আফ্রিকার দুই প্রতিবেশী দেশ মরক্কো ও আলজেরিয়ার মধ্য বিভিন্ন ইস্যুতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিরোধ চলছে৷ কিন্তু বিশ্বকাপে মরক্কোকে সমর্থন করছেন আলজেরিয়ার সাধারণ মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে মরক্কোর সখ্যতার কারণে অখুশি আলজেরিয়া৷ ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে একমত হয় মরক্কো৷
এছাড়া আলজেরিয়ার উপকূলীয় কাবিলি এলাকায় স্বায়ত্তশাসন চাওয়া এমএকে গোষ্ঠীকে মরক্কো সমর্থন দিচ্ছে বলেও আলজেরিয়া অভিযোগ করে আসছে৷
আর আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে মরক্কোর অভিযোগ, পশ্চিম সাহারাকে স্বাধীন করতে চাওয়া পোলিসারিও ফ্রন্টকে সমর্থন দিচ্ছে তারা৷
আলজেরিয়ার টিভিতে মরক্কো নেই
বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের মতো দলকে মরক্কো ২-০ গোলে হারালেও সেদিন আলজেরিয়ার টিভির খবরে ঐ ম্যাচের ফলাফল দেখানো হয়নি৷ আর স্পেনকে হারানোর পর টিভিতে বলা হয়, ‘‘লা রোজাদের জন্য একটা কঠিন ম্যাচ ছিল এবং তাদেরকে পেনাল্টি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে তারা বাদ পড়ে যায়৷'' তবে কাদের কারণে বাদ পড়েছে সেটি উল্লেখ করা হয়নি৷
এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে হারানোর পর আলজেরিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে মরক্কোর পতাকা দেখানো হয়৷ এর পরদিনই ঐ টিভির মহাপরিচালকের চাকরি চলে যায়৷
মরক্কো ঘুরতে গেলে এই ১৫টি জায়গায় অবশ্যই যাবেন
অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে আফ্রিকার সবচেয়ে পশ্চিমের দেশ ‘মরক্কো’৷ ইউরোপের এত কাছে হলেও কিছুতেই ইউরোপীয় নয় দেশটি৷ রাজধানী রাবাত যেখানে ছেয়ে গেছে বিদেশি গাড়িতে, সেখানেই আবার উট ছাড়া মরক্কো ভ্রমণ আজও অকল্পনীয়৷
ছবি: Julian Peters/Zoonar/picture alliance
অনন্য এক ইতিহাসের সাক্ষী
উত্তরে কয়েক কিলোমিটারের জিব্রাল্টার প্রণালী পেরুলেই ইউরোপ আর ঐতিহাসিক কারণে ফ্রান্স ও স্পেনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক – এ বাস্তবতাই হয়ত মরক্কোকে দিয়েছে এক অনন্যতা৷ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মারাক্কেশের পুরনো এই কেল্লার প্রতিটি ইঁট যেন সে কথাই বলছে৷
ছবি: DW/D. Guha
সবার প্রিয় ‘মোহাম্মদ দ্য সিকস্থ’
অর্থনৈতিক প্রগতি ও আধুনিকতার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে মরক্কো একটি মডেল৷ অথচ দেশটি কিন্তু আজও চলছে রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদের শাসনে৷ তবে নিজের ক্ষমতা কমিয়ে দেশে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি বেশ কয়েক বছর হলো৷
ছবি: DW/D. Guha
ভাসমান বিস্ময় – ‘হাসান মস্ক’
