জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দি যুবকদের একটি গ্রুপ ইউরোপে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর হুমকি দিয়েছে৷ বিভিন্ন তুর্কি স্থাপনায় হামলার ঘটনার পর এ হুমকি দিল গোষ্ঠীটি৷ হামলা প্রতিরোধে আরো সচেষ্ট হতে জার্মানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে বসবাসরত একটি বামপন্থি কুর্দি গোষ্ঠী ইউরোপের রাস্তায় ধ্বংসলীলা চালানোর হুমকি দিয়েছে৷ সপ্তাহান্তে পুলিশ এবং অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং তুর্কি মসজিদে হামলার ঘটনার পর এই হুমকি দেয় গোষ্ঠীটি৷
মূলত, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত আফ্রিন অঞ্চলে তুর্কি সামরিক বাহিনীর অভিযানকে ঘিরে জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দ ও তুর্কিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ গত ২০ জানুয়ারি এই অভিযান শুরু করে তুর্কি বাহিনী৷ ইতোমধ্যে আফ্রিন অঞ্চল প্রায় ঘিরে ফেলেছে তুর্কি বাহিনী৷ কুর্দরা আশঙ্কা করছে, সেখানে ‘গণহত্যা' বা ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ' চালাতে পারে তুর্কি বাহিনী৷
আফ্রিনকে ঘিরে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যকার বিরোধের রেশ জার্মানিতে দেখা যাচ্ছে৷ দেশটিতে অনেক কুর্দ এবং তুর্কি মানুষ বসবাস করেন৷ সপ্তাহান্তে একাধিক তুর্কি স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ বার্লিনে একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ করেছে তিন তরুণ৷ এছাড়া লাওফেন শহরে আরেক মসজিদে আগুন বোমা ছোঁড়া হয়েছে৷ এ সব হামলার পেছনে কুর্দরা জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷
জার্মানিতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ডিটিব, যেটির সঙ্গে তুর্কি সরকারের ঘনিষ্ঠ সংযোগ রয়েছে, মসজিদে হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দোষীদের দ্রুত খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে৷
তবে শুধু মসজিদই নয়, সপ্তাহান্তে একটি তুর্কি মুর্দি দোকান এবং তুর্কি অভিবাসীদের একটি সংগঠনেও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা৷ পাশাপাশি, ড্যুসেলডর্ফ এবং বার্লিনে কুর্দ এবং তুর্কি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে৷
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
জার্মানিতে তুর্কি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে তুরস্ক সরকারও৷ আঙ্কারার জার্মান রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি কূটনৈতিক বার্তা প্রদান করেছে দেশটি, যেখানে মসজিদে হামলকারীদের বিচার চাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এসব হামলা যাতে না হয় সেজন্য আরো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে জার্মানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি৷
এদিকে, কুর্দরাও আফ্রিনে তুর্কি অভিযান বন্ধের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে৷ সোমবার বিকেল অবধি জার্মানির হামবুর্গ, বার্লিন এবং বন শহরে বিক্ষোভের কথা জানা গেছে৷ দাবি মানা না হলে সহিংস বিক্ষোভের হুমকিও দিয়েছে তাদের একটি গোষ্ঠী৷
উল্লেখ্য, জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভূত ৩০ লাখ মানুষ বসবাস করেন৷ এদের এক তৃতীয়াংশই সংখ্যালঘু কুর্দি৷ গত ষাট এবং সত্তর দশকে এদের অনেকে কাজের জন্য জার্মানিতে আসলেও আশি এবং নব্বইয়ের দশকে সহিংসতা এবং দমনপীড়ন থেকে বাঁচতেও অনেক তুর্কি জার্মানিতে আশ্রয় গ্রহণ করে৷
চেস উইন্টার/এআই
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷
জার্মানির সব মসজিদ যেদিন সবার জন্য খোলা
