ইরাকের উত্তরে থাকা ইরানের বিরোধী কুর্দ গোষ্ঠীদের অস্ত্র সংবরণ করিয়ে ক্যাম্পে রাখবে বাগদাদ৷ ইরাকের সরকারের সঙ্গে এমন চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান৷ এজন্য ইরাককে সময়ও বেঁধে দিয়েছে তারা৷
কুর্দদের নিয়ে ইরান এবং ইরাকের চুক্তিছবি: Felipe Dana/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
উত্তর ইরাকের কুর্দ অধ্যুষিত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে একাধিক কুর্দ গোষ্ঠী আছে। ইরানের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীগুলি একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ইরানে। তাদের প্ররোচনাতেই ইরানের কুর্দ জনতা বার বার বিদ্রোহ ঘোষণা করছে। বিশেষ করে ইরানে পুলিশ হেফাজতে এক কুর্দ নারীর মৃত্যুর পর থেকে অশান্ত হয়ে উঠেছে ইরান।
এই পরিস্থিতিতে ইরাকের উপর চাপসৃষ্টি করছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি জানিয়েছেন, ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্য়ে ইরাককে ব্যবস্থা নিতে হবে। কুর্দ গোষ্ঠীর নেতা এবং কর্মীদের অস্ত্র সংবরণ করাতে হবে। তাদের জন্য নির্দিষ্ট ক্যাম্প তৈরি করতে হবে। সেখানে তাদের ঢোকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কোনোভাবেই যেন তারা আর লড়াইয়ে যোগ দিতে না পারে।
কেন আক্রমণের মুখে কুর্দ জনগোষ্ঠী
একদিকে তুরস্ক, অন্যদিকে ইরান, জোড়া আক্রমণের মুখে কুর্দরা। কেন এই আক্রমণ?
ছবি: DHA/Demirören Nachrichten Agentur
তুরস্কের হামলা
সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব সিরিয়া এবং ইরাকে কুর্দ জনগোষ্ঠীর উপর হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। তুরস্কের দাবি, কুর্দ সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়। যদিও কুর্দদের দাবি, হামলায় বহু বেসামরিক মানুষ এবং শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৮৪ জন নিহত হয়েছে বলে কুর্দদের দাবি।
ছবি: North Press Agency via REUTERS
তুরস্কের দাবি
তুরস্কের দাবি, সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, তা কুর্দ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পিকেকে ঘটিয়েছে। ওই বিস্ফোরণে ছয় জনের মৃত্যু হয়ছে। যদিও পিকেকে জানিয়েছে, তারা ওই বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত নয়।
ছবি: North Press Agency via REUTERS
কুর্দদের অবস্থান
মধ্যপ্রাচ্যে তিন কোটি ৫০ লাখ কুর্দের বাস। পৃথিবীর অন্যতম বড় জনগোষ্ঠী কুর্দদের নিজেদের কোনো দেশ নেই। তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, ইরান এবং আর্মেনিয়ার একাংশে তাদের বসবাস। প্রায় প্রতিটি দেশেই তারা সংখ্যালঘু।
ছবি: North Press Agency via REUTERS
কুর্দিস্তানের লড়াই
বিভিন্ন দেশে কুর্দদের সংগঠন স্বাধীন কুর্দিস্তানের লড়াই করছে। পিকেকে, ওয়াইপিজি এমনই সব সংগঠন। তুরস্ক এই দুই সংগঠনকেই সন্ত্রাসী বলে মনে করে। অ্যামেরিকা পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় রাখলেও ওয়াইপিজি-কে রাখেনি। সিরিয়ায় আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন সেনাকে সাহায্য করেছে ওয়াইপিজি।
ছবি: Wostok Press/MAXPPP/picture alliance
তুরস্কের বক্তব্য
তুরস্কের দাবি, কুর্দ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি লাগাতার তাদের দেশে আক্রমণ চালাচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান জানিয়েছেন, শুধু বিমান হামলা নয়, সিরিয়া এবং ইরাকে ঢুকে আক্রমণ চালাবে তুরস্কের স্থলসেনা। এর আগে ২০১৬ সাল থেকে এমন তিনটি অপারেশন চালিয়েছে তুরস্ক। এবার চতুর্থ অপারেশন হবে বলে জানিয়েছেন এর্দোয়ান।
ছবি: Eren Bozkurt/AA/picture alliance
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সিরিয়া যুদ্ধের কারণে বিপুল পরিমাণ সিরিয়ার উদ্বাস্তু তুরস্কে এসে থাকছেন। এর ফলে তুরস্কের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর্দোয়ান চাইছেন, সিরিয়ার কুর্দ অধ্যুষিত এলাকা খানিকটা দখল নিয়ে সেখানে সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের পাঠাতে। সে কারণেই তার এই লাগাতার আক্রমণ।
ছবি: Fatih Aktas/AA/picture alliance
ইরানের আক্রমণ
সম্প্রতি ইরানে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। পুলিশের হাতে এক কুর্দ নারীর মৃত্যুর পর আন্দোলন আরো বড় আকার নেয়। ইরানের দাবি, কুর্দ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই আন্দোলনে মদত দিচ্ছে। এবং সে কারণেই সম্প্রতি কুর্দদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে ইরান।
ছবি: SalamPix/ABACA/picture alliance
সিরিয়ার অবস্থান
সিরিয়ার বাশার সরকারের সঙ্গেও কুর্দদের লড়াই চলছে। রাশিয়া এবং ইরানের মদতপুষ্ট বাশার সরকার গৃহযুদ্ধের মধ্যেই সিরিয়ার একটি বড় অংশ নিজেদের হাতে ফিরিয়ে নিতে পেরেছে। কিন্তু কুর্দ অধ্যুষিত অঞ্চল এখনো তারা পায়নি। সেখানে কুর্দদের সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে।
ছবি: Steven Hutchungs/TNN/dpa/picture alliance
8 ছবি1 | 8
বাগদাদ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই ব্যবস্থা করতে না পারলে তেহেরান ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলে কানানি জানিয়েছেন। ইরাক এবিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করলে খবরের সত্যতা স্বীকার করেছে।
ইরান, ইরাক, তুরস্ক এবং সিরিয়ার একাংশ নিয়ে কুর্দদের অঞ্চল। দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের আলাদা রাষ্ট্রের জন্য লড়াই চালাচ্ছে তারা। সব মিলিয়ে কুর্দদের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ। ইরাকের উত্তরে স্বায়ত্তশাসিত কুর্দ অঞ্চলে একাধিক ইরানের কুর্দ গোষ্ঠী বসবাস করে। ইরান এই গোষ্ঠীগুলিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বস্তুত, তুরস্কও কুর্দদের এই ধরনের গোষ্ঠীগুলিকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখে। ইরান এই গোষ্ঠীগুলির উপর আক্রমণও চালিয়েছে। এবার তারা ইরাকের উপর চাপ তৈরি করল।
গত জুলাই মাসে ইরাক কুর্দ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ইরান সীমান্তে একটি বিশেষ ব্রিগেড রাখার ব্যবস্থা করেছিল। সীমান্ত চৌকি তৈরির জন্য বাগদাদ সম্প্রতি প্রায় সাত মিলিয়ান অর্থাৎ, ৭০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেছে। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট হয়নি ইরান। সে কারণেই তারা নতুন দাবি সামনে এনেছে। ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইরানের দাবি মেনে কাজ করতে হবে ইরাককে। কিন্তু কুর্দরা এই দাবির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না, সে দিকেও তাকিয়ে বিশেষজ্ঞেরা।