কুমারীত্ব পরীক্ষা বাদ দেয়ার আহ্বান
১ ডিসেম্বর ২০১৪সম্প্রতি এক বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ-র নারী অধিকার বিষয়ক সহযোগী পরিচালক নিশা ভারিয়া কুমারীত্ব পরীক্ষাকে নারীদের জন্য ‘বৈষম্যমূলক, ক্ষতিকর ও অবমাননাকর' বলে মন্তব্য করেছেন৷ অবিলম্বে এই পরীক্ষা নেয়া বন্ধ করতে ইন্দোনেশীয় পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷
এ ব্যাপারে কয়েকজন ইন্দোনেশীয় তরুণীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে৷
এরপর বিষয়টি নিয়ে এইচআরডাব্লিউ-র ইন্দোনেশিয়া গবেষক আন্দ্রেয়াস হার্সোনো-র সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ তিনি জানান, ‘নিয়োগপ্রাপ্তদের নৈতিকতা নিশ্চিত করতে' এই পরীক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করেন পুলিশের কয়েকজক চিকিৎসক ও কর্মকর্তা৷
ডয়চে ভেলে: ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ এখনও কেন কুমারীত্ব পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে?
আন্দ্রেয়াস হার্সোনো: অনেক বছর ধরেই কুমারীত্ব পরীক্ষা চলে আসছে৷ আমরা একজন সাবেক নারী পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছি৷ ১৯৬৫ সালে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদেরও এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল৷ গত শতকের ৮০ ও ৯০-এর দশকেও অনেক নারী পুলিশ সদস্য এই পরীক্ষার বিরোধিতা করেছিলেন৷ এরপর ২০০৯ সালে জাতীয় পুলিশের প্রধান একটি নতুন ব্যবস্থার প্রচলন করেন৷ এর আওতায় প্রার্থীদের ‘ধাত্রীবিদ্যা ও প্রসূতিবিদ্যা' বিষয়ক পরীক্ষার কথা বলা হয়৷ সেখানে ‘কুমারীত্ব পরীক্ষার' কথা উল্লেখ করা নেই৷
কিন্তু পুরনো অভ্যাস যেন বাদ পড়ছে না৷ পুলিশ পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে এখনও এটা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ আমরা এমন কয়েকজন পুলিশ চিকিৎসক ও কর্মকর্তার দেখা পেয়েছি, যাঁরা বলেছেন যে, এর মাধ্যমে তাঁরা আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সম্ভাব্য ‘যৌনকর্মীদের' বাদ দিতে চান৷ এজন্য তাঁরা ‘দুই আঙুলের পরীক্ষা' চালিয়ে দেখতে চান, আবেদনকারীদের সতীচ্ছদ আসলে অক্ষত আছে নাকি ছিঁড়ে গেছে৷
নারী আবেদনকারীদের মধ্যে এই পরীক্ষা কী ধরণের প্রভাব ফেলে?
আবেদনকারীদের মধ্যে যাঁরা ‘ব্যর্থ' হয়েছেন, তাঁদের বাদ দেয়া হয়নি৷ তবে সব নারীই বলেছেন, এই পরীক্ষা ছিল ব্যথাযুক্ত ও দুঃখজনক৷ পশ্চিম সুমাত্রার পাডাং-এর নারী পুলিশ সদস্যার অবশ্য এই পরীক্ষা গ্রহণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ তবে আমরা এমন নারী পুলিশ সদস্যও পেয়েছি, যাঁরা মনে করেন এটা ঠিক৷
যে আবেদনকারীরা এই পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাঁদের কী হয়?
আমরা এমন কোনো আবেদনকারী পাইনি, যিনি এই পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন৷ তবে বেশিরভাগ আবেদনকারীই এটা শুনে আশ্চর্য হয়েছিলেন যে, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাঁদের ‘ভেতরটাও' পরীক্ষা করে দেখা হবে, এমনকি যোনিপথও৷ একজন আবেদনকারী জানিয়েছেন, তিনি যদি কুমারীত্ব পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানাতেন তাহলে তিনি নির্বাচন পরীক্ষা থেকে বাদ পড়ে যেতেন৷
যাঁরা পরীক্ষায় পাস করতে পারেন না তাঁদের কি হয়?
সেটা কখনই বলা হয় না৷ বাছাই পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী, রক্ত পরীক্ষা থেকে শুরু করে এক্স-রে, সতীচ্ছদ থেকে চোখ পরীক্ষা – সবকিছুই একত্র করে একটা ‘স্কোর' দেয়া হয়৷ এই স্কোর একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের মধ্যে না থাকলে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় না৷
তবে জাতীয় পুলিশের আইন বিভাগের প্রধান বলেছেন, আবেদনকারীদের কুমারীত্ব পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের নৈতিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন৷ ‘‘একজন প্রার্থী যদি যৌনকর্মী হয়ে থাকে তাহলে আমরা কীভাবে তাঁকে চাকরিতে নেব?'' ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তার বক্তব্য থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, কুমারীত্ব এখনও একটা বড় বিষয়৷
কুমারীত্ব পরীক্ষা বাতিলের কোনো পরিকল্পনা কি আছে?
পুলিশ প্রধান জেনারেল সুতারমান দাবি করেছেন যে, আর কোনো কুমারীত্ব পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না৷ এই কথাটা তিনি লিখিতভাবে দিলে ভালো হতো৷
ইন্দোনেশীয় সরকারের প্রতি আপনার আহ্বান কী?
জাকার্তার পুলিশ বিভাগের প্রতি আহ্বান তারা যেন অবিলম্বে কুমারীত্ব পরীক্ষা বাতিল করে৷ এরপর সেটা যেন পুরো ইন্দোনেশিয়ায় কার্যকর হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে৷
(আন্দ্রেয়াস হার্সোনো ২০০৮ সাল থেকে এইচআরডাব্লিউ-র ইন্দোনেশিয়া গবেষক হিসেবে কাজ করছেন৷)