আইএস কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার পর ইরাকে ইরানের প্রভাব কমাতে তৎপর হয়ে উঠেছে অ্যামেরিকা ও সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এমন হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছেন৷ কুর্দিদের সঙ্গে সংঘাত নিয়ে তিনি ব্যস্ত৷
বিজ্ঞাপন
ইরাকে স্থিতিশীলতার চরিত্র কতটা নাজুক, তা বর্তমান সংকটের ফলে আবার স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ শান্তিপূর্ণ গণভোটের মাধ্যমে উত্তরে কুর্দিরা নিজস্ব রাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করার পরেও পরিস্থিতি শান্ত ছিল৷ বাগদাদে ফেডারেল সরকার এই রায় মানতে নারাজ৷ কুর্দি নেতারাও আলোচনার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করার কথা বলেছিলেন৷ কিন্তু এবার সংকট দেখা দিয়েছে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকার বৈধতা নিয়ে৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে কুর্দি বাহিনী অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে৷ ইরাকি কুর্দিস্তানের সীমানা পেরিয়েও আইএস-এর কাছ থেকে অনেক এলাকা উদ্ধার করেছে তারা৷ কির্কুক শহরের নিয়ন্ত্রণকে ঘিরেও কুর্দি ও ইরাকি সরকারের মধ্যে বিরোধ রয়েছে৷ পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ এই এলাকার বাড়তি কৌশলগত তাৎপর্য রয়েছে৷ এবার বাগদাদে ইরাকের সরকার সেই শহর উদ্ধার করতে ‘পপুলার মোবিলাইজেশন' নামে এক বাহিনী কাজে লাগাচ্ছে৷ ইরানের মদতপূষ্ট এই বাহিনীর তৎপরতা অ্যামেরিকাসহ একাধিক আঞ্চলিক শক্তির দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
অঘোষিত সংক্ষিপ্ত ইরাক সফরে এসে সেই দুশ্চিন্তার কথাই প্রকাশ করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, এই বাহিনী ইরাকের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলিরই অংশ৷ আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামেও তারা সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সক্রিয় ছিল৷ আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ইরাকের ভূখণ্ডে ইরানের মিলিশিয়া বাহিনীর তৎপরতা এতকাল কার্যত মেনে নিলেও ওয়াশিংটন চায়, এবার তারা দেশে ফিরে যাক৷ অন্যদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শেষ হবার পর মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যদের ইরাক ছেড়ে যাবার ডাক দিচ্ছে ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া৷
টিলারসন প্রধানমন্ত্রী আল-আবাদি ও ইরাকি কুর্দিস্তানে মাসুদ বারজানির নেতৃত্বে সরকারের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন৷ কুর্দিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সীমানা নিয়ে বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেবার ডাক দিয়েছেন তিনি৷ বাগদাদ ও এরবিল-এ দুই ঘনিষ্ঠ মার্কিন সহযোগীর মধ্যে বর্তমান বিরোধের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন৷
উল্লেখ্য, রবিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে টিলারসন সৌদি বাদশাহ সালমান ও ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক বিরল বৈঠক করেছেন৷ ইরাকে ইরানের প্রভাব কমাতে সৌদি আরবও যথেষ্ট তৎপর রয়েছে৷ ইরাকের সঙ্গে এক যৌথ সহযোগিতা পরিষদ গঠন করেছে সৌদি সরকার৷
দাড়ি-গোঁফ কেটে পালাচ্ছে আইএস
ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর দখল থেকে মসুল মুক্ত হয়েছে আগেই৷ এখন চলছে তাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার অভিযান৷ তবে এখন দাড়ি-গোঁফ কেটে মানুষের সাথে মিশে পালাচ্ছে তারা৷ ফলে সাধারণ মানুষকেও পড়তে হচ্ছে ইরাকি বাহিনীর সন্দেহে৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
মোসুল ঘেরাও
প্রতিদিনই মুক্ত হচ্ছে মোসুলের নতুন নতুন এলাকা৷ মুক্ত হচ্ছেন শহরটিতে দীর্ঘদিন আটকে থাকা সাধারণ ইরাকিরাও৷ কমান্ডাররা বলছেন, এখন হাতে গোনা দু-তিনশ’ আইএস জঙ্গি বিভিন্ন গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিয়ে আছে৷ তারা যাতে পার্শ্ববর্তী সিরিয়ায় পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য শহর ঘেরাও করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
জঙ্গি খুঁজতে ড্রোন
আগের মতো আইএসে প্রকাশ্য কোনো আস্তানা মসুলে আর নেই৷ আজ এ বাড়িতে তো কাল ঐ ভবনে, এমন করেই যুদ্ধ চালাচ্ছে অবশিষ্ট জঙ্গিরা৷ ফলে নির্দিষ্ট করে হামলা চালানো বেশ কষ্টকরই হচ্ছে ইরাকি বাহিনীর জন্য৷ এই কাজ সহজ করতে নেয়া হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার৷ ড্রোন ব্যবহার করে চিহ্নিত করা হচ্ছে জঙ্গিদের অবস্থান৷ তারপর আক্রমণ৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
কারা জঙ্গি?
চারপাশ থেকে ঘেরাও হওয়ায় প্রাণে বাঁচতে আইএস জঙ্গিরাও আশ্রয় নিচ্ছে নতুন কৌশলের৷ ইসলামি কায়দা অনুযায়ী দাড়ি-গোঁফ রাখলেও, এখন সবাই ‘ক্লিন শেভড’৷ যতক্ষণ পারছে যুদ্ধ, হেরে যাওয়ার শঙ্কা দেখলে পোশাক পালটে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে জঙ্গিরা৷
ছবি: Reuters/A. Saad
নতুন বিপদ আত্মঘাতি নারী
অগ্রসর হতে থাকা ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে আরেক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে আইএস জঙ্গিরা৷ নারী জঙ্গিরা বোমা বেঁধে সাধারণ নারীদের সাথে মিশে যাচ্ছে৷ চেষ্টা চালাচ্ছে ইরাকি বাহিনীর কাছাকাছি গিয়ে হামলা চালানোর৷ গেল এক সপ্তাহে এমন বেশকটি হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Reuters/Stringer
সাধারণের বিপদ
দীর্ঘদিন আইএসের নির্যাতনে জরাজীর্ণ অবস্থা, তা থেকে মুক্তির পরও কমছে না সাধারণ মানুষের ঝামেলা৷ সেই কারণটাও আইএস৷ লুকিয়ে থাকা জঙ্গি খুঁজতে গিয়ে সবাইকেই সন্দেহের তালিকায় রাখছে ইরাকি বাহিনী৷ না থেমে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হচ্ছে তাদের৷ একাধিকবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিচয়৷ মাঝে মধ্যেই করা হচ্ছে শরীর তল্লাশি৷ রেহাই পাচ্ছেন না শিশু-বুড়োরাও৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
শিশুদের জন্য সহায়তা
দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছায়নি কোনো ত্রাণ৷ জরুরি ওষুধ তো দূরের কথা, একেবারেই সাধারণ ঠান্ডার ওষুধও মসুলবাসীর কাছে ছিলো আকাশের চাঁদ৷ তবে দ্রুতই পালটাচ্ছে এই অবস্থা৷ মুক্ত অঞ্চল এবং জঙ্গি এলাকা থেকে পালিয়ে আসা শিশুরা পাচ্ছে বিভিন্ন রোগের টিকা৷ সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা থেকে মিলছে জরুরি ত্রাণও৷