নেদারল্যান্ডসের ‘দেখে নেবেন' বলে হুমকি দিয়েছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী৷ জার্মানির পর সে দেশকেও নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট তকমা দিয়েছেন তিনি৷ গোটা ইউরোপে তুর্কি মন্ত্রীদের নির্বাচনি প্রচার নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
বিজ্ঞাপন
ন্যাটোর এক সদস্য দেশ অন্য এক সদস্য দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ডাক দিচ্ছে, এমনটা সত্যি অভূতপূর্ব ঘটনা৷ কিন্তু তুরস্ক নেদারল্যান্ডসের উপর চারিদিক থেকে চাপ বাড়াতে এমনটাই করছে৷ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান এই মুহূর্তে পশ্চিম ইউরোপের একাধিক দেশের প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন৷ কারণ তাঁর মন্ত্রীরা সে সব দেশে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকদের সামনে আসন্ন গণভোটের প্রচার করতে গিয়ে বার বার বাধার মুখে পড়ছেন৷ কখনো নানা সাংগঠনিক, নিরাপত্তাজনিত বা প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রচারসভা বাতিল করা হচ্ছে, কখনো কূটনৈতিক পথে মন্ত্রীদের সফর কঠিন করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে৷
তবে সপ্তাহান্তে নেদারল্যান্ডসে যা ঘটলো, তা বাকি ঘটনাগুলিকে ম্লান করে দেয়৷ তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভল্যুট চাভুশোলু রটারডাম শহরে একটি জনসমাবেশে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তাঁর বিমান অবতরণেরই অনুমতি পায়নি৷ আরেক মন্ত্রী জার্মানি থেকে স্থলপথে নেদারল্যান্ডসে প্রবেশ করেছিলেন৷ কিন্তু সে দেশের পুলিশ তাঁকে আবার জার্মানি সীমান্তে ফেরত পাঠিয়ে দেয়৷ উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডসে আগামী বুধবার সাধারণ নির্বাচন৷ বিষয়টি ভোটারদের মনে প্রভাব ফেলবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ চরম দক্ষিণপন্থি প্রার্থী গেয়ার্ট (বানানভেদে খেয়ার্ট) ভিল্ডার্স তুরস্কের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন৷ এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সরকারও অস্বাভাবিক কড়া অবস্থান নিতে কতকটা বাধ্য হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷
অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডেও তুর্কি মন্ত্রীদের বেশ কয়েকটি নির্বাচনি প্রচারসভা বাতিল করা হয়েছে৷ সুইজারল্যান্ডের পুলিশ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে৷ অস্ট্রিয়ায় বই প্রকাশের অনুষ্ঠানের আড়ালে রাজনৈতিক মঞ্চের পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ বাতিল করে দিয়েছে৷ তবে ফ্রান্সের মেৎস শহরে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাভুশোলু এক জনসভায় ভাষণ দিতে পেরেছেন৷ ডেনমার্ক তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর সফর পিছিয়ে দিয়েছে৷
সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট পদের হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দিতে বদ্ধপরিকর এর্দোয়ান৷ এই প্রশ্নে আগামী ১৬ই এপ্রিল গণভোট অনুষ্ঠিত হবে৷ বিশেষ করে বিদেশে বসবাসরত সব তুর্কি ভোটারদের মন জয় করতে তিনি কোনো কার্পণ্য করছেন না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ একাধিক মহল এর্দোয়ানের প্রয়াসকে গণতন্ত্র-বিরোধী হিসেবে সমালোচনা করে চলেছে৷ তবে ইউরোপে তুরস্কের মন্ত্রীদের রাজনৈতিক জনসভা মত প্রকাশের অধিকারের আওতায় পড়ে কিনা, তা নিয়ে ইইউ-র মধ্যেও কম বিতর্ক চলছে না৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
নতুন তুরস্ক গড়ার অঙ্গীকার দিলেন এর্দোয়ান
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা তিন সপ্তাহ ধরে এর্দোয়ানের পক্ষে ব়্যালির পর, তুরস্কের ৮০টি শহরে গত রবিবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আঙ্কারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়াগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
রাজপথে নামার আহ্বান
গতমাসে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাজপথে নেমে ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে হটাতে সহায়তার আহ্বান জানান৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ এবং সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ এরপর এর্দোয়ান প্রতিরাতে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাখো মানুষের উপস্থিতি
রবিবার চূড়ান্ত ব়্যালিতে ইস্তানবুলে হাজির ছিলেন ২০ লাখের মতো মানুষ৷ আঙ্কারায় ছিলেন দশ হাজার৷ তুরস্কের মোট ৮০টি শহরে এ সময় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ এর্দোয়ানের একেপি হচ্ছে প্রথম দল, যেটি ইসলামিক মনোভাব প্রদর্শন সত্ত্বেও একটি সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একে দেশটির ইতিহাসরচনাকারী সেনাবাহিনী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিপরীতে বড় জয় মনে করছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
এক নতুন তুরস্ক নিয়ে আশাবাদ
ইস্তানবুল থেকে দেয়া বক্তব্যে এর্দোয়ান নতুন এক তুরস্ক গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং তাঁর সমর্থকরাও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ আঙ্কারার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী লালে আলিচি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ব়্যালিতে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার পর তুরস্ক দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, কেননা তখন সরকারকে বাধা দেয়ার আর কেউ থাকবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘‘আমরা বড় শক্তি হবো’’
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আতালে জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন কেননা তিনি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরাও আছি এবং শীঘ্রই বড় শক্তিতে পরিণত হবো৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এইচডিপিকে নেয়া হয়নি
যদিও রবিবারের ব়্যালিতে অংশ নেয়া অনেকে দাবি করেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা, তাসত্ত্বেও বিরোধীরা জানিয়েছেন, সেদেশের তৃতীয়-বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কুর্দিপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-কে ব়্যালিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি৷ এক কুর্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কুর্দ হিসেবে আমি সেখানে যেতে পারি না, কেননা আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উত্থান
জাতীয় জরুরি অবস্থায় সাধারণত ব্লক করা থাকলেও ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এর্দোয়ানের ‘ফেসটাইম’ বক্তব্য থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখানো ‘পেরিসকোপ’ ভিডিও অবধি সবকিছুই অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সরকার নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