তেসরা অক্টোবর৷ এই দিনে জার্মানির প্রায় এক হাজার মসজিদ দরজা খুলে দেয় অতিথিদের জন্য, ‘শুভ সম্প্রদায়, উন্নততর সমাজ’, এই আদর্শ নিয়ে৷ দিনটি আবার দুই জার্মানির পুনর্মিলন উপলক্ষ্যে জার্মান ঐক্য দিবসও বটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
জার্মানির মসজিদ – জার্মান ঐক্য
১৯৯৭ সাল থেকে জার্মান পুনরেকত্রীকরণ দিবসটিকে ‘মুক্ত মসজিদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে৷ পুনরেকত্রীকরণ দিবস সরকারি ছুটির দিন৷ কেন্দ্রীয় মুসলিম পরিষদের বিবৃতি অনুযায়ী, জার্মান জনগণের সঙ্গে মুসলিমদের যোগসূত্র এবং জার্মান ঐক্যের অঙ্গ হিসেবে মুসলিমদের তুলে ধরার জন্য এ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়৷ এ দিন প্রায় এক লক্ষ অতিথি বিভিন্ন মসজিদে আসেন৷ ছবিতে বার্লিনের সেহিৎলিক মসজিদের সামনে অতিথি সমাগমের দৃশ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
মসজিদ সবার জন্য
এদিন জার্মানির মুসলিমরা অতিথিদের ইসলাম সম্পর্কে স্পষ্টতর ধারণা দিতে চায়৷ এছাড়া মসজিদ যে শুধু প্রার্থনার জায়গা নয়, বরং সম্প্রদায় তথা সমাজের জন্য দেখাসাক্ষাৎ ও মেলামেশার স্থান, সেটাও তুলে ধরা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Paul Zinken
আচার অনুষ্ঠান
যে কোনো ধর্মকে চিনতে হলে, তার আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন৷ গির্জার সঙ্গে মসজিদের একটি তফাৎ হলো এই যে, মসজিদে ঢুকতে গেলে জুতো খুলে ঢুকতে হয়৷ এছাড়া নামাজ পড়ার আগে ওজু করার প্রথা রয়েছে৷ মুক্ত মসজিদ দিবসে জার্মান অতিথিরা এই সব রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
স্থাপত্য ও ইতিহাস
কোলনের কাছে হ্যুর্থ-এর এই মসজিদটির মতো অনেক মসজিদেই অতিথিদের ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা থাকে৷ ফলে অতিথিরা ইসলামি স্থাপত্য, ইতিহাস ও সেই সঙ্গে মসজিদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পর্কে একটা ধারনা পান৷ জার্মানির মুসলিমদের সমাজজীবনে মসজিদের ভূমিকাও তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
জার্মানির অন্যতম বড় মসজিদ
ডুইসবুর্গের মেরকেজ মসজিদ হলো জার্মানির অন্যতম বড় মসজিদ৷ মসজিদটি খোলা হয় ২০০৮ সালে৷ ডুইসবুর্গের মুসলিম সমাজ মুসলিমদের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির উপর বিশেষ জোর দেয়৷ অতিথিরা মসজিদটি ঘুরে দেখার, এছাড়া নামাজে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান৷ সবশেষে এক পেয়ালা চায়ের আমন্ত্রণও বাদ যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
অলিন্দ থেকে
তেসরা অক্টোবর অতিথিরা সেহিৎলিক মসজিদের ভিতরের বারান্দা থেকে মুসল্লিদের নামাজ পড়া দেখা ও শোনার সুযোগ পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Hanschke
তসবিহ
ফ্রাংকফুর্টে মুক্ত মসজিদ দিবসে একটি তসবিহ পেলো এক কিশোর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
শুধু এদিনই দুয়ার খোলা নয়
জার্মানির মসজিদগুলি বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য অন্যান্য উপলক্ষ্যেও অতিথিদের অভ্যর্থনা জানিয়ে থাকে৷ ছবিতে মানহাইমের ইয়াভুজ সুলতান সেলিম মসজিদটিতে এসেছেন ক্যাথলিক যাজিকারা; তাঁরা একটি ক্যাথলিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য মানহাইমে এসেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভুল ধারণা দূর করা
ড্রেসডেনের মসজিদগুলিও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানে সচেষ্ট৷ আল-মোস্তাফা মসজিদের কর্মকাণ্ডে রয়েছে ইসলাম সম্পর্কে মসজিদের ইমামের মনোজ্ঞ ভাষণ৷ এছাড়া বার্তালাপ, আলোচনার পাশাপাশি স্বভাবতই থাকে অতিথি আপ্যায়নের জন্য খাবারদাবারের ব্যবস্থা৷ যে শহরে ইসলামবিরোধী পেগিডা আন্দোলন মাথা চাড়া দেয়, সেখানে এই উদ্যোগের গুরুত্ব অসীম৷