উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের আক্রমণ আইএস-এর বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযানে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। অ্যামেরিকার অভিযানে সহায়ক শক্তি কুর্দ যোদ্ধারা।
ছবি: Orhan Qereman/REUTERS
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি উত্তর সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। কুর্দ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করার হুমকি দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার বলেছেন, তুরস্কের এই অভিযান আইএস-বিরোধী অভিযানে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তুরস্কের এই অভিযানের ফলে ওই অঞ্চলে আইএস ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
বস্তুত, উত্তর সিরিয়ায় অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় সহযোগী কুর্দ যোদ্ধারা। সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এসডিএফ) মূলত উত্তর সিরিয়ার কুর্দ যোদ্ধাদের নিয়ে তৈরি। তারাই ওই অঞ্চল কার্যত নিয়ন্ত্রণ করে। সম্প্রতি তুরস্ক ওই অঞ্চলেই বিমান হামলা চালায়।
কেন আক্রমণের মুখে কুর্দ জনগোষ্ঠী
একদিকে তুরস্ক, অন্যদিকে ইরান, জোড়া আক্রমণের মুখে কুর্দরা। কেন এই আক্রমণ?
ছবি: DHA/Demirören Nachrichten Agentur
তুরস্কের হামলা
সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব সিরিয়া এবং ইরাকে কুর্দ জনগোষ্ঠীর উপর হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। তুরস্কের দাবি, কুর্দ সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়। যদিও কুর্দদের দাবি, হামলায় বহু বেসামরিক মানুষ এবং শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৮৪ জন নিহত হয়েছে বলে কুর্দদের দাবি।
ছবি: North Press Agency via REUTERS
তুরস্কের দাবি
তুরস্কের দাবি, সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, তা কুর্দ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পিকেকে ঘটিয়েছে। ওই বিস্ফোরণে ছয় জনের মৃত্যু হয়ছে। যদিও পিকেকে জানিয়েছে, তারা ওই বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত নয়।
ছবি: North Press Agency via REUTERS
কুর্দদের অবস্থান
মধ্যপ্রাচ্যে তিন কোটি ৫০ লাখ কুর্দের বাস। পৃথিবীর অন্যতম বড় জনগোষ্ঠী কুর্দদের নিজেদের কোনো দেশ নেই। তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, ইরান এবং আর্মেনিয়ার একাংশে তাদের বসবাস। প্রায় প্রতিটি দেশেই তারা সংখ্যালঘু।
ছবি: North Press Agency via REUTERS
কুর্দিস্তানের লড়াই
বিভিন্ন দেশে কুর্দদের সংগঠন স্বাধীন কুর্দিস্তানের লড়াই করছে। পিকেকে, ওয়াইপিজি এমনই সব সংগঠন। তুরস্ক এই দুই সংগঠনকেই সন্ত্রাসী বলে মনে করে। অ্যামেরিকা পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় রাখলেও ওয়াইপিজি-কে রাখেনি। সিরিয়ায় আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন সেনাকে সাহায্য করেছে ওয়াইপিজি।
তুরস্কের দাবি, কুর্দ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি লাগাতার তাদের দেশে আক্রমণ চালাচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান জানিয়েছেন, শুধু বিমান হামলা নয়, সিরিয়া এবং ইরাকে ঢুকে আক্রমণ চালাবে তুরস্কের স্থলসেনা। এর আগে ২০১৬ সাল থেকে এমন তিনটি অপারেশন চালিয়েছে তুরস্ক। এবার চতুর্থ অপারেশন হবে বলে জানিয়েছেন এর্দোয়ান।
ছবি: Eren Bozkurt/AA/picture alliance
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সিরিয়া যুদ্ধের কারণে বিপুল পরিমাণ সিরিয়ার উদ্বাস্তু তুরস্কে এসে থাকছেন। এর ফলে তুরস্কের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর্দোয়ান চাইছেন, সিরিয়ার কুর্দ অধ্যুষিত এলাকা খানিকটা দখল নিয়ে সেখানে সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের পাঠাতে। সে কারণেই তার এই লাগাতার আক্রমণ।
ছবি: Fatih Aktas/AA/picture alliance
ইরানের আক্রমণ
সম্প্রতি ইরানে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। পুলিশের হাতে এক কুর্দ নারীর মৃত্যুর পর আন্দোলন আরো বড় আকার নেয়। ইরানের দাবি, কুর্দ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই আন্দোলনে মদত দিচ্ছে। এবং সে কারণেই সম্প্রতি কুর্দদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে ইরান।
ছবি: SalamPix/ABACA/picture alliance
সিরিয়ার অবস্থান
সিরিয়ার বাশার সরকারের সঙ্গেও কুর্দদের লড়াই চলছে। রাশিয়া এবং ইরানের মদতপুষ্ট বাশার সরকার গৃহযুদ্ধের মধ্যেই সিরিয়ার একটি বড় অংশ নিজেদের হাতে ফিরিয়ে নিতে পেরেছে। কিন্তু কুর্দ অধ্যুষিত অঞ্চল এখনো তারা পায়নি। সেখানে কুর্দদের সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে।
ছবি: Steven Hutchungs/TNN/dpa/picture alliance
8 ছবি1 | 8
সপ্তাহখানেক আগে ইস্তাম্বুলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। যার জেরে ছয়জন প্রাণ হারান। তুরস্কের দাবি, কুর্দ সন্ত্রাসীরাই একাজ করেছে। যদিও কুর্দদের একাধিক গোষ্ঠী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ওই কাজের সঙ্গে তারা যুক্ত নয়। কিন্তু এর্দোয়ানের বক্তব্য, তুরস্কে একের পর এক সন্ত্রাসী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দরা। ইস্তাম্বুল বিস্ফোরণের পর উত্তর সিরিয়ায় বিমান হামলা চালায় তুরস্ক। শুধু তা-ই নয়, তুরস্ক জানিয়েছে, তারা এরপর ওই অঞ্চলে সেনা অভিযান চালাবে।
এরপরেই মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে কুর্দ বাহিনী। এই কুর্দ বাহিনীর সাহায্যেই সিরিয়ায় আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে অ্যামেরিকা। এখনো কুর্দদের সঙ্গে নিয়ে ওই অঞ্চলে পেট্রোলিংয়ে যায় মার্কিন বাহিনী। তুরস্কের আক্রমণের পর কুর্দরা পেট্রোলিংয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অ্যামেরিকাও পেট্রোলিং চালাতে পারছে না। এর ফলে নতুন করে আইএস লাভবান হবে বলে অ্যামেরিকার আশঙ্কা।
এসডিএফ-এর মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তুরস্কের আক্রমণ নিয়ে তারা অ্যামেরিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। রাশিয়াও জানিয়েছে, তুরস্কের এই আক্রমণ বন্ধ হওয়া উচিত। কিন্তু মুখের কথায় তারা সন্তুষ্ট নন। তারা চান, এবিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু নীতি তৈরি হোক। এবিষয়েও তারা অ্যামেরিকার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে মুখপাত্র জানিয়েছেন।