কুপিয়ানস্ক দখল করতে পারে রুশ সেনা, আশঙ্কায় শহরবাসী
২১ মার্চ ২০২৪
আবার কি কুপিয়ানস্ক দখল করে নেবে রাশিয়া? ইউক্রেনের খারকিভের এই শহরের বাসিন্দারা এই আশঙ্কা করছেন।
বিজ্ঞাপন
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করে কুপিয়ানস্ক দখল করে নেয় রাশিয়া। পরে ইউক্রেনের বাহিনী তা আবার নিজেদের দখলে নেয়। আবার রাশিয়া কুপিয়ানস্ক দখল করে নিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা সেইমতো প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
আপনি যদি খারকিভ থেকে দক্ষিণপূর্বে যান, তাহলে রাস্তার ধারে একটা সাইন দেখতে পাবেন, তাতে লেখা, 'কুপিয়ানস্কি রাই', তার মানে কুপিয়ানস্ক স্বর্গ। আগে এর সঙ্গে জেলা কথাটাও লেখা থাকত। এখন আর নেই। ইউক্রেন আক্রমণের দিনকয়েক পরেই রাশিয়া এই শহর অধিকার করে নেয়। সেপ্টেম্বরে ইউক্রেন আবার তা দখল করে।
এই শহর হলো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ রেল-হাব। শহরে এখন শুধু সামরিক বাহিনী ও তাদের যানবাহন চলাফেরা করছে। মাঠে চাষ হয় না। গ্রামগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে। 'স্বর্গ' কথাটা শুধু ওই সাইনবোর্ডেই থেকে গেছে। বাস্তবে তার চেহারা বদলে গেছে।
শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরেই এখন রাশিয়ার সেনা রয়েছে। তাদের গোলা শহরে এসে পড়ছে। তাদের বিমান মাঝেমধ্যেই এখানে হামলা করছে। এই শহর তাদের মর্টারের রেঞ্জের মধ্যে এসে গেছে। দুই দেশের সেনার মধ্যে এখন এখানে তীব্র লড়াই হচ্ছে।
'রাশিয়ার সেনা এলে পালাবো'
এই শহর সাতমাস রাশিয়ার দখলে ছিল। এখন ইউক্রেনের সেনার হাতে উপযুক্ত পরিমাণে গোলাবরুদ নেই। ফলে আবার এই শহর রাশিয়া অধিকার করে নিতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রবল হয়েছে।
পুটিনের জয়ের ফলে কী পরিবর্তন হতে পারে?
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুটিন বিপুলভাবে জিতেছেন। এরপর রাশিয়ায়, ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আসতে পারে?
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
পুটিনের জয় নিয়ে
পুটিন যে জিতবেন তানিয়ে কোনো সংশয় ছিল না। ২০২৩ সালে তিনি কিছুটা সংকটের মুখে পড়েছিলেন। প্রিগোঝিন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তার ভাগনার বাহিনী মস্কো অভিমুখে আসছিল। তারপর পুটিন সংকট সামলে নেন। তবে হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রেজিনা হেলার বলেছেন, ''এই ভোটের ফলে ভোটদাতার থেকে শাসকের ইচ্ছের প্রতিফলন বেশি হয়েছে।''
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
অনেক কারণ
পুটিনের এই জয়ের অনেকগুলি কারণ আছে। পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে। তাছাড়া যারা ইউক্রেন যুদ্ধের বিরোধিতা করছেন, তাদের কঠোর শাস্তি হচ্ছে। তাই ক্রেমলিনের শাসন আগের মতোই চলছে।
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP Photo/picture alliance
ইউক্রেন যুদ্ধের কী হবে?
এই জয়ের পর পুটিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগের মতোই আক্রমণ চালিয়ে যাবেন বলে রেজিনা হেলার মনে করেন। তার মতে, লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়তে পারে।
ছবি: Jose Colon/Anadolu/picture alliance
রাশিয়ায় কর বাড়বে?
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে পুটিন ফেডারেল অ্যাসেম্বলিকে বলেছেন, ট্যাক্স কোডের সংশোধন করতে। ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের গেরহার্ড ম্যানগট বলেছেন, ''সরকারের অর্থ দরকার। কর বাড়িয়ে অর্থ জোগাড় করা সম্ভব। সেই অর্থ দিয়ে যুদ্ধের খরচ মেটাতে পারবে সরকার।''
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
আরো সেনা লাগবে?
