ইরাকের উত্তরাঞ্চলে অবস্থানরত শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুন করেছে জার্মানি৷ তবে কুর্দি যোদ্ধারা চাইছে অস্ত্র সহায়তা৷ তাই বিষয়টি নিয়ে বির্তক চলছে জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে৷
বিজ্ঞাপন
ইরাকের উত্তরাঞ্চলে নির্যাতনের শিকার খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের আরো মানবিক সহায়তা দিতে জার্মান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী, শিল্পী এবং ধর্মীয় প্রতিনিধিদের একটি গোষ্ঠী৷ জার্মানি এক্ষেত্রে ধীর গতিতে সাড়া দেয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে অনেকের মাঝেই৷ কেননা ইরাকের উত্তরাঞ্চলের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত উদ্যোগ প্রয়োজন৷
গোষ্ঠীটি এক খোলা চিঠিতে সোমবার জানিয়েছে, ‘‘উগ্রপন্থি ইসলামি সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস-এর উত্থানের কারণে ইরাকের অসংখ্য মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে৷'' জার্মানির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক জোট সিডিইউ এবং এসপিডি-র রাজনীতিবিদরাসহ সবুজ দল, এফডিপি এবং বাম দলের সদস্যরাও চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এদিকে, শরণার্থীদের জন্য এখন অবধি ৪.৪ মিলিয়ন ইউরোর মানবিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি৷ গত সপ্তাহের তুলনায় সহায়তার এই পরিমাণ দ্বিগুণ৷ এই সহায়তা মূলত চিকিৎসা খাত, স্বাস্থ্যগত পুর্নবাসন এবং সুপেয় পানির পেছনে ব্যয় করা হবে৷ পাশাপাশি সহিংসতায় ঘরছাড়াদের জীবিকার চাহিদা মেটাতেও সহায়তা করা হবে৷
প্রসঙ্গত, কুর্দি সেনারা জার্মানির কাছ থেকে সহায়তা হিসেবে অস্ত্র চাইছে৷ তবে সরকারের কুর্দিদের অস্ত্র সহায়তা দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন স্টেফেন সিবার্ট৷ জার্মান সরকারের এই মুখপাত্র জানান, সংকটপূর্ণ এবং যুদ্ধ এলাকায় জার্মানি অস্ত্র রপ্তানি করে না৷ এটাই জার্মানির নীতি৷ বর্তমান এবং সাবেক সকল সরকারই এই নীতি মেনে চলেছে বলে জানান সিবার্ট৷
জার্মান রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেকেই সরকারের এই নীতিকে সমর্থন করেছেন৷ তাঁদের মতে, কুর্দি অঞ্চলে অস্ত্র সহায়তা শেষমেষ কোনো কাজে আসবে না৷ তার চেয়ে মানবিক সহায়তার দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা৷ তবে সবুজ দলের প্রধান চেম ও্যজদেমির মনে করেন, কুর্দি যোদ্ধাদের অস্ত্র সহায়তা করা উচিত৷ আর এতে ভুল কিছু দেখেন না তিনি৷