1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পুশ-ইন সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ

৫ জুন ২০২৫

প্রতিদিনই বাংলাদেশের কোন না কোন সীমান্ত দিয়ে পুশ-ইনের ঘটনা ঘটছে৷ বিশ্লেষকদের মতে, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে৷

ভারতের আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত
বিজিবি জানিয়েছে, ৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ২৫ দিনে দুর্গম সীমান্ত দিয়ে এক হাজার ২২১ জনকে পুশ-ইন করেছে বিএসএফছবি: Biswa Kalyan Purkayastha

বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, পঞ্চগড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আরও অন্তত ৭১ জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে৷

পুশ-ইন করার জন্য সীমান্তবর্তী ১৮ জেলাকে বেছে নিয়েছে বিএসএফ৷ সবচেয়ে বেশি পুশ-ইনের ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার তিন সীমান্ত দিয়ে৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত পহেলা জুন আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়ে বৈঠক করেছি৷ সেখানে আমরা আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়েছি, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করা হয়েছে৷'' অবৈধ ভারতীয়দের পুশ-ব্যাক করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘কিছু পুশ-ব্যাক করা হচ্ছে৷ তবে সেটা অফিশিয়ালি নয়' এর কোন পরিসংখ্যানও আমাদের কাছে নেই৷ তবে বাংলাদেশ যথাযথ নিয়ম মেনেই তাদের পুশ-ব্যাক করছে৷ আবার তারা ইউএনএর কার্ডধারী রোহিঙ্গাদেরও পুশ-ইন করছে৷ এটা তো তারা কোনভাবেই করতে পারে না৷''

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠানো হলেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি৷ এমনকি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) পতাকা বৈঠকেও কোন সমাধান মিলছে না, বরং বিএসএফের এই তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে৷

বিজিবির খাগড়াছড়ি সেক্টরের কমান্ডার কর্ণেল আব্দুল মোত্তাকিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথমদিকে বিএসএফ যখন খাগড়াছড়ি দিয়ে কিছু মানুষকে ঠেলে ভেতরে পাঠায় তখন আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি৷ ওই বৈঠকে বিষয়টি তারা অস্বীকার করেছে৷ তবে আমরা যখন তথ্য উপাত্ত দিয়ে তাদের বলেছি যে, এই মানুষগুলোকে বিএসএফই ঠেলে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, তখন তারা কোন জবাব দেয়নি৷ তখন থেকেই আমরা সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছি৷ টহল কার্যক্রমও আগের থেকে অনেক বেশি জোরদার করা হয়েছে৷ ফলে এই সীমান্ত দিয়ে তারা আর কাউকে পাঠাতে পারেনি৷ তবে অন্য সীমান্ত দিয়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে৷''

বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু এলাকায় ঘন জঙ্গল ও দুর্গম পাহাড় থাকায় বিজিবির টহল কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিচ্ছে বিএসএফ৷ এ রকম ২৬টি সীমান্ত এলাকাকে ‘হটস্পট' হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিজিবি৷ ওই সব এলাকায় টহল জোরদার, সীমান্ত পাহারায় স্থানীয়দের যুক্ত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷

নিরাপত্তা ও অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পুশ-ইনের ব্যাপারে অফিশিয়ালভাবে জানানোর পরেও তা ঠেকানো যাচ্ছে না৷ পুশ-ইন থামানো না গেলে ভারত আরও উৎসাহিত হয়ে পুশ-ইন বাড়িয়ে দিতে পারে৷ এতে সংকট আরও গভীর হতে পারে৷ পুশ-ইন বন্ধে প্রয়োজনে কূটনৈতিক পর্যায়ে দুই দেশের সরকার পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে৷ এতেও কাজ না হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জাতিসংঘের দ্বারস্থ হতে হবে৷ সেখান থেকে সমাধান খুঁজতে হবে৷

‘ভারত থেকে পুশ-ইন ঠেকানো সম্ভব না'- এমনটা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘পুশ-ইন হচ্ছে, ফিজিক্যালি এটি ঠেকানো সম্ভব নয়৷ এটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের চিঠি আদান-প্রদান হচ্ছে৷ এ সমস্যা সমাধানে কনস্যুলার পদ্ধতির (কনস্যুলার ডায়ালগ) আওতায় ভারতের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ৷''

তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘‘সম্ভব নয় বলে' পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না৷ সম্ভব করার জন্যই তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ তার মানে তিনি কূটনৈতিক তৎপরতায় ফেল করেছেন৷ কিন্তু এই সমস্যার সামাধানে অন্য কোন পথ খোলা নেই৷ এটা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে৷ ভারত যেটা করছে সেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ ভারতের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টার পাশাপাশি প্রতিবাদ জানানোও উচিত৷''

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কূটনৈতিক তৎপরতা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান হবে না৷ এখন বাংলাদেশের চিঠির জবাব দিচ্ছে না ভারত, এই তো৷ এখানে থেমে থাকলে হবে না৷ বিকল্প আরও অনেক পথ খোলা আছে৷ বাংলাদেশে তাদের হাইকমিশন আছে৷ হাইকমিশনারকে ডেকে কথা বলতে হবে৷ আবার দিল্লিতে আমাদের যে দূতাবাস আছে, তারা প্রয়োজনে ওদের পররাষ্ট্র দপ্তরে গিয়ে কথা বলবে৷ একটা পর্যায়ে তো তারা কথা শুনবে৷ এখন তারা ঠেলে দিচ্ছে, আমরাও ঠেলে দেবো, এভাবে সমাধান হবে না৷''

