বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য শুরুতেই কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়৷ সেই প্রস্তুতিতে কতটা খামতি ছিল তা দিন দিন প্রকোট হয়ে উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব, পিপিই ও এন নাইনটি ফাইভ মাস্কের অভাব-এসব তো আছেই৷ যেসব দেশে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ মারাত্মকভাবে ছড়িয়েছে তাদের প্রায় সবগুলোকেই এই সংকটে পড়তে হয়েছে৷
কিন্তু আতঙ্কে হাসপাতালের রাঁধুনি পালিয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের খাদ্য সংকটে পড়া, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাওয়ার পরও বিনা নোটিশে চিকিৎসকদের বরখাস্ত হওয়া এবং সর্বশেষ নার্সদের দিনের পর দিন অভুক্ত থাকা বা তাদের পচা খাবার সরবরাহ করা অভিযোগ৷ এসব তো চরম অব্যবস্থাপনা ছাড়া আর কিছু না৷
ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে নার্সদের খাবার সংকট থাকার কথা স্বীকার করে নার্সিং ইন্সটিটিউটের উপপরিচালক শাহানারা খাতুন বলেছেন, বাজেট না থাকায় খাবারের এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷
অথচ দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের আগেই গত ফেব্রুয়ারিতে এ রোগের চিকিৎসার জন্য কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে দাবি করা হয়৷ সরকার শুরু থেকে বলছে সব প্রস্তুতি আছে৷ অথচ বাজেট সংকটে সেই ‘প্রস্তুত' হাসপাতালের নার্সরা এখন খাবার পাচ্ছেন না৷ হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন নাইনটি ফাইভ মাস্ক না থাকায় চিকিৎসকদের ভাগ্যে সেটি জুটলেও নার্স, বয় বা আয়াদের ভাগ্যে সেটি জুটছে বলেও শোনা যাচ্ছে৷
এ বিষয়ে জানতে ডয়চে ভেলে থেকে টেলিফোনে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে দায়িত্বরত দুইজন নার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি৷ অর্থাৎ, নিজেদের অভিযোগ সংবাদ মাধ্যমকে জানানোর সাহস তারা পাচ্ছেন না৷
দেশে দেশে অস্থায়ী করোনা হাসপাতাল
করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা৷ ফলে অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/WANA/A. Khara
ইটালি
মিলানের কাছে ক্রেমোনা হাসপাতালের বাইরে একটি ফিল্ড হাসপাতাল৷
ছবি: Getty Images/E. Cremaschi
যুক্তরাষ্ট্র
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানের জ্যাকব কে জ্যাভিটস কনভেনশন সেন্টারে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
স্পেন
মাদ্রিদের আইএফইএমএ কনফারেন্স সেন্টারে এই সামরিক হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Comunidad de Madrid
ফ্রান্স
মুইলোজে শহরের একটি হাসপাতালের বাইরে সামরিক বাহিনী একটি ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তুলেছে৷
ছবি: Reuters/S. Bozon
ইরান
তেহরানের এক শপিং মলকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Reuters/WANA/A. Khara
চীন
উহান শহরে প্রথম করোনা ধরা পড়েছিল৷ সেখানে গড়ে তোলা ১৬টি অস্থায়ী হাসপাতালের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় গতমাসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
ব্রাজিল
সাও পাওলোর আইবিরাপুয়েরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/R. Patrasso
রাশিয়া
মস্কোর বাইরে এই হাসপাতালটি নির্মাণের কাজ চলছে৷
ছবি: Reuters/Moscow News Agency/D. Voronin
গাজা
রাফাহ সীমান্তে এই কোয়ারান্টিন ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/WHO in the Occupied Palestinian Territories
সার্বিয়া
বেলগ্রেডের মেলা আয়োজনের এই হলকে করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
পোল্যান্ড
রকলো শহরের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক্যাল হাসপাতালের বাইরে এই অস্থায়ী এমার্জেন্সি রুম তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Agencja Gazeta/K. Cwik
সুইডেন
গোথেনবুর্গের একটি হাসপাতালের বাইরে এই ফিল্ড হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়৷
ছবি: Reuters/TT NEws Agency/A. Ihse
ইন্দোনেশিয়া
জাকার্তার কেমায়োরান অ্যাথলেট ভিলেজে গড়ে তোলা এই হাসপাতালের যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখছেন এক ডাক্তার৷
ছবি: Reuters/Antara Foto/H. Mubarak
কলোম্বিয়া
বোগোতার সামরিক হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Munoz
জার্মানি
লায়েরের একটি সাবেক হাসপাতাল আবারও প্রস্তুত করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Kuegeler
আর্জেন্টিনা
বুয়েনস আইরেসের কাছে সান মিগুয়েলেতে এই মিলিটারি মোবাইল হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Baglietto
16 ছবি1 | 16
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, বরখাস্ত ছয় চিকিৎসকের কাজে ফেরার সুযোগ এখনো রয়েছে৷ চিকিৎসকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে৷ তার মানে দাঁড়ায়, চিকিৎসকদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করেই তাদের বরাখাস্ত করে দেওয়া হয়৷ বরখাস্ত হওয়া চিকিৎসকেরাও একই অভিযোগ করেছেন৷ তারা দাবি করেছেন, কর্তৃপক্ষ তাদের কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়েই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
দেশ যখন মহাসংকটে, প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়াচ্ছে তখন এই অব্যবস্থাপনার ফল কী হতে পারে?
