পাকিস্তানের হাতে বন্দি ভারতীয় নৌ-বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে দেখা করেছেন তার মা এবং স্ত্রী৷ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এ বছরের এপ্রিলে যাদবকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানের সামরিক আদালত৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ইসলামাবাদে তার স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছিল পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ৷ যাদব আর তার পরিবারের মধ্যে ছিল একটা কাঁচের ব্যবধান৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ছবি প্রকাশ করেছে৷ এছাড়া পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যাদব বলছেন, ‘‘পাকিস্তানের এই মহানুভবতার জন্য ধন্যবাদ৷'' পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পরিবারের সঙ্গে যাদবের সাক্ষাতের সময় ছিল ৪০ মিনিট৷ ‘‘তারা একে অপরের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছেন৷ ভারতের সঙ্গে আমাদের যে কথা হয়েছিল, আমরা সেই কথা রেখেছি৷ আমরা একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, তা হলো, ভারতের অনুরোধে মানবিক দিক বিবেচনা করে এবং ইসলামের আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা এই কাজটি করেছি৷ কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম৷''
ভারতীয় নৌ-সেনায় কর্মরত ছিলেন কুলভূষণ৷ অবসরগ্রহণের পর ইরানে ব্যবসা করতেন৷ বৈধ পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র'-এর এজেন্ট সন্দেহে তাঁকে আটক করা হয় ২০১৬ সালের মার্চে৷ পাকিস্তানের দাবি, সামরিক আদালতে যাদব স্বীকার করেছেন তিনি ‘র'-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন৷ চলতি বছরের ১০ এপ্রিল ভারতীয় নৌ-সেনার এই প্রাক্তন অফিসারকে গুপ্তচরের তকমা দিয়ে কার্যত বিনা বিচারে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় পাকিস্তানের সামরিক আদালত৷ ভারত আন্তর্জাতিক আদালতে আর্জি জানালে মৃত্যুদণ্ডের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে আদালত৷
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক বিরাজ পাটনায়েক বলেছেন, ‘‘কুলভূষণের এই শাস্তির নিন্দা জানিয়েছে৷ তারা বলছে, পাকিস্তানের সামরিক আদালত যে আন্তর্জাতিক আদালতের মানদণ্ড মেনে চলে না৷''
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ইসলামাবাদে আমাদের হাইকমিশন আন্তর্জাতিক আইন মেনে যাদবের জন্য একজন কনস্যুলার নিয়োগের আবেদন জানিয়ে আসছে কিন্তু পাকিস্তান কখনো সেটার অনুমোদন দেয়নি৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘‘২০১৬ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত অন্তত ১৩ বার এই আবেদন জানানো হয়েছে৷ কিন্তু যাদবের বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে কোনোরকম তথ্য পাওয়া যায়নি পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে৷''
ভারত এবং পাকিস্তান বরাবরই একে অপরের বিরুদ্ধে নজরদারি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করে থাকে৷
শামিল শামস, মুরালি কৃষ্ণান/এপিবি
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