অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি দুইশ' কিশোরীর একজন কুমারী, কিন্তু গর্ভবতী৷ একটি গবেষণায় নিজেদের বিষয়ে এ তথ্যই জানিয়েছেন তারা৷ ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এক-দুই বছর নয়, দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ৭,৮৭০ নারীর উপর গবেষণা চালিয়েছেন মার্কিন গবেষকরা৷ ১৯৯৫ সালে গবেষণার শুরু, যখন এসব নারীদের বয়স ছিল ১২ থেকে ১৮ বছর৷ ঐ নারীদের মধ্যে ৪৫ জন জানিয়েছেন তাঁরা কুমারী, কিন্তু গর্ভবতী হয়েছেন৷ অর্থাৎ তাঁরা যোনী সঙ্গম না করেও গর্ভধারণ করেছেন৷ এই নারীরা গবেষণায় অংশ নেয়া মোট নারীদের ০.৫ ভাগ৷
তাঁদের সবাই জানিয়েছে, ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ পদ্ধতিতে তাঁরা কেউ গর্ভবতী হননি৷ ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল বিএমজে মঙ্গলবার তাদের ক্রিসমাস প্রকাশনায় এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে৷ যেখানে গবেষকরা লিখেছেন, এই ৪৫ জনের মধ্যে নানাভাবে গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে বা ঘটেছে৷
বয়ঃসন্ধি থেকে প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যকালীন সময়ের চিত্রই উপস্থাপন করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে – যা যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক এবং ধর্মীয় ভাবধারাকেও তুলে ধরেছে৷ এই গবেষণায় কিশোরী ও তরুণীরা তাঁদের যোনি সঙ্গম, গর্ভবতী হওয়া এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন৷ এই ১৪ বছর ধরেই তাঁরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অনলাইনে৷
জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা
কিশোর-কিশোরীরা ভোগেন নানা মানসিক সমস্যায়৷বড়রা ওদের দিকে একটু খেয়াল রাখলেই হয়তো বেচে যেতে পারে ফুলের মতো সুন্দর অনেক জীবন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কেমন আছে নিজের সন্তান ?
অনেক মা-বাবা প্রায়ই জানেন না যে তাদের আদরের সন্তান কেমন আছে৷ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ দুর্ঘটনা আর দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে আত্মহত্যা৷ জার্মানিতে প্রায় প্রতিদিনই দু’একজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: fotolia/Mikael Damkier
শেষ চিঠি
লেনার মা সুজানে বলেন, তাঁর মেয়ে ১৬ বছর বয়সে ব্লেড এবং ছুরি দিয়ে কয়েকবারই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো৷ প্রথমদিকে বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষক কেউ সেটা খেয়ালই করেনি৷ চিঠির বাক্সে লেনার লেখা বিদায়ী চিঠি পেয়ে বুঝেছেন, যে তাঁর মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে, জরুরি সাহায্য বা চিকিৎসার প্রয়োজন৷
ছবি: DW/Janine Albrecht
অনুভূতির প্রকাশ
হাইডেলব্যার্গ ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের প্রফেসার ড. রমুয়াল্ড ব্রুনার বলেন, যদি কেউ নিজের হাত বা পায়ের রগ কেটে ফেলে বা এ ধরনের কিছু একটা করে বসে, তাহলে বুঝতে হবে এটা ওদের রাগ, দুঃখ বা হতাশার প্রকাশ মাত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেকে কষ্ট দেওয়া
১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয় এবং সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হয়৷ সমীক্ষার ফলাফলে ছেলেদের মধ্যে ৮ জন এবং মেয়েদের মধ্যে ১৮ জন স্বীকার করেছে, তাদের এই ছোট্ট জীবনে অন্তত তিনবার হাত পা কেটেছে, নিজেদের কষ্ট দিয়েছে, তাদের জীবনের দুঃখ, কষ্ট বা হতাশা ভুলে যাবার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল
