷ এমনকি এ ধরনের বন্দিদের মুক্তি দেয়ার এক মাস আগে কংগ্রেস সদস্যদের জানানোর নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে তা করা হয়নি, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির আইন প্রণেতারা৷

এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলেছে, বার্গডাল-এর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় সব নিয়ম অনুসরণ করার সময় ছিল না৷ওয়াশিংটনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী কিছুদিনে বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন বন্দিকে এভাবে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে৷

গিতমো

নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার পর ২০০২ সালে কিউবার দক্ষিণ অংশে ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ানতানামো নৌ ঘাঁটিতে খোলা হয় এই বন্দিশিবির৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তখন জর্জ ডাব্লিউ বুশ৷ অ্যামেরিকার শত্রু এবং ভয়ংকর সব সন্ত্রাসীদের জন্য এই কারাগার খোলার কথা বলা হলেও সেখানে কমলা রঙের জাম্পস্যুট পরিহিত শেকলবন্দি কয়েদিদের খাঁচায় আটকে রাখার ছবি প্রকাশিত হলে গুয়ানতানামো বন্দি নির্যাতনের প্রতীকে পরিণত হয়৷ সংক্ষেপে এর নাম হয়ে যায় ‘গিতমো'৷

ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেই খাঁচাগুলো পরে সরিয়ে নেয় গুয়ানতানামো কর্তৃপক্ষ৷ বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একাধিকবার এই কারাগার বন্ধ করে দেয়ার অঙ্গীকারও করেছেন৷ কিন্তু তাঁর সেই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে কিছু কংগ্রেস সদস্যের বিরোধিতায়, যাঁরা এই জঙ্গিদের যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূ-খণ্ডে নিতে রাজি নন৷

বন্দি যাঁরা

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই কারাগারে মোট ৭৭৯ জনকে বন্দি রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ বর্তমানে সেখানে রাখা হয়েছে ১৪৯ জনকে, যাঁদের মধ্যে ৭৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ না মেলায় তাঁদের মুক্তির অনুমোদনও ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে৷ মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এই বন্দিদের মধ্যে রয়েছেন ৫৮ জন ইয়েমেনি, টিউনেশিয়ার পাঁচজন, আফগানিস্থানের চারজন এবং চারজন সিরীয়৷

এখনকার বন্দিদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযোগ গঠন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আদালত৷ ২৩ জনকে বিচারের মুখোমুখী করার সুপারিশ করা হয়েছে৷ আর ৩৮ জনের ক্ষেত্রে অভিযোগ পুনর্বিবেচনার আবেদন বিবেচনাধীন৷ যে পাঁচজনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, তাঁরা ছিলেন এই সর্বশেষ দলে৷

বিচার

২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিশেষ এই সামরিক আদালত গঠনের পর এ পর্যন্ত গুয়ানতানামোর আটজন বন্দিকে বিচারের মুখোমুখী করা হয়েছে৷ এঁদের মধ্যে ছয়জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, দু'জনকে ফেডারেল আদালত খালাস দিয়েছে৷ এছাড়া আরো দু'জনের আপিল বর্তমানে ফেডারেল আদালতের বিবেচনাধীন৷

সার্জেন্ট বো বার্গডালছবি: REUTERS/Al-Emara

এঁদের মধ্যে তানজানিয়ার নাগরিক আহমেদ আল-গাইলানি ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন৷

বাকিরা কোথায়?

গুয়ানতানামোর বর্তমান বন্দিরা ১৯টি দেশের নাগরিক৷ কেবল একজনের ক্ষেত্রে জাতীয়তার কোনো উল্লেখ নেই৷ বন্দিদের মধ্যে ইয়েমেনের ৮৭ জন, আফগানিস্থানের ১২ জন এবং ১১ জন সৌদি আরবের৷ এছাড়া মিশর, পাকিস্তান ও রাশিয়ার নাগরিকও রয়েছেন৷

কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে বন্দি শিবিরের বাহিরের অংশছবি: Reuters

আগের বন্দিদের মধ্যে অনেককেই তাঁদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ এই কারাগার বন্ধ করে দেয়ার জন্য কোনো কোনো বন্দিকে তৃতীয় কোনো দেশে সরিয়ে নেয়ারও চেষ্টা হয়েছে৷ সৌদি আরব, আলজেরিয়া, বারমুডা ও পালাউ ইতোমধ্যে গিতমোর কয়েকজন বন্দির দায়িত্ব নিয়েছে৷

খরচ

যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা অনুযায়ী গুয়ানতানামো কারাগারে একজন বন্দিকে রাখতে প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে ২৭ থেকে ২৮ লাখ ডলার৷ অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূ-খণ্ডে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত একটি কারাগারে প্রত্যেক বন্দির পেছনে খরচ হয় বছরে ৭৮ হাজার ডলার৷

মুক্তিতেও মুক্তি নেই

গুয়ানতামামোর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেও সত্যিকার অর্থে বোধহয় কারোই মুক্তি মেলে না৷ এ পর্যন্ত যাঁরাই ওই বন্দিশালা থেকে ফিরে এসেছেন, তাঁদের ওপর কঠোর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷

ওয়াশিংটনের একজন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, মুক্তি পাওয়ার পর এঁদের ১৬ শতাংশ আবার জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ফিরে গেছেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত৷ আরো ১২ শতাংশের ক্ষেত্রে একই ধরনের সন্দেহ রয়েছে, যদিও এর কোনো শক্ত প্রমাণ তাঁদের হাতে নেই৷

বন্দি শিবিরের অভ্যন্তরছবি: Reuters

কুখ্যাত বন্দিরা

এখনো যাঁরা গুয়ানতানামোয় বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন খালিদ শেখ মোহাম্মদ, যিনি নিজেকে নাইন ইলেভেন হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করে থাকেন৷ ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ভয়াবহ সেই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সন্দেহে আটক আরো চারজন এ কারাগারে রয়েছেন৷

সৌদি আরবের নাগরিক আবদ আল-রহিম আল-নাসিরির বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে অয়েল ট্যাংকার এমভি লিমবুর্গে হামলা এবং ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্র নৌ-বাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস কোলে আত্মঘাতী হামলা চালানোর নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে৷

দোষী সাব্যস্ত হলে এই ছয়জনেরই মৃতু্দণ্ড হতে পারে৷

জেকে/ডিজি (এএফপি, এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