সমুদ্রের নীল ঢেউয়ে ভাসমান সুউচ্চ মিনারসহ এই মসজিদটি তৈরি করেন রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদের বাবা দ্বিতীয় হাসান৷ কাসাব্লাঙ্কা শহরের অন্যান্য ইমারতগুলি ধবধবে সাদা হলেও, এই ‘হাসান মস্ক’ কিন্তু লাল বেলেপাথরের তৈরি৷ এর নকশা তৈরি করেছিলেন ফরাসি স্থপতি মিশেল প্যাঁসো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Schmitt
রক্তিম শহরের হারিয়ে যাওয়া শিল্পী
‘কাসা ব্লাঙ্কা’ – এই নামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাসাব্লাঙ্কা শহরের বাড়িগুলো যেমন সাদা, তেমনই মারাক্কেশ শহরের বাড়িগুলো লাল রঙের৷ অনেরটা ভারতের ‘পিঙ্ক সিটি’ জয়পুরের মতো৷ এ শহরের অলি-গলিতে ছড়িয়ে আছে হাজারো বাজার, হামাম, ফেরিওয়ালা আর নাম না জানা সব শিল্পী৷
ছবি: DW/D. Guha
ইহুদিদের ‘হামসা’ বা খামসা
একে হযরত মূসা বা হযরত হারুনের বোন মারইয়ামের হাত বলুন অথবা ফাতেমার হাত, পাঁচ আঙুল বিশিষ্ট এই হাতটি বাড়ির কোথাও টাঙিয়ে রাখলে কিংবা গয়না হিসেবে গলায় ঝুলিয়ে রাখলে নাকি শয়তানের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ ইহুদিদের মতো মরক্কোর সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে এর শক্তি৷
ছবি: DW/D. Guha
‘জাগলার্স স্কয়ার’ বা ‘জেমা এল-ফেনা’
কথাটি ‘জাগলিং’ থেকে এসেছে৷ মানে যে জায়গায় ভোজবাজি বা ম্যাজিক দেখানো হয়৷ দেখানো হয় বল, থাকা, বাতি, এমনকি সাপ-খোপ নিয়ে খেলাও৷ তবে এ সব ছাড়াও এখানে নানা ধরনের হাতের কাজ আর সুস্বাদু ‘তাজিন’ তৈরির বাসন-পত্রও পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/D. Guha
আলো-আঁধারির পথে পথে...
সন্ধ্যে নামার পর পরই পালটে যায় ‘জেমা এল-ফেনা’-র পরিবেশ৷ চারিদিক সেজে ওঠে রং-বেরঙের আলোয়, বসে যায় খাওয়া-দাওয়ার রকমারি ‘স্টল’৷ আর তারপর শুরু হয় গাজ-বাজনা৷ এই আলোর হাট দিয়ে হেঁটে যান – একেবারে ‘সহস্য এক আরব্য রজনী’-র সময়ে পৌঁছে যাবেন৷
ছবি: DW/D. Guha
নানা ভাষার সহাবস্থান
৪৪ বছরের ফরাসি দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে মরক্কো৷ অথচ আজও সেখানকার মানুষ ঝরঝর করে ফরাসি বলে, বলে আরবি, আবার কেউ কেউ কথা বলে একেবারে স্থানীয় ভাষায়৷ শামুক আর গুগলি বিক্রি করতে করতে ঠিক যেমন বলছেন এই দোকানি৷
ছবি: DW/D. Guha
বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়
আচ্ছা, বলুন তো বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম কী? হ্যাঁ, মরক্কোর ফেস শহরের আল-কারাউইন ইউনিভার্সিটি-ই হলো পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যার প্রতিষ্ঠা হয় ৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে৷ আর সেই ফেস শহরেই রয়েছে অসামান্য সুন্দর এই রাজপ্রাসাদটি৷ ফেস শহরের আদি অংশ বা ‘মেদিনা’-র অংশ এটি৷
ছবি: DW/D. Guha
মেদিনার ভিতরে প্রাচীন বাজার
ফেসের মেদিনায় একবার ঢুকে পড়লে বের হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়৷ এত অলিগলি, বাজারহাট, উঁচু উঁচু বাড়িঘর, বিরাট বিরাট সিংহদরজা – যে দেখতে দেখতে কখন যে পথ হারিয়ে ফেলবেন, বুঝতেই পারবেন না৷ তারপরও মেদিনার কাঁচা বাজারটি কিন্তু দেখার মতো!
