ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা রাশিয়ার ভূখণ্ডে ঢুকে মস্কোর সেনার অস্ত্র ও অন্য জিনিস সরবরাহের প্রক্রিয়াটা ব্যহত করতে চেয়েছে। রাশিয়ার সেনা সহজে দনেৎস্ক যেতে পারবে না।
মুখপাত্র বলেছেন, ''রাশিয়া যখনই ন্যায্য শান্তি মেনে নেবে, তখনই ইউক্রেনের সেনা কুরস্ক ছেড়ে চলে আসবে। ইউক্রেন রাশিয়ার এলাকা নিতে চায় না। তারা নিজেদের মানুষের জীবন রক্ষা করতে চায়। এই কুরস্ক থেকে সম্প্রতি দুই হাজার বার আক্রমণ করেছে রাশিয়া।''
তার দাবি, ''ইউক্রেনের সেনা ইউরোপের সভ্য সেনা। তারা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলে। তারা কেবল সামরিক বাহিনীকেই টার্গেট করে।''
তিনি বলেছেন, ''রাশিয়াই ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল। তাই এখন যুদ্ধ রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনো অন্যায় নেই।''
জেলেনস্কির দাবি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দাবি করেছেন, ''ইউক্রেনের সেনা এখন রাশিয়ার কুরস্ক এলাকায় ৭৪টি বসতি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।''
জেলেনস্কি বলেছেন, কুরস্কের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কম্যান্ডার ইন চিফের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং নিয়মিত রিপোর্ট পাচ্ছেন।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর ন্যাটো
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর ৩২টি পশ্চিমা রাষ্ট্রের সামরিক জোট ন্যাটোর অবস্থান নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, আবার ফিরে আসছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধের পরিস্থিতি।
ছবি: Gints Ivuskans/Getty Images/AFP
ন্যাটোয় ঢুকবে ইউক্রেন?
ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ কয়েকবছর ধরেই। কিন্তু দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্যপদের জন্য আবেদন করে রাশিয়ার আক্রমণের পর, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। ইউক্রেনের প্রতি ন্যাটোভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সদস্যপদ প্রাপ্তি এখনও অনেক দূরের পথ। অনেক দেশই মনে করে এমন পদক্ষেপ রাশিয়াকে আরো উসকে দিতে পারে। তাছাড়া দেশটির বিভিন্ন নীতি এখনও ন্যাটোর মানে পৌঁছায়নি বলেও মনে করে অনেক দেশ।
ছবি: Artur Widak/NurPhoto/picture alliance
ন্যাটোর নতুন সদস্য
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলা দুই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোয় যোগ দিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত ফিনল্যান্ডের। সোভিয়েত ইউনিয়নের ফিনল্যান্ড আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, এমন ক্রমবর্ধমান আশঙ্কা থেকেই মূলত নিরপেক্ষতা নীতি ভেঙে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ন্যাটোতে যোগ দেয় দেশটি। সুইডেন জোটে যোগ দেয় ২০২৪ সালের মার্চে।
ছবি: Pond5 Images/IMAGO
পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতি
রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের আশঙ্কায় রয়েছে পূর্ব ইউরোপের নানা দেশ। পূর্ব ইউরোপের আটটি দেশে ন্যাটোর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। ন্যাটো জানিয়েছে, এর মাধ্যমে জোটটি আবারও স্পষ্ট করছে, 'জোটের এক সদস্যের ওপর আক্রমণের মানে সবাইকে আক্রমণ'। পূর্ব ইউরোপের যেসব দেশে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে সেগুলো হচ্ছে বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়া।
ছবি: U.S. Army/Zuma/imago images
বাল্টিকে সবচেয়ে বড় মহড়া
বাল্টিক সাগর এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে ১৯৭১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সামরিক মহড়া করে আসছে ন্যাটো। এই মহড়াকে সংক্ষেপে বলা হয় বাল্টোপস। ২০২৪ সালের ৭ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বাল্টোপসের ৫৩তম সংস্করণ ন্যাটোর ইতিহাসে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া। ২০টি দেশ থেকে আসা নয় হাজার সৈন্য অংশ নেন এতে। ৩০টি যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও স্থল ও আকাশপথেও মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Malukas
নড়বড়ে মার্কিন অবস্থান