ভারতে কাজ করা একজন কূটনীতিক পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আলাপকালে বলছিলেন, ‘‘সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে৷ ভারত সরকার নমনীয় হতে শুরু করেছে৷ শিগগিরই এর ফল পাওয়া যেতে পারে৷''

নির্যাতন করছে বিএসএফ

সেলিনা বেগম নামের ৪১ বছর বয়সি একজন বাংলাদেশি নারী অভিযোগ করেছেন, বিএসএফ গভীর রাতে তাকে ও তার তিন মেয়ের শরীরে খালি প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে দেয়৷ এরপর ত্রিপুরার সাবরাং সীমান্তের কাছে ফেনী নদীতে তাদের ফেলে দেয়৷ ফেনী নদী ত্রিপুরার সাবরাং জেলা ও বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার মাঝামাঝি সীমান্ত নির্দেশনা দেয়৷ বিএসএফ পুশ-ইন করার পর ফেনী নদীতে তারা সারা রাত ভেসেছিলেন৷ পরদিন সকালে বাংলাদেশের সীমান্তের বাসিন্দারা তাদের উদ্ধার করেন৷ সেলিনা বেগম বলেন, ‘‘আমার সন্তানরা বুঝতে পারেনি কী হচ্ছে৷ আমরা সারা রাত নদীতে ভেসে ছিলাম৷''

বিজিবি সূত্র জানায়, গত ২২ মে ভোর ৬টার দিকে রামগড়ের সোনাইপুল এলাকার কাছে স্থানীয়রা সেলিনা, তার স্বামী উম্মেদ আলী এবং তিন মেয়েকে ফেনী নদী থেকে উদ্ধার করে৷ পরে মহামুনি ক্যাম্প থেকে বিজিবির সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হেফাজতে নেন৷ পরিবারটি তাদের জানিয়েছে, তারা ভারতের হরিয়ানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন৷ হরিয়ানার স্থানীয় পুলিশ তাদের আটকের পর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়৷ তাদের জমানো অর্থ কেড়ে নেয়৷ অনেকটা অভুক্ত অবস্থায় তাদের একটা ট্রেনে তোলা হয়৷ কয়েক দফা ট্রেন পরিবর্তন করার পর তাদের আনা হয় ত্রিপুরা রাজ্যে৷ সেখান থেকে গাড়িতে করে সাবরাং জেলা শহরের সীমান্তবর্তী বিএসএফের একটি ক্যাম্পে আনা হয়৷ এরপর তাদের প্রত্যেকের শরীরে খালি প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে দেওয়া হয়৷

২৫ দিনে ১৮ জেলা দিয়ে এসেছে ১২২১ জন

বিজিবি থেকে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এই ২৫ দিনে দুর্গম সীমান্ত দিয়ে এক হাজার ২২১ জনকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ৷ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি পুশ-ইনের ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার তিন সীমান্ত দিয়ে৷ এ বিষয়ে বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু এলাকায় ঘন জঙ্গল ও দুর্গম পাহাড় থাকায় বিজিবির টহল কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিচ্ছে বিএসএফ৷

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা কিন্তু সাধারণ কোন সমস্যা নয়, এটা রাজনৈতিক সমস্যা৷ ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর তারা চূড়ান্তভাবে এই সরকারকে অসহযোগিতা করছে৷ তারা এমন কিছু বাজিণ্য নীতি নিয়েছে যেটার জন্য তাদেরও ক্ষতি হবে৷ কিন্তু তারপরও তারা এটা নিয়েছে৷ বাংলাদেশে তারা পুশ-ইন কবে থেকে শুরু করল? সম্ভবত, যেদিন তারা পাকিস্তানে হামলা চালালো সেদিন থেকে৷ এখন তারা এটাও প্রচার করছে, বাংলাদেশ থেকে অনেক মুসলিম অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করছে৷ এটা বিজেপির নির্বাচনী পলিসি৷ বাংলাদেশকেও একই ধরনের পলিসি নিতে হবে৷ এখানেও অনেক ভারতীয় অবৈধভাবে চাকরি করছেন৷ তাদেরও সনাক্ত করে একইভাবে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে৷ তাহলে যদি তারা আলোচনায় সাড়া দেয়৷ এর বাইরে তো কিছু দেখি না৷''

অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাদের পুশ-ইন করছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশি যারা তারা কী উদ্দেশ্যে, কবে ভারতে গিয়েছিল, কোনভাবে গিয়েছিল, তাদের ভারতীয় বৈধ কোনো কাগজপত্র ছিল কি না? এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা দরকার৷ পুশ-ইন জোর করে হলেও দেখার বিষয় বিজিবির কাছে সর্বোচ্চ কী দিকনির্দেশনা দেওয়া ছিল৷ সে অনুযায়ী তারা (বিজিবি) উপস্থিত ছিল কি না৷''

কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন আসিফ মুনীর৷ তার মতে, প্রয়োজন হলে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো উচিত৷ যদি পুশ-ইন চলমান থাকে তাহলে ভারতের কাছে এমন কোনো তালিকা আছে কী-না সেটাও খোঁজ নেয়া দরকার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