পশ্চিমা দেশগুলি এখন ইউক্রেনকে প্রয়োজনের তুলনায় কম সাহায্য করছে বা বেশি সাহায্য করতে পারছে না। এই অবস্থায় পুটিন আক্রমণ আরো জোরালো করতে পারেন। সেজন্য তার আরো সেনা দরকার হতে পারে এবং তিনি আরো সেনা নিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু এর ফলে রাশিয়ার মানুষ যুদ্ধক্লান্ত হতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
ছবি: Alexander Polegenko/TASS/dpa/picture alliance
নেতৃত্ব বদল?
বিশেষজ্ঞরা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে রাশিয়ায় অন্য নেতৃত্ব বদলের খুব একটা সম্ভাবনা নেই। পূর্ব ইউরোপ বিশেষজ্ঞ হানস হেনিং শ্রোডার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমি রুশ নেতৃত্বের মধ্যে তেমন কোনো দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রী, রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক, দেশের আর্থিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ক্রেমলিনের চিন্তার কোনো কারণ ঘটেনি।''
ছবি: Andreas Lander/ZB/picture alliance
6 ছবি1 | 6
তাতিয়ানা পেশায় চিকিৎসক। কুপিয়ানস্ক হাসপাতালের সহ-অধিকর্তা। রাাশিয়া আক্রমণ তীব্র করার পরেএও তিনি তার কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''রুশরা যদি এই শহর অধিকার করে, তাহলে আমি পালাব।'' আগেরবার রাশিয়া যখন শহর দখল করেছিল, তখন তারা সেখানেই ছিলেন।
তখন তাতিয়ানা রুশদের সঙ্গে তর্ক করেছিলেন, তাদের নির্দেশ মানতে চাননি। আহত রুশ সেনার চিকিৎসা করতে চাননি। তাই এবার তাকে দেখলেই রাশিয়ার সেনা গুলি করে মারবে বলে তিনি মনে করেন।
তাতিয়ানা এখনো আশা করছেন, ইউক্রেনের সেনা কুপিয়ানস্ক দখলে রাখতে পারবে। তবে হাসপাতালের অবস্থা এমনিতেই খুব খারাপ। আগে যে কর্মী ছিল, এখন তার পাঁচভাগের একভাগ আছে। দক্ষ কর্মীদের অভাব রয়েছে। সমানে গোলাগুলি চলছে। তাই শহরে যারা আছেন, তারা ভয় পাচ্ছেন।
'জিনিস গোছানো আছে'
অ্যান্ড্রি কুজনিশেঙ্কো ঠিক করে নিয়েছেন রুশ সেনা শহর দখল করলে তিনি আর থাকবেন না। তার স্যুটকেস গোছানো আছে। এই তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষিকাও গতবার রুশ অধিকারের সময় রাশিয়ার সিলেবাস মেনে পড়াতে চাননি।
প্রয়োজনে পরমাণু যুদ্ধ, ইউক্রেনকে হুমকি পুটিনের
এদিকে রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা ভবনে একটি ড্রোন এসে আঘাত করেছে বলে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সর্বশেষ অস্ত্র দিয়ে তা রক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে পরমাণু যুদ্ধে নামতেও দ্বিধা করবে না রাশিয়া, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন।
ছবি: Evgenia Novozhenina/REUTERS
প্রেসিডেন্টের নির্বাচন
চলতি সপ্তাহেই রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। পরিস্থিতি যা, তাতে পুটিন-ই এই নির্বাচনে জয়ী হবেন। রাশিয়াকে কার্যত বিরোধীশূন্য করে দিয়েছেন পুটিন। জেলে মৃত্যু হয়েছে পুটিন-বিরোধী রাজনীতিক নাভালনির।
ছবি: OLGA MALTSEVA/AFP/Getty Images
লড়াই আরো তীব্র হতে পারে
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বুধবার পশ্চিমা দেশগুলির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন। তার বক্তব্য, ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে। কৌশলী সিদ্ধান্ত নিয়ে রাশিয়াকে পরাস্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমনটা ঘটতে থাকলে ইউক্রেন-যুদ্ধ আরো বড় আকার ধারণ করবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ছবি: Alexei Gavrish/dpa/TASS/picture alliance
