জার্মানির কোলনে এক উৎসবে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি – পিকেকের ব্যানার দেখানো হয়৷ এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সহনশীল আচরণ করায় পুলিশের সমালোচনা করেছে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ তুরস্কের চাপই এর কারণ, মনে করছেন কুর্দি নেতারা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে পিকেকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিষিদ্ধ প্রতীকের তালিকা আরো সম্প্রসারণ করা হবে৷ তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করছে জার্মান কুর্দি সম্প্রদায়৷ তাঁরা মনে করছেন, তুরস্কের ভয়ে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷
কোলন পুলিশ অবশ্য সমাবেশ থেকে একজনকে আটক করেছে, জব্দ করেছে একটি ব্যানার৷ হলুদ রংয়ের ব্যানারটিতে ১৯৯৯ সাল থেকে তুরস্কে কারাবন্দি পিকেকে নেতা আবদুল্লাহ ওকালানের ছবি ছিল৷
যুদ্ধে নারী, নারী যোদ্ধা
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ইসলামিক স্টেট উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি এলাকাগুলি দখল করে৷ হাজার হাজার ইয়াজিদি মহিলা ও কিশোরীকে ধরে নিয়ে গিয়ে দাসী হিসেবে রাখা হয় ও ধর্ষণ করা হয়৷ আজ সেই ইয়াজিদি নারীরাই সন্ত্রাসবাদিদের বিরুদ্ধে লড়ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
শত্রুর খোঁজ
শত্রু বাইরে কোথাও - কুর্দি নারী যোদ্ধা হাসেবা নৌজাদ ইরাকের মোসুল শহরের কাছে চোখে দুরবিন লাগিয়ে ‘ফ্রন্ট লাইন’ পরখ করে দেখছেন৷ কুর্দ এলাকা ও আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্যে সীমারেখা হলো এই ফ্রন্ট৷ কুর্দিরা ইরাকি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় ক্রমেই আরো এগিয়ে যাচ্ছে, পিছু হটছে ইসলামিক স্টেট৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
গুপ্তপ্রতিরোধের ভ্যানগার্ড
শত্রু নজরে পড়েছে, এবার তাদের দিকে গুলি চালানো হবে৷ হাসেবা নৌজাদ দেখাচ্ছেন কোনদিকে; আসেমা দাহির (ডান দিক থেকে তৃতীয়) ও অন্যান্য ইয়াজিদি নারী যোদ্ধারা নিশানা ঠিক করছেন৷ শুধুমাত্র বিমান থেকে আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ নেই৷ তাই ইয়াজিদি আর কুর্দ মহিলাদের নিয়ে রণক্ষেত্রে এই ভ্যানগার্ড তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
সুন্দর দেখানোর জন্য নয়
বন্দুক নিয়ে ঠিকমতো নিশানা করার জন্য মাথার চুল কপালে বা চোখে পড়লে চলবে না৷ তাই চুল টান টান করে বেঁধে নেন হাসেবা নৌজাদ, ‘মিলিটারি লুক’ ফ্যাশনের জন্য নয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
লাকি চার্ম
যুদ্ধের ফাঁকে আসেমা দাহির৷ হাতে যে লাল রঙের টেডি বেয়ারটি রয়েছে, সেটা হয়তো অতীতের সেই সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দিনগুলির প্রতীক, যখন আইএস ইয়াজিদিদের স্বদেশকে দখল করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে সেই শান্তি শেষ হয়ে যায়, শুরু হয় আইএস-এর সন্ত্রাস৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
পালানো ছাড়া পথ ছিল না
শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, আইএস কাউকে ক্ষমা করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে লক্ষ লক্ষ ইয়াজিদি বাস্তু ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, তাদের পিছনে আইএস৷ এক বৃদ্ধ ও দুই তরুণীর এই ছবিটি যেন বিশ্বের সামনে ইয়াজিদিদের যন্ত্রণাকে তুলে ধরে৷
ছবি: Reuters
বিভীষিকা
এই ইয়াজিদি কিশোরী ক্যামেরার সামনে তার মুখ দেখাতে চায় না৷ ২০১৪ সালে এই ১৫ বছর বয়সের মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে একজন আইএস যোদ্ধার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ তার দু’মাস পরে মেয়েটি পালাতে সমর্থ হয়৷ আজ সে আবার নিজের পরিবারের সঙ্গেই বাস করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bennett
ধ্বংসস্তূপ
উত্তর সিরিয়ার কোবানি শহরটি তুর্কি সীমান্তের অদূরে৷ আইএস যোদ্ধারা মাসের পর মাস শহরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল৷ কুর্দিরা সব কিছুর পরও প্রতিরোধ চালিয়ে যায় ও শেষমেশ মার্কিন বিমানবাহিনীর সাহায্যে সন্ত্রাসবাদীদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়৷ পড়ে থাকে একটি শহর নয়, যেন শহরের ধ্বংসস্তূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Akgul
সবে মিলে করি কাজ
যারা আইএস-এর আদর্শে বিশ্বাস করে না, আইএস-এর দৃষ্টিতে তারা সবাই শত্রু৷ বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করাই হলো আইএস-এর উদ্দেশ্য৷ সে উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে সফল হয় না৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, এক অর্থে তা আইএস-এর প্রতীকী পরাজয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
স্বাধীনতার সড়ক
শুধু অস্ত্র দিয়ে আইএস-কে হারানো যাবে না৷ সিরিয়া আর ইরাকের অনেক এলাকা এখনও আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েরাও তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে৷ তাদের প্রতিরোধের আর একটি শিক্ষা হলো, মেয়েরা পুরুষের দাস নয় - সন্ত্রাসবাদিদের যা কাজে লাগার কথা!