আজকের আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকেই যোগাযোগের জন্য বেছে নেয় কৃত্রিম মাধ্যম ইন্টারনেট, ফেসবুক৷ তাদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারনেট নেশাগ্রস্ত৷ এদের অনেকের মতে, মোবাইল ছাড়া জীবন চলাই সম্ভব নয়৷
ছবি: Fotolia/Konstantin Yuganov
আসল বন্ধু পাওয়া যায়না
একথা ঠিক, যে আজকের দিনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে এবং ব্যবহারও হচ্ছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব যোগাযোগ আসল বন্ধু পেতে কোনো কাজে আসেনা৷ বরং এসব বিষণ্ণতার দিকেই ঠেলে নিয়ে যায় এবং ভয় ও আত্মহত্যার চিন্তা করতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বসঃসন্ধিকাল
ছেলে মেয়েদের বসঃসন্ধির সময় ওদের আত্মসম্মানবোধ, অকারণেই মন খারাপ হওয়া বা ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে৷ তবে এ সব সমস্যা যদি ঘনঘন দেখা দেয় বা বাড়াবাড়ি হয়, তাহলে সেটা মানসিক অসুস্থতা বলেই ধরতে হবে এবং চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে, বলেন ড.ব্রুনার৷
ছবি: Fotolia/Alliance
শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে
কিশোর-কিশোরীদের এই ধরনের সমস্যায় স্কুলের শিক্ষকদের আরো বেশি এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচনা করতে হবে
মানসিক সমস্যায় শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, ছোট-বড় অনেকেই ভোগে এবং আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়৷ এ ধরনের সমস্যাগুলোর শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Fotolia/JenKedCo
শরীর চর্চা
রাগ, দুঃখ বা হতাশা থেকে সহজে বের হওয়ার উপায় শারীরিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে ব্যস্ত থাকা৷ কোনো কাজে যুক্ত হওয়া৷ হতে পারে খেলাধুলা বা যে কোনো ধরনের শরীরচর্চা৷ হতে পারে বাগানের কাজে কাউকে সাহায্য করা, যে কাজ সত্যিকার অর্থেই মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
তাঁদের বয়স এবং ধর্মের প্রতি অনুরাগও রেকর্ড করা হয়েছিল৷ প্রত্যেকের বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যৌন সম্পর্ক এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তাঁরা মেয়েদের সাথে কতটা আলোচনা করেছে? এমনকি যেসব স্কুলে তারা পড়েছেন, সেসসব স্কুলের পরিচালকদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পাঠ্যসূচিতে যৌন শিক্ষা রাখা হয়েছে কিনা?
গবেষণায় অংশ নেয়া নারীদের এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩১ ভাগ গির্জায় গিয়ে শপথ নিয়েছিলেন৷ রক্ষণশীল খ্রিস্টান গির্জাগুলোতে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের অনুমোদন দেয়া হয় না৷ এর বিকল্প হিসেবে ঐ শপথ নেয়া যায়৷
দেখা গেছে, কুমারী নয়, কিন্তু বিয়ে করেননি অর্থাৎ ‘নন-ভার্জিন' এমন ১৫ ভাগ নারী যারা গর্ভধারণ করেছেন, তাঁরা গির্জায় এ ধরনের শপথ নিয়েছিলেন৷ গবেষণায় দেখা গেছে কুমারী মায়েদের গড় বয়স ১৯.৩ বছর আর ‘নন-ভার্জিন' মায়েদের গড় বয়স ২১.৭ বছর৷
নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োস্ট্যাটিক্সের অধ্যাপক অ্যামি হেরিং, যিনি এই গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক, তিনি এএফপিকে বলেছেন, তাঁরা সরাসরি কোনো প্রশ্ন রাখেননি যে তাঁরা কুমারী অবস্থায় গর্ভধারণ করেছেন কিনা, বরং এমন অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর থেকে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন৷তবে এসব প্রশ্ন অনেকের কাছে পরিষ্কার না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং অনেকে তথ্য গোপন করার জন্য যোনী সঙ্গমের ব্যাপারটি এড়িয়ে গিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন হেরিং৷
গবেষণার ফলে যৌন শিক্ষা, এ বিষয়ে সচেতনতা এবং যৌন জীবন সম্পর্কে সঠিক তথ্য কিভাবে পাওয়া সম্ভব সে বিষয়গুলো বেরিয়ে এসেছে৷