পাঁচ বিলিয়ন ইউরো পাবে ইউক্রেন
ইউক্রেনের জন্য পাঁচ বিলিয়ন ইউরোর বাজেট তৈরি করেছে ইইউ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে এবিষয়ে সমস্ত দেশ ঐক্যমত্য হয়েছে। এই বাজেট একদিকে যেমন ইউক্রেনের জন্য নতুন অস্ত্র কিনতে ব্যয় করা হবে, অন্যদিকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ইউক্রেনকে নতুন করে গড়ে তুলতেও কাজে লাগবে। মানবিক সাহায্যও করা হবে।
ছবি: Libkos/AP Photo/picture alliance
পুটিন-বিরোধী শক্তি সীমান্তে
ইউক্রেন সীমান্তে পুটিন-বিরোধী একাধিক স্বাধীনতাকামী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক সেনা হিসেবে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে। ইউক্রেনের সেনার পাশাপাশি তারাও রাশিয়ার সেনার সঙ্গে লড়াই করছে। বুধবার তেমনই তিনটি সংস্থার একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা সীমান্ত পার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে।
ছবি: Sergey Bobok/AFP
বেসামরিক মানুষের প্রতি আর্জি
ওই সংগঠনগুলি জানিয়েছে, রাশিয়ার সীমান্তে অবস্থিত সেনা ছাউনিগুলিতে এবার তারা আক্রমণ চালাবে। ফলে সাধারণ মানুষকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছে তারা। ক্রেমলিন অবশ্য এমন তথ্য স্বীকার করেনি।
সম্প্রতি ন্যাটোর সদস্য হয়েছে ফিনল্যান্ড। তারই জেরে ফিনল্যান্ড সীমান্তে বিপুল সেনা এবং অস্ত্র পাঠিয়েছে মস্কো।
ছবি: Alexander Kazakov/Kremlin Pool/ZUMAPRESS.com/picture alliance
সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড
ন্যাটো এবং রাশিয়ার থেকে সম-দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল ছিল সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন অভিযান চালানোর পর দুই দেশই তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। সম্প্রতি দুইটি দেশই ন্যাটোর সদস্যপদ পেয়েছে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ রাশিয়া।
ছবি: Miska Puumala/Lehtikuva/dpa/picture alliance
রাশিয়ার পরমাণু শক্তি বিপুল
একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুটিন বলেছেন, ''আমরা পরমাণু যুদ্ধ চাই না। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলি যদি লাল লাইন পার করে, তাহলে আমরাও তা করব।'' পুটিনের দাবি, তাদের কাছে যে পরিমাণ পরমাণু শক্তি আছে, পশ্চিমা বিশ্বের কাছে তা নেই।
ছবি: Gurinder Osan/AP/picture alliance
9 ছবি1 | 9
এখন অবশ্য তিনি বাড়িতেই থাকেন। কারণ, তার মাত্র দুইজন ছাত্রছাত্রী এখানে আছে। বাকিরা ইউক্রেন বা বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে গেছে।
তিনি পড়ুয়াদের ভিডিওর মাধ্যমে পড়ান। এই শিক্ষিকা জানিয়েছেন, বাইরে থাকা ছাত্রছাত্রীরা মাঝেমধ্যে জানতে চায়, তাদের বাড়ি এখনো অক্ষত আছে কিনা। আর যদি রুশ সেনা শহর অধিকার করে, তাহলে স্যুটকেস নিয়ে তিনিও পালাবেন।
সাহায্যের হাত
যারা খারকিভ থেকে চলে যেতে চান, তাদের বিনা পয়সায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে ইউক্রেনের এনজিও 'রোস টু দ্য হ্যান্ড'।
যে সব গ্রামে নিয়মিত গোলা এসে পড়ছে, বিদ্যুৎ নেই, সেখান থেকে বয়স্ক মানুষদের তারা অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। এরকমই দুই জন হলেন নাদিয়া ও ভ্যালেন্টিনা। তাদের খারকিভে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে খাবার, বাসস্থান দেয়া হয়েছে। সেখানে তাদের কোনো আত্মীয় নেই। কিন্তু তারা অন্তত গোলাগুলির মুখে আর নেই।