রাশিয়া বুধবার জানিয়েছে, কুরস্কে ইউক্রেনের সেনা ঢুকে পড়েছে। সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের সেনা এখন কুরস্কে ইউক্রেনের সেনার সঙ্গে লড়াই করছে। কুরস্কের কাছে পরমাণু কেন্দ্রে নিরাপত্তা অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুটিন মনে করছেন, ইউক্রেন যা করেছে তা বিশাল একটা উসকানি ছাড়া আর কিছু নয়।
কুরস্কের কার্যকরী গভর্নর অ্যালেক্সি স্মিরনভ জানিয়েছেন, তিনি ৭ অগাস্ট থেকে জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভিডিও কনফারেন্সে রাশিয়ার চিফ অফ জেনারেল স্টাফ গেরাসিমভ প্রেসিডেন্ট পুটিনকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সেনার একটি ইউনিট কুরস্কে ঢুকে পড়েছে। প্রায় এক হাজার সেনা সেখানে আক্রমণ চালাচ্ছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, ''শত্রুসেনার রাশিয়ার আরো ভিতরে ঢোকার চেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছে। সেখানে ইউক্রেনের সেনার বিরুদ্ধে অপারেশন চলছে। ''
ওই এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেয়া হয়েছে। গভর্নর স্মিরনভ জানিয়েছেন, ''গত ২৪ ঘণ্টায় আমারা যাবতীয় আক্রমণ প্রতিহত করেছি।''
রাশিয়া জানিয়েছে, কামান ও সাঁযোয়া যান নিয়ে ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে রাশিয়ার সীমান্তে হামলা করে। সীমান্তের কাছেই রাশিয়ার দুইটি শহর আছে।
রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্ততপক্ষে পাঁচজন মারা গেছেন এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার মিসাইলে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের শিশু হাসপাতাল
ইউক্রেনের পাঁচটি শহরে আবার মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷ হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতাল৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানান, হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন ১৪০ জন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
বিধ্বস্ত শিশু হাসপাতাল
রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের অকমাডিট শিশু হাসপাতাল৷ এটিই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল৷ মিসাইলের আঘাতে হাসপাতাল ভবনটির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সেখানে কর্মরত চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
ভীতিকর পরিস্থিতি
ভীতিকর পরিস্থিতি
হামলার সময়কার ভীতিকর অবস্থান বর্ণনা করেছেন চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া৷ তিনি বলেন, যখন মিসাইল এসে হাসপাতালে আঘাত হানে তখন পুরো বিষয়টি ‘সিনেমার দৃশ্যের’ মতো মনে হচ্ছিল৷ তিনি ‘ভয়ঙ্কর তীব্র আলো’ দেখতে পেয়েছিলেন জানিয়ে আরো বলেন, ‘‘এর পরপরই বিকট এবং ভীতিকর শব্দ শুনতে পাই৷’’ হামলায় হাসপাতালের একটি অংশ গুঁড়িয়ে গেছে, অন্য অংশে আগুন ধরে যায় বলেও জানান তিনি৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
মোট নিহত ৩৬, হাসপাতালে ২
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানিয়েছেন, কয়েকটি শহরের এ হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন আরো ১৪০ জন৷ কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো জানিয়েছেন, মিসাইল হামলায় হাসপাতালের এক চিকিৎসকসহ দুই ব্যক্তি মারা গেছেন৷ উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানিয়েছেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কেউ আটকা থাকতে পারেন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
থমকে গেছে চিকিৎসাসেবা
রাশিয়ার হামলায় থমকে গেছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা৷ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের দ্রুত কাছের হাসপাতালগুলোতে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় একটি টিভি চ্যানেলকে জানিয়েছে, যে ওয়ার্ডটিতে মিসাইল আঘাত হেনেছে সেখানে অন্তত ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
দায় অস্বীকার রাশিয়ার
বিবিসি জানিয়েছে, হাসপাতালে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে রাশিয়া৷ উল্টো ইউক্রেনের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে তারা৷ রাশিয়া দাবি করছে, হাসপাতালটি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইলের একটি অংশের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ কিন্তু ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে৷
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
গণহত্যার অভিযোগ
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে গণহত্যার চালানোর অভিযোগ এনেছেন কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে রাশিয়ার মিসাইল ও ড্রোন কিভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ শহরকে তছনছ করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের হত্যা করেছে৷’’ রাশিয়ার হামলায় একটি মাতৃ ও প্রসূতি হাসপাতালও আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, সেখানে অন্তত সাত জন মারা গেছেন৷
ছবি: STATE EMERGENCY SERVICE OF UKRAINE/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি জেলেনস্কির আহ্বান
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লিখেছেন, রাশিয়ার ছোঁড়া বিভিন্ন ধরনের ৪০টিরও বেশি মিসাইল কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভিই রি, স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরে আঘাত করেছে৷ ইউক্রেনের জনগণ, ভূমি ও শিশুদের উপর রাশিয়ার এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: EPA/MICHAEL BUHOLZER
7 ছবি1 | 7
ইউক্রেনের সেনা রাশিয়ার সুদঝা শহর পর্যন্ত এসে গেছে বলে রিপোর্ট। এই শহরই ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস যাওয়ার কেন্দ্র।
পরমাণু কেন্দ্রে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন
বুধবার সন্ধ্যায় রাশিয়া কুরস্কের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ন্যাশনাল গার্ড নিয়োগ করেছে। এই কেন্দ্র ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে। এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চারটি রিঅ্যাকটার ব্লক আছে। সেখান থেকে দুই গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। কুরস্ক-সহ ১৯টি অঞ্চলে এখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়।
ন্য়াশনাল গার্ডের তরফে জানানো হয়েছে, অন্তর্ঘাত আটকাতে এবং তাদের জমি পুনরুদ্ধার করতে অতিরিক্ত বাহিনী সেখানে পাঠানো হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, সেনা ও এফএসবি ইউনিট মিলে পাল্টা আঘাত হানছে।
মন্তব্য করেননি জেলেনস্কি
ইউক্রেন স্পষ্ট করে এই আক্রমণের কথা জানায়নি। ইউক্রেনের সেনা বরং বলেছে, রাশিয়া তাদের সীমান্তের গ্রাম আক্রমণ করেছে।
তার দৈনিক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি কুরস্ক প্রসঙ্গ তোলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ''রাশিয়ার উপর যত বেশি করে চাপ সৃষ্টি করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি আমরা শান্তির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব। আমাদের শক্তির মাধ্যমে শান্তি অর্জন করতে পারব।''
ইউক্রেন কুরস্কের কাছে সুমি এলাকার ২৩টি বসতি থেকে ছয় হাজার মানুষকে সরিয়ে দিয়েছে।
ইউক্রেনের এই হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ''পরিস্থিতি আরো ভালো করে বোঝার জন্য আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেি। ইউক্রেন তাদের অপারেশনের বিষয়ে বলবে, সেটাই ঠিক হবে। আমরা চাই, তারা নিজেদের রক্ষা করার বিষয়টির উপর যেন জোর দেয়।''