1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কুসংস্কারের শিকার নেপালের বহু মেয়ে

Debarati Guha৫ জানুয়ারি ২০১২

যুগ যুগ ধরে চলে আসা অন্ধ সংস্কার, আচার-অনুষ্ঠানের শিকার হয়ে থাকে বহুলাংশে মেয়েরা৷ নেপালেও সেটাই ঘটছে৷ সেখানে রজঃস্রাব হয়েছে এবং সদ্য সন্তানের জন্ম দিয়েছে এমন মেয়েদের সব রকমের পারিবারিক কাজকর্মের বাইরে রাখা হয়৷

পুরুষ শাসিত সমাজে নারীছবি: DW-TV

অনেককে পাঠিয়ে দেয়া হয় পুরোপুরি অন্ধকার একটি ঘরে৷ এই সময়ে মেয়েটি বাড়ির কোন পুরুষদের সামনে আসতে পারবে না, কথা বলতে পারবে না৷ দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারবে না, স্পর্শও করতে পারবে না৷ অন্তত আট দিন কঠিন এক সময় পার করতে হয় মেয়েটিকে ৷

সরস্বতী বিশ্বকর্মা অন্ধকার একটি ঘরে বসে আছে৷ সুতির একটি চাদরের ওপর সে বসে আছে৷ চাদরটি খড়ের ওপর বিছানো৷ ডিসেম্বর মাসের ঠাণ্ডায় সরস্বতী একেবারে জুবুথুবু হয়ে বসে আছে৷ ঠাণ্ডায় কাঁপছে সে৷ সকাল হয়ে গেছে অনেক আগে৷ কিন্তু সরস্বতী এখনো এই তার খুপরি থেকে বের হতে পারবে না৷ তের বছরের সরস্বতী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরপরই তাকে ইঁট দিয়ে তৈরি এই চালাঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷ কোন জানালা নেই, পানির ব্যবস্থাও নেই৷ সেখানে সোজা হয়ে দাঁড়ানো যায় না৷ সারাক্ষণই বসে থাকতে হয়৷ সরস্বতী জানাল,‘‘আমাকে এখানে নয় দিন থাকতে হবে৷ আটদিন পার হয়েছে আর মাত্র একদিন বাকি৷'' খুবই ভীত হয়ে সে বলল,‘‘এখানে থাকা কষ্টকর৷ রাতে একা থাকতে ভয় করে৷ প্রথম রাতে আমার এত ভয় করছিল৷ আমি ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি৷''

ঠিক এই সময়ে সরস্বতীর একা থাকা নতুন কিছু নয়৷ যুগের পর যুগ ধরে প্রচলিত এই রীতি পালন করছে নেপালের মানুষরা৷ নেপালের ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া মেয়েকে নানা ধরণের রীতি-নীতি মেনে চলতে হয়৷ এই রীতির স্থানীয় নাম ‘চৌপদী'৷ এই প্রচলিত নিয়ম মেনে চলতে গিয়ে অনেক অল্প বয়স্ক মেয়ে বিষন্নতায় ভুগেছে, খুপরির মত জায়গায় নয় দিন একা থাকতে না পেরে অনেক মেয়ে মারাও গিয়েছে৷

রজঃশ্রাবের অভিজ্ঞতার ফলে প্রথমবারের মত যখন একটি মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন সে বাড়িতে থাকতে পারে না৷ বাড়ির কোন কিছু স্পর্শ করতে পারে না, বাড়ির পুরুষদের সঙ্গে কথা বলা এমনকি চোখ তুলে তাকানো পর্যন্ত নিষেধ৷ স্থানীয় মানুষদের অন্ধ বিশ্বাস, এই সময়ে একটি মেয়ে তার পবিত্রতা হারায় এবং তখন সে পরিবারের ওপর অশুভ কিছু নিয়ে আসতে পারে তাই তাকে পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়৷ মেয়েটি যেন ‘অচ্ছুৎ'৷ মেয়েটির কাছে কেউ যেতে পারে না৷

কবি অধিকারীছবি: Kabi Adhikari

কবি অধিকারী নেপালেরই মেয়ে৷ কাটমান্ডুতে বাস তাঁর৷ বিবাহিত কবির দুটি সন্তান৷ একটি জার্মান উন্নয়ন সাহায্য প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ কবি জানালেন, নেপালের কিছু কিছু অঞ্চলে এই রীতি চালু থাকার কথা৷ তাঁর কথায়: ‘‘নেপালে এসব রীতি এখনো বেশ কঠোরভাবে মেনে চলা হয়৷ নেভার সম্প্রদায়ের কোন মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে রান্নাঘরে যেতে দেয়া হয় না৷ বাড়ির অন্য মানুষকে সে স্পর্শ করতে পারে না৷ কথাও বলতে পারে না৷ আমি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের৷ ব্রাহ্মণ এবং ছত্রী একই নিয়ম নীতি মেনে চলে৷ আমাকে একটি অন্ধকার ঘরে আট দিনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ কোন কোন পরিবারে তা নয় দিন, কোথাও চৌদ্দ দিন কোথাও একুশ দিন৷''

গত বছরের জানুয়ারি মাসে এ ধরণের ‘চৌপদী'-তে থাকার সময় দুটি মেয়ে মারা যায়৷ একটি মেয়েকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে৷ মেয়েটি ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে মারা গেছে৷ বাইরে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ওয়ান৷ অথচ মেয়েটিকে দেয়া হয়েছিল পাতলা একটি চাদর৷ আরেকটি মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়৷ এবং কয়েকদিন পর মারা যায়৷

একা অন্ধকার ঘরে থাকতে কেমন লাগতো? এই প্রশ্নের উত্তরে কবি অধিকারী জানালেন: ‘‘সেটা ১৫ বছর আগের কথা৷ আমাকে একটি অন্ধকার ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ বলা হয়েছিল আটদিন আমাকে সেখানে থাকতে হবে, আমি বের হতে পারবো না৷ কিন্তু আমি তা সহজে মেনে নেইনি৷ কারণ তখন আমার স্কুলে পরীক্ষা চলছিল৷ আমি মা'কে সোজা বলেছি আমি পরীক্ষা দেব৷ তখন আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হয়েছিল৷ তবে আমাকে বলা হয়েছিল কোন পুরুষের দিকে চোখ তুলে না তাকাতে, বাড়ির কোন পুরুষের সঙ্গে কথা না বলতে৷ আমি তা করেছিলাম৷''

এই অবস্থার পরিবর্তন দেখতে চান কবি অধিকারী৷ আজ তারও একটি কন্যা সন্তান আছে৷ প্রিয় সেই কন্যাকেও কী এই ধরণের রীতি মেনে চলতে হবে? প্রিয় কন্যাকে পাঠিয়ে দেয়া হবে অন্ধকার একটি ঘরে আটদিনের জন্য? কবি জানান, কোন অবস্থাতেই তিনি তা করবেন না৷ এ ধরণের মানসিক বিপর্য়ের হাত থেকে তিনি তার প্রিয় কন্যাকে রক্ষা করবেন সেটা যেভাবেই হোক না কেন৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