কুলভূষণ যাদবের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে ভারতকে আরেকটি সুযোগ দিল পাকিস্তানের হাইকোর্ট। চরবৃত্তির দায়ে পাক সামরিক আদালত কুলভূষণের মৃত্যদণ্ড দিয়েছে। ভারত মামলাটি আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
দিন ১৫ আগে ভারত অভিযোগ করেছিল, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মানছে না পাকিস্তান। কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। এরপর সোমবার পাকিস্তানের হাইকোর্ট জানাল, তারা কূলভূষণের আইনজীবী নিয়োগ করার জন্য ভারতকে আরেকটি সুযোগ দিতে চায়। এর আগে কুলভূষণ ও ভারত সরকার আইনজীবী নিয়োগের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।
ভারতের অভিযোগ ছিল, কুলভূষণের ন্যায় পাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে পাকিস্তান। ভারতীয় নাগরিক কুলভূষণকে চরবৃত্তির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পাকিস্তানের অভিযোগ হলো, কুলভূষণ ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। তিনি গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সঙ্গে যোগযোগ রেখে চলেন। তিনি বালুচিস্তানে গোলমাল করার চেষ্টায় ছিলেন। ভারত অবশ্য এই সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ২০১৭ সালে পাক সামরিক আদালত চরবৃত্তির দায়ে কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ ছিল, ভিয়েনা চুক্তি মেনে কুলভূষণের কাছে ভারতীয় কূটনীতিকদের অবাধে যেতে দিতে হবে। ভারতের দাবি এ পর্যন্ত মাত্র দুই বার ভারতীয় কূটনীতিকদের কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়েছে। নজর রাখা হয়েছে। খোলাখুলি কথাবার্তা হয়নি।
কার জন্য পাকিস্তানের এমন আন্তর্জাতিক লজ্জা?
ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার কুলভূষণ সুধীর যাদবকে ঘিরে আবার আন্তর্জাতিক মহলে লজ্জায় পাকিস্তান৷ কেন ঘটল এমন, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/F. Mahmood
কে এই কুলভূষণ যাদব?
২০১৬ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের পক্ষে ভারতকে জানানো হয় যে, তাদের হেফাজতে রয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার কুলভূষণ সুধীর যাদব৷ তার কাছ থেকে পাওয়া যায় একটি ভারতীয় পাসপোর্ট, যেখানে তার নাম লেখা ছিল ‘হুসেন মোবারক পাটেল’৷ পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’র হয়ে কাজ করছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
ভারত কী বলে?
ভারত সরকার জানায়, ২০০১ সালেই নৌবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন যাদব৷ তিনি ইরানে ব্যবসার কাজে থাকালীন সেখান থেকে তাকে অপহরণ করে পাক কর্তৃপক্ষ, জানায় ভারত৷ ‘র‘র সাথে যাদবের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার কথা জানিয়ে ২০১৬ সাল থেকেই তার মুক্তির আবেদন করে আসছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
তবুও অটল পাকিস্তান
ভারতের আবেদন সত্ত্বেও, যাদবকে আইনজীবী প্রদান করেনি পাকিস্তান৷ কিন্তু ২০১৭ সালে পাকিস্তানের পক্ষে জানানো হয়, যদি ভারত তদন্তে সহযোগিতা করে, তবে তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/H. Tyagi
মৃত্যদণ্ড ঘোষণা
পাকিস্তানের একটি সামরিক আদালতে শুরু হয় যাদবের মামলার বিচারকার্য৷ সাড়ে তিন মাস মামলা চলার পর, ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল যাদবকে দেওয়া হয় মৃত্যদণ্ডের সাজা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Rahi
আন্তর্জাতিক দরবারে ভারত
কূটনৈতিক দিক দিয়ে যাদব-মামলার সুরাহা না মিললে ২০১৭ সালে ভারত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা দায়ের করে৷ বলা হয়, আইনজীবীর অধিকার প্রত্যাহার করে ১৯৬৩ সালে ভারত-পাক চুক্তির উলঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান৷ আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ঘোষণা পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয় যাদবের ফাঁসির আদেশ৷
ছবি: Reuters/E. Plevier
আন্তর্জাতিক বিচারে হলো যা...
মামলা চলাকালে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি বিশেষ বেঞ্চ ভারত ও পাকিস্তান দুই পক্ষকেই তাদের সম্পূর্ণ বক্তব্য ও প্রমাণ পেশ করার সুযোগ দেয়৷ ২০১৭ সালে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গড়ায় ২০১৮ সালের মাঝামাঝি অবধি৷
ছবি: Reuters/E. Plevier
ঘোষণায় কী ফলাফল?
অনেক আলোচনা-পর্যালোচনার পর অবশেষে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক আদালতে ঘোষণা করা হয় মামলার ফলাফল৷ দেখা যায়, মামলার রায় রয়েছে ভারতের পক্ষেই৷
ছবি: Reuters/F. Mahmood
দুই পক্ষই নিরাশ
আদালতের রায়ে পাকিস্তানকে নির্দেশ দেওয়া হয় কুলভূষণ যাদবকে আইনজীবী রাখার অধিকার ফিরিয়ে দিতে৷ শুধু তাই নয়, ফাঁসির আদেশও করা হয় স্থগিত৷ পাশাপাশি, যাদবকে মুক্ত করার যে দাবি ভারত তুলেছিল, তা না মানলেও পাকিস্তানকে মৃত্যদণ্ডাদেশের পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Plevier
আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান
কুলভূষণ যাদব মামলা ইতিমধ্যে ভারতে পরিবেশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের কূটনৈতিক জয় হিসাবে৷ অন্যদিকে, যাদবকে মুক্ত করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়াকে পাকিস্তান বলছে ভারতের নৈতিক হার৷ কিন্তু বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমের নিরিখে, চাপের পাল্লা পাকিস্তানের দিকেই ভারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
9 ছবি1 | 9
দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার হয়েছে গত মাসে। পাকিস্তান আধিকারিকরা কুলভূষণকে নিয়ে এসেছিলেন। কুলভূষণকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি প্রবল চাপের মধ্যে আছেন। কুলভূষণকে আইনি কাজে সম্মতি দেয়ার ব্যাপারে সই পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে পাক সরকার একটা আবেদন জানিয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, আদালতই কুলভূষণের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করে দিক। পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে জানিয়েছেন, কুলভূষণ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে পর্যালোচনা বা ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করতে অস্বীকার করেছেন। বিচারপতি আতহার মিনাল্লা বলেছেন, এখন তো মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন। তাই ভারতকে আইনজীবী নিয়োগ করার আরেকটা সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ভারত সরকার বা কুলভূষণ তাদের সিদ্ধান্ত আবার বিচার করে দেখুক।
মামলার পরের শুনানি আগামী ৫ সেপ্টেম্বর। গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক কোর্ট বলেছিল, পাকিস্তানের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন পুনর্বিচার করা উচিত। ভারতের আবেদন মেনে নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ছিল, পাকিস্তান ভিয়েনা চুক্তি ভঙ্গ করেছে। কুলভূষণের কাছে ভারতের কূটনৈতিকদের অবাধে যেতে দিতে হবে। কিন্তু ১১ বার অবেদন জানানোর পর মাত্র দুইবার যেতে দেয়া হয়েছে ভারতীয় কূটনীতিকদের।