1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কুম্ভ হোক বা বেঙ্গালুরু, রাজনীতি চলে একই নিয়মে

৫ জুন ২০২৫

পদপিষ্ট হয়ে মানুষ মরা ভারতে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি, কূটনীতি কারও কিছু যায় আসে না। তাই মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি হয়।

বেঙ্গালুরুর স্টেডিয়ামের বাইরে মানুষের ভিড়
বেঙ্গালুরুতে স্টেডিয়ামের বাইরে মানুষের ভিড়ছবি: Stringer/REUTERS

'আমাদের মতো দেশে মানুষের বেঁচে থাকার কোনো মূল্য নেই, বুঝলে ভায়া!' পেশাজগতের এক অগ্রজ সহকর্মী এক সময় মাঝে মাঝেই একথা বলতেন। বলতেন, সাংবাদিক জীবনে অসংখ্য ঘটনা দেখার চোখ থেকে। সে সময় তার কথা যে খুব ভালো লাগতো এমন নয়। তর্কও করেছি বিস্তর। কিন্তু ইদানীং মনে হয়, ঠিকই বলতেন তিনি। এদেশে মানুষের জীবনের সত্যিই কোনো দাম নেই। মানুষের জীবনের এক এবং একমাত্র মূল্য-- রাজনীতি।

বুধবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে। মঙ্গলবার রাতে আইপিএল জেতার পর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দল কর্ণাটকের রাজধানীতে পৌঁছেছিল জয় উদযাপন করতে। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। ভারতের স্টেডিয়ামগুলির তুলনায় চিন্নাস্বামী বহরে ছোট। সব মিলিয়ে ৩৫ হাজার মানুষ প্রবেশ করতে পারেন সেখানে। রাজ্যের ক্রিকেট কর্মকর্তারা ঠিক করেছিলেন, ওই অনুষ্ঠান দেখার জন্য সাধারণ মানুষকে পাস দেওয়া হবে। লাইন দিয়ে সেই পাস নিতে হবে স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে।

পরিকল্পনায় ভুল ছিল না। টিকিট কাটার মতোই স্টেডিয়ামের বাইরে পাস বিলির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভারতের যে কোনো শহরের যে কোনো গলির সামান্য কাউন্সিলরও জানেন, এদেশে ক্রিকেট নিয়ে মানুষের মধ্যে কী ভয়ংকর উন্মাদনা। ফলে বিজয়ী দলকে দেখতে স্টেডিয়ামে যে জনস্রোত আছড়ে পড়বে, তা আগে থেকে জানা ছিল না, এমনটা ভাবার কারণ নেই। অথচ যা ঘটল, তাতে বোঝা গেল, এই পরিমাণ মানুষ এসে জড়ো হবে, প্রশাসন বুঝতে পারেনি। কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া কার্যত সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসন কেন আগে থেকে একথা বুঝতে পারেনি? যে কোনো ম্যাচে যেভাবে ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট করা হয়, এদিন কেন সে ব্যবস্থা করা হয়নি? কেন ওই ভয়ংকর ভিড়ের মধ্যে লাঠিচার্জ করলো পুলিশ? বস্তুত, পুলিশের লাঠিচার্জের পরেই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা শুরু হয়।

আগের প্যারাগ্রাফ থেকে যদি ক্রিকেট, বেঙ্গালুরু, কংগ্রেসি, সিদ্দারামাইয়া শব্দগুলিকে সরিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে, প্রায় এই বাক্যগুলিই লিখতে হয়েছিল কয়েক মাস আগে মহাকুম্ভ মেলা প্রসঙ্গে। সেখানেও এক শাহি স্নানের সকালে এমনই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, প্রশাসন কেন আগে থেকে যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি! কেন লাখ লাখ মানুষকে যেতে দেওয়া হয়েছিল গঙ্গার ধার পর্যন্ত! কেন ক্রাউড কন্ট্রোলের যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয়নি!

কুম্ভ হোক অথবা ক্রিকেট-- যে বিষয়টি কমন থেকে গেছে, তা হলো রাজনীতি। প্রয়াগরাজের কুম্ভ মেলার মূল আয়োজক ছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার অর্থাৎ, যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকার। কুম্ভের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী রাজনীতিবিদেরা ত্রাহি ত্রাহি রব তোলেন। যোগী আদিত্যনাথ কুম্ভ আয়োজনে কতটা অপদার্থ, তা বলতে শুরু করেন তারা। অন্যদিকে, বিজেপির তরফ থেকে বলা হয়, এটা রাজনীতি করার সময় নয়। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দাঁড়াতে হবে মৃতদের পরিবারের পাশে। বেশ কয়েকবছর আগে পশ্চিমবঙ্গে লোকনাথ বাবার কচুয়া ধামে যখন ঠিক এমনই কাণ্ড ঘটেছিল, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারও ঠিক সে কথাই বলেছিল। এখন যে কথা বলছে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার। সিদ্দারামাইয়া বার বার বলছেন, এটা রাজনীতি করার সময় নয়। আর দেশ জুড়ে বিজেপি কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার ক্রাউড ম্যানেজমেন্টে কতটা ব্যর্থ, তার দলিল রচনা করছে সমাজ মাধ্যমে এবং টেলিভিশনের স্টুডিওতে।

এসব ক্ষেত্রে যা ঘটে থাকে, এবারেও তা-ই ঘটছে। মৃতদের পরিবারকে নগদে কিছু টাকা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুনছে। খবরের কাগজ হেডলাইন করছে। রাস্তাঘাটে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এই কোনো আলোচনা, প্রতর্ক-বিতর্কেই ওই মানুষগুলির কথা বলা হচ্ছে না, বেঘোরে যাদের প্রাণ চলে যাচ্ছে কখনো প্রয়াগে, কখনো পশ্চিমবঙ্গে, কখনো বেঙ্গালুরুতে। প্রশ্ন উঠছে না, কেন বার বার একই ঘটনা ঘটতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যদি সেই প্রশ্ন কেউ তুলতো, তাহলে সহজ উত্তরটি দিয়ে দেওয়া যেত। এদেশে মানুষের বাঁচার দর খুব সস্তা। তাই এই ধরনের ইভেন্ট নিয়ে যতটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, এদেশের কোনো প্রশাসনই তা করে না। করার প্রয়োজন বোধ করে না। প্রশাসনের কাছে নেতাদের, ভিআইপিদের নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ ধরনের ইভেন্টে নিরাপত্তাকর্মীদের সিংহভাগ মনোনিবেশ করে ভিআইপিদের সুরক্ষায়। সাধারণ মানুষের সুরক্ষা কখনোই তত গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, এখনো নেই। বেঙ্গালুরুতেও না, কুম্ভতেও না।

এমন স্ট্যাম্পিডে নেতা, নিদেনপক্ষে কোনো ভিআইপির মৃত্যু হয়েছে, এমনটা কেউ শুনেছে কখনো? শুনবে না, কারণ তাদের জীবনের দাম উলুখাগড়াদের চেয়ে সামান্য বেশি। উলুখাগড়াদের জীবনের দর নিলামে না বাড়লে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