করোনা সংকটে অনেকেই অনেক ভাবে দুঃস্থদের সহায়তা করছেন৷ কিন্তু থাইল্যান্ডের এক হেয়ার স্টাইলিস্ট সেক্ষেত্রে ভিন্ন পন্থা বেছে নিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
করোনায় সেবা দিচ্ছেন এমন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনে পয়সায় চুল কেটে দিচ্ছেন তিনি৷
যেসব স্বাস্থ্যকর্মী সরাসরি করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন, তাদের চুল কেটে দিতে পর্নসুপা হাতায়ং হাসপাতালে যাচ্ছেন৷ ব্যাংককের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে তাদের বিনে পয়সায় চুল কেটে দিচ্ছেন তিনি৷
কাজটা শুরু করার আগে বেশ দ্বিধায় ছিলেন তিনি৷ মানুষ কী মনে করবে! কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মীরা তার এ কাজকে যেভাবে স্বাগত জানিয়েছেন, তাতে তিনি মুগ্ধ৷
করোনা সংকটের কারণে গত একমাস ধরে বন্ধ থাইল্যান্ডের চুল কাটার সেলুনগুলো৷ প্রথম যখন একটি হাসপাতালে যান পর্নসুপা, ভেবেছিলেন ৬ জনের চুল কাটবেন৷ কিন্তু ৩০ জনের চুল কেটেছিলেন তিনি৷ দ্বিতীয় হাসপাতালে গিয়েছিলেন ২০ জনের চুল কাটবেন বলে, কিন্তু ৫০ জনের কাটতে বাধ্য হন৷
এরপর থেকে করোনা রোগী আছে এমন বিভিন্ন হাসপাতালে যান তিনি৷ প্রতিদিন গড়ে ৫০ জনের চুল কাটেন৷ এ জন্য জনপ্রতি প্রায় ৫০০ বাথ খরচ করতে হয়৷
তবে হাসপাতালে যাওয়ার সময় সব ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই যান তিনি৷ প্রতিটা সরঞ্জাম জীবানুনাশক দিয়ে বার বার পরিষ্কার করেন৷
গত এক মাস ধরে নিজের জমানো অর্থ দিয়েই সংসার চলছে তার৷ কিন্তু এই কাজটি তাকে আত্মতৃপ্তি দিচ্ছে বলে জানালেন পর্নসুপা৷ আর বিনে পয়সায় চুল কাটলেও স্টাইলে কোনো ফাঁক রাখছেন না তিনি৷ জানালেন, ডাক্তাররা তাঁর কাজে দারুণ খুশি৷ কেননা, এর ফলে তারা কিছুটা হাল্কা বোধ করেন এবং প্রশান্তি আসে মনে৷ এমনই একজন ডাক্তার তিরাপাত জিতপুনকুসন জানালেন, মানবতার জন্য পর্নসুপা যে কাজ করছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়৷ এটা কেবল চুল কাটা নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু বলে মনে করেন তিনি৷
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থাইল্যান্ডে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার৷ এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৫৪ জন৷ সংক্রমণ কম হওয়ায় খুব শিগগিরই লকডাউন উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি)
২০১৮ সালের ছবিঘর দেখুন...
চুল ব্যবসায়ী মিয়ানমার
জাতিসংঘের হিসেবে চুল রপ্তানিতে বিশ্বে মিয়ানমারের অবস্থান চতুর্থ৷ মিয়ানমারের চুলের প্রধান বাজার চীন৷
ছবি: Reuters/A. Wang
চুল দিয়ে ব্যবসা
মানুষের মাথার চুল দিয়ে উইগ বা পরচুলা ও এক্সটেনশন বানানো হয়৷ উন্নত বিশ্বে এসবের অনেক দাম৷ মিয়ানমারে সংগ্রহ হওয়া চুলের বেশিরভাগ চলে যায় চীনে৷ সেখানে এসব চুল পরচুলা ও এক্সটেনশনে পরিণত হয়৷
ছবি: Reuters/A. Wang
বিক্রির প্রস্তুতি
ছবিতে এক নারীকে চুল পরিষ্কার করতে দেখতে পাচ্ছেন৷ মানুষের মাথা থেকে চুল কেটে আনার পর প্রথমে জট ছাড়ানো হয়৷ তারপর ধুয়ে প্যাকেটে ভরে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়৷
ছবি: Reuters/A. Wang
বিশ্বে চতুর্থ
২০১০ সাল থেকে মিয়ানমারে চুলের ব্যবসা বেড়েছে প্রায় চারগুন৷ জাতিসংঘের হিসেবে, বিশ্বে চুল রপ্তানিতে মিয়ানমারের অবস্থান চতুর্থ৷ ২০১৭ সালে চুল রপ্তানি থেকে মিয়ানমারের আয় ছিল প্রায় ৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Reuters/A. Wang
কর্মসংস্থান
চুল ব্যবসাকে ঘিরে মিয়ানমারে বেশ কিছু কোম্পানি গড়ে উঠেছে৷ সেখানে হাজার হাজার মানুষের কাজের ব্যবস্থা হয়েছে৷ তাঁরা চুল সংগ্রহ থেকে শুরু করে ধোয়া, রং করা, প্যাকেটজাত করা ইত্যাদি নানান কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন৷
ছবি: Reuters/A. Wang
কৃষ্ণাঙ্গদের প্রিয়
চুল ব্যবসায়ী মিন জ ও এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ কাজে জড়িত আছেন৷ তিনি জানান, ব্রিটেন, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে তিনি সবচেয়ে বেশি চুল বিক্রি করেন৷ ‘‘এগুলো আমাদের বাজার: কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A. Wang
মুক্তার মতো উজ্জ্বল!
আরেক চুল ব্যবসায়ী উইন কো জানালেন, বিশ্বে মিয়ানমারের মানুষের চুলের অনেক কদর৷ ‘‘কারণ, যখন আপনি শ্যাম্পু আর কন্ডিশন করেন, তখন এটা মুক্তার মতো উজ্জ্বল দেখায়,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A. Wang
নববর্ষে সংগ্রহ বেশি
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এপ্রিল মাসে যখন মিয়ানমারে নববর্ষ উদযাপিত হয়, তখন সবচেয়ে বেশি চুল সংগৃহীত হয়৷ কারণ, তখন অনেক মেয়ে সন্ন্যাসিনী হওয়ার প্রস্তুতি নেয়ায় চুল বিক্রি করে দেয়৷
ছবি: Reuters/A. Wang
সর্বনিম্ন সাপ্তাহিক আয়ের সমান!
জা জা লিন তাঁর ২০ ইঞ্চি চুল বিক্রির বিনিময়ে ১৩ ডলার পেয়েছেন, যা মিয়ানমারের সর্বনিম্ন সাপ্তাহিক আয়ের প্রায় সমান৷ এই অর্থ তাঁকে বাড়ি ভাড়া দিতে সহায়তা করেছে বলে জানান তিনি৷