অপব্যবহারের ঝুঁকি সত্ত্বেও ইরাকের উত্তরে গণহত্যা এড়াতে কুর্দি যোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে জার্মান সরকার৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে জার্মানির পক্ষে যখন শান্তির বাণী উচ্চারণ করা কঠিন হয়ে উঠছিল, ঠিক সে সময়েই ইরাকের উত্তরে কুর্দি বাহিনীকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছে৷ ক'দিন আগেই অস্ত্র রপ্তানির বিধিনিয়ম বেশ কড়াকড়ি করা হয়েছে৷ তাতে যে ব্যতিক্রমের কথা বলা হয়েছে, এত দ্রুত তা ঘটবে বলে কেউ ভাবতে পারেনি৷
কট্টরপন্থি আইসিস জঙ্গিদের রুখতে কুর্দিদের সহায়তা করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ ইরাকের উত্তরে গণহত্যা এড়ানো জার্মানির নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷ তবে এর সঙ্গে ঝুঁকিও জড়িয়ে রয়েছে বলে স্বীকার করেন ম্যার্কেল৷ সেই অস্ত্র শেষ পর্যন্ত কার হাতে পড়বে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে অনেক মহল৷ উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে৷
১৯৯০ সালে দুই জার্মানির পুনরেকত্রিকরণের আগে বিদেশের মাটিতে কোনো ধরনের জার্মান সামরিক কার্যকলাপ কল্পনাও করা যেত না৷ তারপর থেকে ধাপে ধাপে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে৷ তবে শুধু সরকার একা নয়, সংসদেও বৃহত্তর ঐকমত্যের ভিত্তিতেই প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও জনসাধারণের মনে এ বিষয়ে সংশয় রয়ে গেছে৷ যেমন একটি সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৬৩ শতাংশ মানুষ কুর্দিদের অস্ত্র সরবরাহের বিরোধিতা করছেন৷
আইসিস জঙ্গিদের তৎপরতার আলোকে গোটা অঞ্চল সম্পর্কে জার্মানি তথা পশ্চিমা জগতের অবস্থান পুনর্মূল্যায়নের জন্য চাপ বাড়ছে৷ যেমন সিরিয়ার কোণঠাসা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় আসা প্রয়োজন বলে মনে করছে অনেক মহল৷ কারণ শুধু ইরাকে আইসিস জঙ্গিদের দমন করাই যথেষ্ট নয়৷ সোমবার জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র অবশ্য এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, যে আসাদ প্রশাসন গত সাড়ে তিন বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে লিপ্ত, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা সম্ভব নয়৷ এই সময়কালে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করিয়ে দেন তিনি৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
সিরিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলির সাংবাদিক সহ একের পর এক ব্যক্তির অপহরণ নিয়েও নতুন বিড়ম্বনা দেখা যাচ্ছে৷ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা জঙ্গিদের অর্থের বড় উৎস হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ এই অবস্থায় জার্মান সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনো অবস্থায় সরকারি কোষাগার থেকে মুক্তিপণের অর্থ দেওয়া হবে না৷ সম্প্রতি সিরিয়ায় অপহরণকারীদের কাছ থেকে এক জার্মান নাগরিকের মুক্তির পর এই প্রশ্ন উঠেছিল৷