ছবি: DW/D. Guha
কোনো গাড়ি চলাচল নেই
বলা বাহুল্য, মরক্কোর সবচেয়ে প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে ফেস অন্যতম৷ এর ‘মেদিনা’ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় পড়ে৷ এ শহরের কেন্দ্রভাগে শুধুমাত্র গাধা আর ঘোড়ার গাড়ি ঢুকতে পারে৷ সেভাবেই মাংস-মাছ সব আসে-যায় বাজারে৷ আসলে রাস্তাগুলো এত ছোট যে, এখানে কোনো গাড়িই চলতে পারে না৷
ছবি: DW/D. Guha
দেশি-বিদেশি সবজি
কাঁচা বাজারে শুধু মাছ-মাংস, কিশমিশ, খেজুর, বাদাম, চাল-ডাল আর মশলাই নয়, বিক্রি নয় নানারকম সবজিও৷ এর বেশিরভাগই আমাদের চেনা৷ টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, রাঙা আলু, এমনকি লঙ্কাও দেখা যায়৷ তবে তার সঙ্গে আর্টিশকের মতো কিছু ইউরোপীয় সবজিও পাওয়া যায় এখানে৷
ছবি: DW/D. Guha
গোল রুটি তৈরির কেরামতি
মরক্কোর অন্যতম খাবার হলো ‘তাজিন’৷ এটা সাধারণত প্লাম (একরকম ফল) আর মাংস দিয়ে তৈরি হয়৷ তাজিন দেখতে যেমন চমৎকার, তেমনি ঘ্রাণে ও স্বাদেও অসাধারণ৷ মরক্কোর মানুষ তাজিন খেয়ে থাকে ডালিয়া অথবা এমন গোল গোল রুটি দিয়ে৷ এই রুটি তৈরির কাজ অবশ্য যার তার কাজ নয়!
ছবি: DW/D. Guha
দূরে কোথাও, দূরে দূরে...
ফেস থেকে অনেক দূরে, রাজধানী রাবাতের দিকে যেতে পড়ে মেকনেস শহর৷ তারপরও যদি বেশ কিছুটা পথ না থেকে যাওয়া যায়, তবেই আস্তে আস্তে পালটে যেতে থাকে আশেপাশের ছবি৷ লোকালয় থেকে দূরে চোখের সামনে ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে একটা ধ্বংসাবশেষ৷
ছবি: DW/D. Guha
মরক্কোয় রোমান সভ্যতার নিদর্শন
প্রাচীন রোমান শহর ভোলুবিলিসের ধ্বংসাবশেষ এটি৷ বলা বাহুল্য, এটিও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ৷ প্রতি বছর হাজারো দর্শনার্থী এখানে ভিড় করে নিজের চোখে একটিবার রোমান সাম্রাজ্যের এই অসামান্য নিদর্শনটিকে প্রত্যক্ষ করতে৷
ছবি: DW/D. Guha
15 ছবি1 | 15
মরক্কোকে সাধারণ আলজেরীয়দের সমর্থন
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ থাকলেও আলজেরিয়ার সাধারণ মানুষ মরক্কোকে সমর্থন করছেন৷ অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, আলজেরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ক্যাফেতে বসে লোকজন খেলা দেখছেন ও মরক্কোর জয় উদযাপন করছেন৷
আলজেরিয়ার বাসিন্দা আহমেদ কাতারে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সত্যি বলতে আলজেরিয়ার সরকারি টিভিতে মরক্কোর ভাইদের খেলার ফল না দেখানো দুঃখজনক৷ কিন্তু আমরা আলজেরিয়ার সাধারণ মানুষ তাদের (মরক্কোর) সঙ্গে আছি৷ দুই দেশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিরোধ থাকলেও আমরা সাধারণ মানুষেরা সবসময় ভাই হয়ে থাকবো৷''
আলজেরিয়ার তারকা ফুটবলার রিয়াদ মাহরেজ যিনি ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলেন তিনি আরব আমিরাতের দৈনিক ‘দ্য ন্যাশনাল' বলেন, ‘‘আমি তাদের (মরক্কো) জন্য দারুণ খুশি৷’’
মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা থেকে কাতারে যাওয়া আহমেদ জানান, ‘‘আলজেরিয়ার অনেক সমর্থকের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে, আমরা পতাকা বিনিময় করেছি৷ এখানে সবাই নিজেদের আফ্রিকার মনে করছে, আরব মনে করছে, সবাই খুব দারুণ অনুভব করছে৷''
মরক্কোর আরেক সমর্থক ইয়াসমিন বলেন, ‘‘বিশ্বকাপে আলজেরিয়ার সমর্থকদের আমাদের সমর্থন করতে দেখে ভালো লাগছে৷ আমরাও ২০১৪ সালে তাদের সমর্থন করেছিলাম৷''