ছবি: Reuters/A. Jadallah
9 ছবি1 | 9
উৎসবে অংশ নিয়েছেন অন্তত ১৩ হাজার কুর্দি৷ সেখানে আরো শত শত ব্যানার ও ফেস্টুনে ওকালানের ছবি থাকলেও সেগুলোতে হলুদ রং না থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ৷ জার্মান সরকার মার্চ মাসে নিষিদ্ধ প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করে, তাতে ওকালানের ছবি প্রদর্শন করা যাবে না, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না৷
কোলন পুলিশের কর্মকাণ্ডের দায় নিচ্ছে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ ‘‘আমাদের কাছে এটা পরিস্কার যে বাস্তবে যা ঘটেছে, তার সাথে নিষিদ্ধ প্রতীকের সম্পর্ক নেই৷ সাধারণভাবে ওকালানের সব ছবিই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল,'' বলছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়োহানেস ডিমরোথ৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় শুধু হলুদ রংয়ের ব্যানারে নয়, ‘অনুরূপ' সব ছবি নিষিদ্ধ করা হলেও কোলন পুলিশ তাদের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করছে৷ কোলন পুলিশের এক মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যম ডব্লিউডিআরকে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা আগেই কোলন স্টেট প্রসিকিউশনের সাথে আমাদের প্রক্রিয়া এবং আইনী ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছিলাম৷''
তুরস্কের পদানুসরণ
কুর্দি কমিউনিটি সেন্টার সিবিকা আজাদের মুখপাত্র মাকো কোকগিরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্ত ‘হাস্যকর' বলে মন্তব্য করেছেন৷
এখন কেন এমন সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন ডব্লিউডিআরের মতো বেশ কিছু জার্মান সংবাদ মাধ্যম৷ জার্মানিতে বরাবরই কুর্দি সমাবেশে ওকালানের ছবি প্রদর্শন হয়ে আসছে৷
আয়লান এবং আয়লানকে নিয়ে ছবি...
আয়লান কুর্দি৷ সিরিয়ার সেই শিশু, যার মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা নিথর দেহ ‘মানবাধিকার’, ‘মানবতা’-কে এখনো কটাক্ষ করে৷ এখনো তাকে স্মারণ করে সবাই৷ তার ছবি আঁকা হয়৷ অধিকার আদায়ের লড়াইয়েও ফিরে ফিরে আসে আয়লান কুর্দি৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
মা ও সন্তান
রেহান কুর্দির কোলে তাঁর ছোট ছেলে আয়লান৷ কোবানির একটি বাড়িতে এখনো আছে এই ছবি, তবে ছবির দু’জন মানুষ আর নেই৷ সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে যাওয়ার পথেই ফুরিয়েছে তাদের জীবন চলার পথ৷ এ খবর সারা বিশ্বকে জানিয়েছিল অন্য একটি ছবি৷
ছবি: Getty Images/Courtesy of Kurdi family
এ ছবি এখনো কাঁদায়
একটি ছবি হঠাৎ বদলে দিলো ইউরোপে অভিবাসী হতে আগ্রহীদের ভাগ্য৷ আয়লান কুর্দির এই ছবি৷ তুরস্কের উপকুলে এভাবেই পড়ে ছিল ৩ বছরের শিশুটির নিথর দেহ৷ মা-বাবা আর ভাইয়ের সঙ্গে আয়লানও কোবানির বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল নিরাপদ জীবনের খোঁজে৷ এভাবে চিরবিদায় নিতে হয় তাকে!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
আয়লান জাগিয়ে গেল
আয়লানের ওই ছবি নাড়িয়ে দেয় বিশ্ববিবেক৷ ইউরোপে আসার পথে যেখানে হাজারো মানুষ শত বাধার মুখে এক সময় হার মানতো, প্রাণ দিতো, সেখানে ধীরে ধীরে অনেকটাই খুলে গেল ইউরোপের দ্বার৷ অভিবাসন প্রত্যাশীরা অবাধে আসতে শুরু করল মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা থেকে৷
ছবি: Reuters/H. P. Bader
যেভাবে বিদায় জানালো জন্মভূমি
দুই সন্তান আর স্ত্রী-কে হারিয়ে নিরাপদ জীবনের প্রতি আগ্রহহারিয়ে ফেলেন আয়লানের বাবা আব্দুল্লাহ কুর্দি৷ তাই গ্রিস হয়ে ইউরোপের উন্নত কোনো দেশে নতুন করে জীবন শুরু করার ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিয়ে ফিরে যান সিরিয়ায়৷ তাঁর কোবানির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় স্ত্রী ও দুই সন্তানের মৃতদেহ৷ জানাযা শেষে ওই শহরেই সমাধিস্থ করা হয় তাদের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
কান্না আর আহাজারি
আব্দুল্লাহ কুর্দি তাঁর পরিবারের সদস্যদের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলে কান্নার রোল উঠেছিল কোবানিতে৷ আয়লানদের জন্য কোবানি এখনো কাঁদে৷
ছবি: Reuters/R. Said
আয়লান এখন প্রতিবাদের প্রতীক...