২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ডনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে ইউরোপে ন্যাটোর সহযোগীদের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। ন্যাটোর চুক্তি অনুসারে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নিজেদের জিডিপির দুই শতাংশ ন্যাটোর প্রতিরক্ষা বাজেট হিসাবে দেয়ার কথা। বেশিরভাগ দেশই তা না করায় যুক্তরাষ্ট্রকেই জোটের প্রতিরক্ষা বাজেটের বড় অংশ বহন করতে হয়। এ নিয়ে সমালোচনা করায় জোটের অংশীদারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।
ছবি: Nicholas Kamm/AFP
ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবার জিততে পারেন ডনাল্ড ট্রাম্প। ন্যাটোর সদস্যদের নিয়ে তার সাম্প্রতিক মন্তব্য ভাবিয়ে তুলেছে অনেককে। ফেব্রুয়ারিতে প্রচারণায় তিনি বলেছেন, কোনো দেশ বাজেট বরাদ্দ না করলে তাদের আক্রমণে তিনি রাশিয়াকে 'উৎসাহিত' করবেন। এই মন্তব্যকে 'ভয়াবহ এবং অনাকাঙ্খিত' বলে নিন্দা জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। এসব মন্তব্যে 'ন্যাটোর সদস্যরা ঝুঁকিতে পড়ছে' বলে মন্তব্য করেছেন ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ।
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Vucci
শীর্ষে সম্ভাব্য পরিবর্তন
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে জোটের নতুন প্রধান নিয়োগ দেয়া হতে পারে। বর্তমান প্রধান নরওয়ের ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গের মেয়াদ বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে। তবে এবার সে পদে বিদায়ী ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বেশ এগিয়ে রয়েছেন। হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাকে সরাসরি সমর্থনও জানিয়েছে। ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নানা বিষয়ে সহজে বোঝাপড়ার করার ইতিহাস রয়েছে তার।
ছবি: NATO
ইউরোপিয়ান সেনাবাহিনী
ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ন্যাটোর সদস্যদের মধ্যে ইউরোপের নিরাপত্তা বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব সংকটে পড়েছিল। এরপরই ইউরোপের রাজনীতিতে জোরেসোরে উচ্চারিত হতে থাকে ন্যাটোর বিকল্প একটি ইউরোপীয় সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব। এই প্রস্তাবের মূলে ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। তবে এখনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা এ নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনায় পৌঁছাতে পারেননি।
ছবি: FABRICE COFFRINI/AFP
8 ছবি1 | 8
তিনি জানিয়েছেন, ''কঠিন ও তীব্র লড়াই সত্ত্বেও আমাদের সেনা কুরস্কে এগিয়ে যেতে পেরেছে। ৭৪টি বসতি আমাদের দখলে আছে। সেখানে আমরা পরিদর্শনের কাজ করছি এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার কাজ করছি।''
জেলেনস্কি বলেছেন, ''আমি আমার সেনার প্রতি কৃতজ্ঞ। পরবর্তী পদক্ষেপের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।''
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দাবি, ''আমরা আবার দেখিয়ে দিয়েছি, ইউক্রেন নিজের স্বার্থরক্ষা করতে পারে। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি। আমরা আমাদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারি।''
রাশিয়া যা বলেছে
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তারা কুরস্কে ইউক্রেনের সেনার নতুন আক্রমণ প্রতিহত করেছেন। রাশিয়ার সেনা বেশ কয়েকটি গ্রামে তারা ইউক্রেনের সেনার আক্রমণের মোকাবিলা করতে পেরেছে।
রাশিয়া এখানে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বিমানহামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের সেনার মোকাবিলা করছে বলে জানা গেছে।
চেচেন আখমত বিশেষ বাহিনীর কম্যান্ডার মেজর জেনারেল আপতি আলকুদিনভ বলেছেন, ''ইউক্রেনের সেনাকে থামানো সম্ভব হয়েছে। তারা জানে, তারা যে ঝটিতি আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল তাতে কাজ হচ্ছে না।''
বাইডেনের মন্তব্য
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ''ইউক্রেনের সেনার কুরস্ক অভিযানের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন এখন সত্যিকারের সংকটের মধ্যে পড়েছেন।''
তিনি জানিয়েছেন, ''মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। ইউক্রেনের সেনা আরো ভিতরে ঢুকতে চাইছে।''
তবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেছেন, ''ইউক্রেন কুরস্ক অভিযানের কথা আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়নি। এর মধ্যে আমাদের কোনো যোগ নেই। এটা তাদের সিদ্ধান্ত।''