যদিও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন একটি ভালো খবরও পাওয়া গেছে৷
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার ও নার্সদের থাকার জন্য ঢাকায় ২০টি অভিজাত ও নিরাপদ হোটেলের নাম প্রস্তাব করেছে সরকার৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে৷
এসব হোটেলের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা রিজেন্সি, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, লা মেরিডিয়ান, রাজমণি ঈসা খা, হোটেল ৭১ ইত্যাদি৷
এসব হোটেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল এবং কমলাপুরের জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের থাকার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷ কতদিনে এ ব্যবস্থা হবে তার উত্তর এখনো আমাদের জানা নেই৷
এসএনএল/কেএম
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রী
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত জার্মানির ২০ হাজারেরও বেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী। অনেকেই নেমে পড়েছেন লড়াইয়ে। ছবিঘরে জানুন তাদের কথা...
ছবি: Imago Images/ULMER Pressebildagentur
একটি ফেসবুক গ্রুপ
মেডিসভার্সাসকোভিড-১৯ (Medis Vs COVID-19) নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ। ইতিমধ্যে কুড়ি হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এই প্লাটফর্মে যোগ দিয়েছেন।
ম্যাচফোরহেলথকেয়ার (Match4Healthcare) নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমেও মেডিকেলে পড়ছেন এমন অনেকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
জার্মানিকে বাঁচাতে..
. মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্রী শার্লট ডুব্রাল কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেন্টিভ মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ বিভাগে কাজ শুরু করার কারণ জানাতে গিয়ে ২৩ বছর বয়সি শার্লট বলেন, " আমি আমার ইতালীয় ও স্প্যানিশ বন্ধুদের কাছ থেকে তাদের দেশের অবস্থা সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। জার্মানির সে অবস্থা হোক তা চাই না বলে এই কাজে যোগ দিয়েছি।"
ছবি: Privat
'এই পেশায় ঝুঁকি থাকবেই'
বন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সপেরিমেন্টাল ইমিউনোলজিতে পিএইচডি করছেন মরিৎস লেভেকে। এখন বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকে করোনায় সংক্রমিতদের চিকিৎসায় নার্সদের সহায়তা করছেন তিনি। নিজেও সংক্রমিত হতে পারেন ভেবে ভয় লাগে কিনা জানতে চাইলে মরিৎস বলেন, " মেডিসিনে পড়াশোনা শুরুর আগেই এই পেশায় যে ঝুঁকি আছে তা জানা হয়ে যায়। সুতরাং ভয় পাবো কেন? তাছাড়া এখন তো এমন পরিস্থিতি, যখন আমাদের এগিয়ে আসা খুব দরকার।"
ছবি: Privat
সবার সহায়তা দরকার
জার্মান মেডিকেল ফেডারেশন ডিকেজি-র ব্যার্নার্ড মেডিৎসিঙ্গার মনে করেন, জার্মানিতে তরুণ প্রজন্ম দেশের প্রতি অনেক দায়বদ্ধ, তাই এই সময় তাদের এগিয়ে আসাটাই স্বাভাবিক। তিনি জানান, আগামী দুই সপ্তাহে করোনায় সংক্রমিত রোগী অনেক বেড়ে যেতে পারে। তখন আরো বেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীর সহযোগিতার দরকার হবে বলেও মনে করেন তিনি।