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে আয়লান এখন প্রতিবাদের প্রতীক৷ ইউরোপে যেখানেই অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রতিবাদ, সেখানেই থাকে আয়লানের ছবি৷ অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের এই ছবিটি প্যারিসের৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরেও আয়লান
ছবির এই নারী আয়লানের আত্মীয়া, নাম ফাতিমা কুর্দি৷ সোমবার ব্রাসেলসে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের বাইরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে ছিলেন তিনি৷ ইউরোপের দেশগুলোতে অভিবাসন আইনের সমন্বয়ের দাবিতে আয়োজিত সেই সমাবেশেও ছিল আয়লানের ছবি৷ তবে সেই ছবি নয়, সেই ছবির আদলে হাতে আঁকা একটি ছবি দেখা যায় দেয়ালে৷ সেই ছবির পাশেই দাঁড়িয়ে ফাতিমা কুর্দি৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
7 ছবি1 | 7
১৬ সেপ্টেম্বরের উৎসব নিয়ে আপত্তি জানাতে তুরস্কে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এর একদিন পরেই জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘নিষিদ্ধ' প্রতীকের তালিকা ‘সম্প্রসারণের' ঘোষণা কাকতালীয় বলে মনে করছেন না কোকগিরি৷
‘জঙ্গি প্রচারণা' চালাতে পিকেকে সদস্যদের অনুমতি দিয়েছে, জার্মান সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে বিবৃতিও দিয়েছে আঙ্কারা৷
‘‘তুর্কি সংবাদমাধ্যম উৎসবের আগে থেকেই – জঙ্গি সমর্থকদের সমাবেশে জার্মানির অনুমতি - এমন শিরোনাম করছিল৷'' এই নিষিদ্ধ তালিকা সম্প্রসারণের ঘোষণা এরই ‘প্রতিক্রিয়া' এবং তুর্কি সরকারের সাথে ‘আপসের' ইঙ্গিত বলে মনে করছেন কোকগিরি৷
জার্মানির কুর্দিরা মনে করেন, সবসময়ই তাঁদের ব্যাপারে তুরস্কের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার৷ অথচ অন্যান্য বিষয়, যেমন তুরস্কে আটক জার্মান সাংবাদিকদের ব্যাপারে নেয়া হয় কঠোর অবস্থান৷ ‘‘এটা আমাদের জন্য খুব অস্বস্তিকর৷ কারণ আমাদের মনে হয়, তুরস্কের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার জন্য আমাদের বলি দিচ্ছে জার্মান সরকার৷''
জার্মানি অবশ্য কিছু কুর্দি গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয়৷ ইরাকে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের সাথে যুদ্ধে কুর্দি পেশমেরগা বাহিনীকে অস্ত্র দিয়েছে জার্মানি৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো সিরিয়ায় যুদ্ধরত ওয়াইপিজি বা পিপলস প্রটেশকশন ইউনিটকে সামরিক সহায়তা দেয়নি জার্মানি৷
২৫ বছর ধরে চলে আসছে আন্তর্জাতিক কুর্দি সাংস্কৃতিক উৎসব৷ এই উৎসবে ঐতিহ্যবাহী কুর্দি নাচ ও গানের আয়োজনও থাকে৷ কোকগিরি বলছেন, ‘‘কুর্দিরা যখন এক জায়গায় হয়, তখন সেটার সবসময়ই একটা রাজনৈতিক চরিত্র থাকে৷ ওকালানের মুক্তি ও কুর্দি স্বায়ত্বশাসনের দাবিও থাকে সেখানে৷''